আল্লাহ আমাদের কী জন্য সৃষ্টি করছেন? কেন সৃষ্টি করেছেন? আর কী উদ্দেশ্যেই বা সৃষ্টি করেছেন? এসব প্রশ্ন অবশ্য আমাদের বিব্রত করে তোলে। আল কোরআনে বলা হয়েছে, 'তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা সত্কাজের নির্দেশ দাও, অসত্কাজে বারণ কর, এবং আল্লাহে বিশ্বাস কর' (সূরা আল ইমরান-১১০)।
তিনি আমাদের শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে একটি বড় দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তা হলো, আল্লাহর পথে মানুষদের আহবান করা। অন্যত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর এবং যাতে নিয়োজিত থাকবে নির্মমহূদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ'। আয়াতে কারিমার ভাষ্য অনুযায়ী সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, নিজেদের ইলম ও আমলে মশগুল থাকার নাম ইবাদত নয়। বরং গোটা মানব জাতির নাজাতের গওর ও ফিকির করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। আর দাওয়া ও তাবলিগের মাধ্যমেই মানুষের সবচেয়ে বেশি কল্যাণ সাধিত হয়। আমরা হয়তো মানুষের জন্য অনেক কিছু করতে পারি; গাড়ি-বাড়ি চাকরি কিংবা কোনো ভালো ব্যবসা ধরিয়ে দিতে পারি। নিঃসন্দেহে এগুলো সামাজিক জীবনে বিরাট জনকল্যাণমূলক কাজ। কিন্তু, সবচেয়ে উত্তম কাজ হলো, পরকালে নাজাতের ব্যবস্থা করা, যা দাওয়াত ফি সাবিলিল্লাহ'র মাধ্যমে অর্জিত হয়। এই কথা তো অবশ্যই অবিশ্বাস করা যায় না যে, কোনো কিছুই কষ্ট ছাড়া অর্জিত হয় না। মক্কার অদূরে মহানবী (স.) নিজেও অন্ধকার নির্জন গুহায় নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে আল্লাহর প্রেমে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। মাসের পর মাস সেখানে তিনি উপবাসে দিন গুজরান করতেন। একদিন সেই হেরাগুহা নূরের তাজাল্লিতে হয়ে গেল হেরার রাজতোরণ। জিবরাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে পয়গাম নিয়ে এলেন, 'হে নবী, আপনি বলুন, ইকরা—এমনিভাবে হযরত মুসা (আ.)-এর কিতাব প্রাপ্তি ও আল্লাহর রিজামন্দির উদ্দেশে তুর পাহাড়ে চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত আরাধনায় নিমগ্ন থাকেন। সকল নবী ও রাসূলের জিন্দেগির একটাই মাকসাদ ছিল, কী করে আল্লাহর শাশ্বত বাণী সমগ্র বিশ্ববাসীর নিকট পৌঁছে দেওয়া যায়। অন্য আয়াতে আছে, 'হে নবী, আপনার দায়িত্ব শুধু আমার বাণী পৌঁছে দেওয়া'। নবীজি বিদায় ভাষণে আরাফায় লাখো সাহাবিদের উদ্দেশে বলেন, 'হে আমার প্রিয় সাহাবিগণ, আজ তোমরা যারা উপস্থিত আছ, অনুপস্থিত সকলের নিকট আমার বাণী পৌঁছে দিয়ো। সেসব জীবন উত্সর্গিত সাহাবারা আল্লাহ ও রাসূলের দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সমগ্র পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে আজো মক্কা ও মদিনা ছাড়িয়ে সুদূর ইস্তাম্বুল থেকে চীন পর্যন্ত সাহাবিদের কবরের সন্ধান মিলে। দ্বীনের জন্য তাঁদের মেহনত ও মুজাহাদা, এশ্ক ও মহব্বতের বদৌলতে আমরাও হাজার বছর পর সেই ধর্মাদর্শের ছায়াতলে এসে সমবেত হলাম।
একথা অবশ্যই আমাদের কবুল করতে দ্বিধা নেই। মানব জীবনে তাবলিগ যতটা দ্রুত ও স্থায়ী পরিবর্তন এনে জীবনে আধ্যাত্মিক দীপ্তি ছড়িয়ে দিতে পারে, অন্য কোনো তরিকায় হয়তো তেমন ফলপ্রসূ না-ও হতে পারে। তাছাড়া এই ইলাহি আন্দোলন মুসলমানদের যতটা আল্লাহর পথে একনিষ্ঠভাবে নামিয়েছে যা বিগত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাসে বে-নজীর। আল্লাহব্রত এই আন্দোলন বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। যারা এইপথে দুর্বলতা ও অপূর্ণতা উপলব্ধি করেন, এবং খুব সমালোচনার দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, তাদের উচিত—এ পথে কিছু সময় ব্যয় করে আরও কাছ থেকে জানা ও অনুভূতি ভিত্তিক কথা বলা। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন, আমিন।