যান্ত্রিক এ নগরের সব কোলাহল ভুলে শুধু নিজের ভালো লাগার জন্য অনেকেই ছুটে আসছেন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে। মেলা প্রাঙ্গণে সবুজ বৃক্ষের সন্ধানে। দম বন্ধ করা সারি সারি ইট পাথর আর কংক্রিটের সুউচ্চ অট্টালিকা থেকে কিছুটা সময় খুঁজে নিয়ে কাটাচ্ছেন প্রাকৃতিক এ পরিবেশের সাথে। অনেকেই আসছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অথবা সপরিবারে। ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক গাছ থেকে অন্য গাছের কাছে। ছুটে যাচ্ছেন অচেনা-অজানা সব বৃক্ষের সন্ধানে। পরিচিত করছেন নিজেকে।
চলছে একসাথে দুই মেলা। 'অধিক বৃক্ষ, অধিক সমৃদ্ধি' প্রতিপাদ্যে শুরু হয়েছে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০১৪। অপরদিকে 'হতে হবে সোচ্চার, সাগরের উচ্চতা বাড়াবো না আর' এমন প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হয়েছে পরিবেশ মেলা। শুরু হয়েছে ৫ জুন থেকে। বৃক্ষমেলা চলবে মাসব্যাপী। আর পরিবেশ মেলা চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। মেলার প্রথমদিকে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভিড় কম থাকলেও দিন দিন জমে উঠছে দর্শনার্থীদের ভিড়। বৃক্ষমেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে কৃষি ও পরিবেশের উপর নানা প্রদর্শনী। কেনাকাটার পাশাপাশি দর্শনার্থী ও ক্রেতারা উপভোগ করছেন এসব অনুষ্ঠান। অন্যদিকে আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে পরিবেশ মেলা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ঘেরাও করে আয়োজন করা হয়েছে এ মেলা। আছে ৯০টি স্টল। এসব স্টলে স্টলে চলছে পরিবেশের উপর তথ্যসেবা।
এবারের বৃক্ষমেলায় সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিমালিকানা এবং অন্যান্য দ্রবাদির মোট ১০৮টি নার্সারি ও স্টল রয়েছে। যার মধ্যে সরকারি নার্সারি ১৯টি, বেসরকারি ও এনজিও নার্সারি ১৯টি, ব্যক্তিমালিকনার নার্সারি ৭১টি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ন্যাশনাল হারবেরিয়াম, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। অপরদিকে বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা নার্সারির মধ্যে রয়েছে আনন্দ, দ্বীপ গার্ডেন, বরিশাল, রাশিদা, গ্রিন ল্যান্ড, উত্তরা ভাই ভাই, পুষ্পিতা ইত্যাদি নার্সারি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১৭ হাজার ৮৭৮টি চারা বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ২৬১ টাকা।
মেলার প্রধান গেট দিয়ে ঢুকলেই মনে হয়, প্রকৃতির এক অন্য জগত্। চারদিকে সবুজের সমাহার। সবুজ পাতার আড়ালে থেকেই দর্শনার্থীদের চোখ কেড়ে নিচ্ছে নানা ধরনের ফল ও ফুল। ছোট ছোট গাছে বড় বড় ফল দেখলেই দশনার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন ঐসব গাছের কাছে। অনেকেই আবার দর-দাম জিজ্ঞেস করে কিনে নিচ্ছেন পছন্দের সব গাছ।
গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, নানা বয়েসী বৃক্ষপ্রেমীর আনাগোনায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। পছন্দের গাছ কিনতে ছুটে আসছেন বৃক্ষমেলায়। বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছের মধ্যে ফলদ বৃক্ষের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর ফলদ বৃক্ষের মধ্যে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে নানা জাতের আম, পেয়ারা, সফেদা, লেবু, কড়মচা, আমড়া, জলপাই, আমলকি ইত্যাদি। মেলায় প্রতিটি আম্রপালীর চারা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, হাঁড়িভাঙ্গা ১৫০ টাকা, থাই কাঁচামিঠা ১৫০ টাকা, গোপালভোগ ১০০ টাকা। তবে ফলসহ আমগাছের দাম সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। পেয়ারার মধ্যে রয়েছে মাধুরী পেয়ারার চারা ১৬০ টাকা, থাই পেয়ারা ১৫০ টাকা। তাছাড়া কাজী পেয়ারা সৈয়দা পেয়ারার সংস্করণে উত্পাদিত বীজহীন পেয়ারা চারা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
চোখে পড়বে রং-বেরঙের নানা জাতের, নানা আকৃতির অদ্ভূত সুন্দর সব ফুল ও ফুলের গাছের। রঙিন ক্যাকটাস, বনসাই, ডালিয়া থেকে শুরু করে পাতাবাহার জাতীয় গাছ এই মেলায়। একমাত্র মেলাতেই পাওয়া যায় ঔষধি গাছগাছালির বিশাল সংগ্রহ। মেলায় ফল-ফুলের গাছের পাশাপাশি পাবেন নানা ধরনের টব ও শো-পিস। কাঠ, প্লাস্টিক ও বাঁশের নানা সাইজের ও নানা ডিজাইনের টব, আছে ঝুলন্ত টবও। বাদ যাচ্ছে না নানা সবজির গাছ ও চারা। বাগান করার জন্য প্রয়োজনীয় মাটি থেকে শুরু করে সার, বীজ, কীটনাশক, স্প্রে, বীজ— সবই পেয়ে যাবেন হাতের মুঠোয়, সহজেই।
দেশি গাছের চেয়ে বিদেশি গাছের দাম চড়া। ইতালিয়ান অলিট ৬০ হাজার টাকা, মহাচুনন ৭০ হাজার টাকা, পার্সিমন ৫০ হাজার টাকা, রামভুটল ৫০ হাজার টাকা ইত্যাদি।
রাজধানীর মিরপুর-১০ থেকে মেলায় এসেছেন বৃষ্টি দেওয়ান। তিনি জানান, ঘোরার উদ্দেশ্যেই মেলায় আসা। এখানে এসে মনে হচ্ছে পুরো বদলে গেছি। প্রকৃতির সাথে মিশে আছি। মন খুলে দম নিচ্ছি। একটু স্বস্তি লাগছে। ঘুরে ঘুরে দেখছি আর গাছ এবং ফল-ফুলের সাথে পরিচিত হচ্ছি। আমরা শহরে যারা থাকি অনেক ফল খাই; কিন্তু গাছের সাথে পরিচিত না। যত দেখছি ততই দেখার ইচ্ছেটা বাড়ছে।