১৯৫২ সাল বাঙালির জীবনের স্মরণীয় এক অধ্যায়। ১৯৫২-তে যাদের অসামান্য অবদানের জন্য আজ আমরা বাংলায় লিখছি, বলছি, প্রাণ খুলে আড্ডায় মেতে উঠছি সেসব ভাষা সৈনিকের অন্যতম তিনি। নিভৃতচারী, প্রচারবিমুখ সে ব্যক্তিত্ব ড. সুফিয়া আহমেদ। ভাষা আন্দোলনে, স্বাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেন—
স্বপ্নটা ছোটবেলার। বাবার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিস্তৃত প্রাঙ্গণে আসতে যেতে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছাটা পেয়ে বসেছিল। সময়ের ব্যবধানে শিশুমনের সে স্বপ্ন পূর্ণতা পেয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশের প্রথম মহিলা জাতীয় অধ্যাপকের সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৫২ সাল বাঙালির জীবনের স্মরণীয় এক অধ্যায়। ১৯৫২-তে যাদের অসামান্য অবদানের জন্য আজ আমরা বাংলায় লিখছি, বলছি, প্রাণ খুলে আড্ডায় মেতে উঠছি সেসব ভাষা সৈনিকের অন্যতম তিনি। নিভৃতচারী, প্রচারবিমুখ সে ব্যক্তিত্ব ড. সুফিয়া আহমেদ। ভাষা আন্দোলনে, স্বাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন সুফিয়া আহমেদ। বিস্তৃত তাঁর কাজের পরিধি। আর প্রতিটি ক্ষেত্র থেকেই সফলতা তুলে এনেছেন সযত্নে।
সুফিয়া আহমেদ ১৯৩২ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, বিচারপতি ও আইনমন্ত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহীম কন্যাকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই মানুষ করেছেন। সুফিয়া আহমেদের মা লুতফুন্নেছা ইব্রাহীম। বাবা-মা আর দু্'ভাইকে নিয়েই সুফিয়া আহমদের ছোটবেলার জগত্ গড়ে উঠেছিল। কন্যাকে নিয়ে বাবা বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহীমের ছিল হাজারো স্বপ্ন। আর শৈশব থেকেই তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায়। নাচ, গান, সেলাই, রান্না, রূপচর্চা প্রভৃতিতে ভরা ছিল ছোটবেলাটা। ক্লাসিক্যাল শিখতেন ওস্তাদ গুল মোহাম্মদের কাছে, সেলাই শেখানোর জন্য আসতেন এক মিস, রান্না শেখার জন্য হোসনে আরা রশীদের 'পাক প্রণালী' বই আর রূপচর্চার জন্য অন্য একটি বই তাঁর বাবা তাঁকে কিনে দেন। ড. সুফিয়া আহমেদের শিক্ষাজীবন নানা বর্ণে রঙিন ও গৌরবোজ্জ্বল। বিচারপতি বাবার বদলির চাকরি এবং তত্কালীন সময়ে বাংলাদেশে ভালো ইংরেজি স্কুল না থাকায় তাঁর শৈশবের বেশ কিছুটা দিন অবিভক্ত ভারতের দার্জিলিং-এ কেটেছে। ১৯৪৮ সালে বিচারপতি বাবার কর্মস্থল বরিশাল থেকে প্রাইভেটে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।
বাবার ইচ্ছেতেই শেষ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইংরেজিকে সাবসিডিয়ারি করে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবন ছিল ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৪ সালে এম.এ. পড়ার সময় তিনি সান্ধ্যকালীন ক্লাসে ভর্তি হন। সুফিয়া আহমেদের বাবা ১৯৪২ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ক্লাস নিতেন। সেই সময় বাবার সঙ্গে আসতে-যেতে মনের অজান্তেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বপন হয়ে যায় ছোট মনে। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আলোর মুখ দেখে ১৯৬১ সালে, তাঁর নিজের বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাত্ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৮৩ সালে তিনি এই বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। দেশের বাইরেও সুফিয়া আহমেদ একজন অনন্য শিক্ষা ব্যক্তিত্ব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ অধ্যাপনাও করেছেন।