চিরকুটের সদস্যরা
শারমিন সুলতানা সুমি (ভোকাল), পাভেল আরীন (ড্রামস), পিন্টু ঘোষ (পারকাশান, ভায়োলিন, বাঁশি ও ভোকাল), রোকন ইমন (বেজ গিটার), ইমন চৌধুরী (লিড গিটার), তমাল (রিদম গিটার)।
মনের কথাগুলো যখন নাগরিক ব্যস্ততার ফাঁদে পড়ে যায়, তখন মুক্তির একটাই উপায়—চিরকুট। যেখানে ছোট এক টুকরো কাগজে গুটি গুটি অক্ষরে আঁকা হয় শব্দের ছবি। আর এই শব্দের পিঠে সুরের ডানা জুড়ে দিয়ে চিরকুট ব্যান্ডের আত্মপ্রকাশ। ২০০২ সালে এ ব্যান্ডের জন্ম। এরপর গানে সুরে বেড়ে ওঠা। চিরকুটের সব সদস্যই গানের সাথে জড়িত অনেক আগে থেকেই। এই গানপাগল মানুষগুলো গানের টানেই জড়ো হয়ে গড়লেন চিরকুট। তাদের ভাষ্যে, 'আমরা সবাই যে যার অবস্থান থেকে গানে জড়িত ছিলাম। এ পথে হাঁটতে গিয়েই আমাদের মধ্যে পরিচয়। ভাবনার মিল ছিল বলেই ভাব হলো পরস্পরের সাথে। আমাদের ভাবনাগুলোই প্রকাশ করতে চাইলাম গানে কিছুটা মেসেজ আকারে। গানে গানে মেসেজ দেওয়ার ইচ্ছা নিয়েই চিরকুটের জন্ম। তাই বলা যায়, নামকরণের পেছনেও এই ইচ্ছাটাই কাজ করছে। আসলে আমাদের মূল লক্ষ্য শ্রোতাদের হাতে গানের চিরকুট ধরিয়ে দেওয়া।' জন্মের আট বছর পর অর্থাত্ ২০১০ সালে চিরকুট তাদের প্রথম অ্যালবামটি প্রকাশ করে। এই দীর্ঘ সময় চিরকুট নিজেকে গুছিয়ে অ্যালবামের প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের অনেক যত্নে আদরে গড়া অ্যালবামটির নাম দিয়েছে 'চিরকুটনামা'। অ্যালবামটির গানগুলো হচ্ছে—'খাজনা', 'কাটাকুটি', 'বন্ধু', 'আমি জানি না', 'ছোট্ট নদী', 'দয়াল', 'ফুল ফোটা গান', 'ঘরে ফেরা'। এগুলোর মধ্যে 'খাজনা' গানটি শ্রোতামহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শুধু তাই নয়, গানটির মিউজিক ভিডিওর ইউটিউব সাফল্যও ঈর্ষণীয়। চিরকুটের কাছ থেকে জানা যায় মিউজিক চ্যানেল এমটিভিও এই গানটি প্রচারের প্রস্তাব দিয়েছে তাদের ইউটিউব সাফল্য দেখে। এই অনুপ্রেরণায় তারা 'কাটাকুটি' গানটিরও মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছে। গানের সূত্রেই চিরকুট জড়িয়েছে নাটক ও সিনেমায়। তারা নুরুল আলম আতিক পরিচালিত ধারাবাহিক নাটক 'জাদুর শহর'-এর শিরোনাম সংগীত করেছে। এ ছাড়াও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত 'টেলিভিশন'-এর শিরোনামসহ আরও দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে চিরকুট বলে, 'ছবিটির একটি গানের কথা, সুর ও সংগীত আমাদের করা। অন্য দু'টি গানে কণ্ঠ দেবো আইয়ুব বাচ্চু ও হূদয় খানের সুর-সংগীতে। সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রের মতো বড় একটি মাধ্যমে কাজ করতে পারাটা সত্যিই আনন্দের।' আবার তন্ময় তানসেনের নির্মাণাধীন চলচ্চিত্র 'পদ্ম পাতার জল'-এও একটি গান গাইছে বলে জানিয়েছে তারা। শুধু গান নয়, অভিনয়ও করেছে চিরকুট। 'জাদুর শহর'-এ একটি ব্যান্ডের চরিত্রে কাজ করেছে তারা। তবে গানই তাদের মূল সত্তা। শব্দ ও সুরের সাধনায় তারা এই সত্তাকেই তুলে ধরতে চান সবার সামনে। চিরকুটের বর্তমান হালচাল জানতে চাইলে জানান কনসার্ট নিয়ে খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে তাদের। পাশাপাশি চলছে দ্বিতীয় অ্যালবামের প্রস্তুতি। এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, 'আমাদের দ্বিতীয় অ্যালবামের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। এখনও অ্যালবামটির নাম ঠিক করা হয়নি। তবে 'জাদুর শহর' নামটি আমাদের মনে মনে পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এটা ফাইনাল হয়নি। আর আমরা খুব যত্ন নিয়েই অ্যালবামের প্রতিটি গান তৈরি করছি। চেষ্টা করছি নতুনত্ব আনার।' এর পাশাপাশি চিরকুটের কাছ থেকে আরও একটি খুশির খবর জানা যায়। গত বছর ২১-২৫ নভেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া মিউজিক উইকে অংশ নিয়েছিল তারা। সেখানে পৃথিবীর সতেরটি দেশের পঞ্চাশটি ব্যান্ড অংশ নিয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে চিরকুটই ছিল একমাত্র ব্যান্ড যারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। ব্যান্ডের এই মেলায় অংশ নিতে পেরে চিরকুট শুধু গর্বিত নয়, এখান থেকে তারা শিখেছেও অনেক। জানালেন এই মিলন মেলায় অংশ নিয়ে গানের ভুবনের বিশালত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে তারা। একমাত্র গানের ভুবনেই মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। কারণ, শব্দ-সুরের কোনো বর্ণ-ধর্ম নেই, আছে অকৃত্রিম অনুভূতি। এ রকম ভিন্ন দর্শন নিয়ে চিরকুট তাদের ভালোলাগার জায়গা থেকে মিউজিক করছে বলেই শ্রোতাদের প্রশংসা পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে চিরকুট বলে, 'আমরা ফিউশন করার চেষ্টা করি। রক, অল্টারনেটিভ রক, সফট মেলোও করি। আর চেষ্টা করি শ্রোতাদের কাছে নিজেদের স্পষ্ট করে তুলে ধরার। হয়তো তারা এ কারণেই আমাদের গান পছন্দ করছেন।' শ্রোতাদের ভালোবাসা নিয়ে গানের পথে এগিয়ে চলেছে চিরকুট। এ দলের প্রতিটি সদস্য স্বপ্ন দেখেন বাংলা গানের চিরকুট তারা একদিন পৌঁছে দেবেন বিশ্ব দরবারে।