ইবোলা ভাইরাস :আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
বিশেষ প্রতিনিধি
ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। সোমবার মিলন হলে 'ইবোলা ভাইরাস আতঙ্ক: আমরা কতটা প্রস্তুত' শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা এ পরামর্শ দেন।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, আমরা সচেতন আছি, যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। রোগটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সেমিনারে অন্যতম বক্তা রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এম মুশতাক হোসেন বলেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও বক্ষব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড রাখা হয়েছে। কারও শরীরে ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ামাত্রই রোগতত্ত্ব আইইডিসিআরকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মুশতাক হোসেন বলেন, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণরোধী ব্যবস্থা না নেয়ায় ব্যাপকভাবে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালের শৌচাগার ও বেসিন বারবার পরিষ্কার করা জরুরি। এছাড়া মৃতদেহ সত্কার করার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ দিকে মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক জিলন মিয়া সরকার বলেন, যদি কেউ ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে এমন জায়গায় যান, অবস্থান করেন, অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শে আসেন, পোকা-মাকড়, জন্তু-জানোয়ারের কামড় খান, আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখতে হাসপাতালে যান এবং মৃতদেহের গোসলে অংশ নেন তাহলে তিনি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, এ রোগের চিকিত্সায় বারবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
ভাইরোলজি বিভাগের শিক্ষক সাইফুল্লাহ মুন্সী বলেন, রোগটি সেরে যাওয়ার পর সাত সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এ সময় ওই ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে যাওয়া উচিত নয়। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহের পর ভালো করে এক মিনিট পর্যন্ত সাবান দিয়ে ঘঁষে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক চন্দন কুমার রায়।
সেমিনারে জানানো হয়, বর্তমান সময়ে কমপক্ষে ৩০টি ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে মানবজাতিকে। ডেঙ্গু ছাড়া বাকি ৩০টির উত্স জন্তু-জানোয়ার। ইবোলার প্রধান উত্স শিম্পাঞ্জি ও গরিলা। বাদুড়ের শরীরে ইবোলার উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু সংক্রমণের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় বন্য জন্তু শিকার করে খাওয়ার প্রচলন আছে। মানবদেহে সংক্রমণ ঘটলে হঠাত্ প্রচণ্ড জ্বর, দুর্বলতা, মাংসপেশিতে যন্ত্রণা, গলাব্যথা, যার্শ ওঠা, ডায়রিয়া, বমি, মাথাব্যথা ও রক্তক্ষরণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এবারের সংক্রমণে ২২ আগস্ট পর্যন্ত পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৬১৫ জন, মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৪২৭ জন। সেমিনারে জানানো হয়, ইবোলা ভাইরাস রোগী থেকে চিকিত্সক, নার্স ও অন্যান্য মানুষের মধ্যে খুব সহজে বিস্তার লাভ করে। তাই নমুনা সংগ্রহ ও গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউ'র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন মিয়া, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহিনা তাবাসুম। সেমিনার পরিচালনা করেন মানথলি সেমিনার সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল। বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ'র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার, মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. চন্দন রায়, ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী, আইইডিসিআর'র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম মুশতাক হোসেন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ডা. মোঃ আনোয়ারুল করিম। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ'র প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, বিএমডিসি'র সভাপতি অধ্যাপক আবু সফি আহমেদ আমিন, বিএসএমএমইউ'র নার্সিং অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. শাহানা আখতার রহমান প্রমুখ।