We use cookies to tailor your experience, measure site performance and present relevant advertisements. By clicking the 'ok' button, you agree that cookies can be placed in accordance with our
Privacy Policy.
দেশের অগ্রগতির স্বার্থে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি জরুরি হয়ে পড়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও অস্থিরতার সাময়িক অবসান ঘটলেও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রবৃদ্ধির গতি ফিরে পেতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নজর দিতে হবে। এমনিতেই চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি হবে না বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক। গত ছয়মাসে ব্যয়ের বহর অব্যাহত থাকলেও কমেছে সরকারের রাজস্ব আয়। প্রত্যাশিত বৈদেশিক সহায়তা বাড়াতেও নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে এগুলেও বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ইতিমধ্যে ৬ শতাংশের নিচে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। অতীতে নির্বাচনকালীন বছরগুলোতে দেশের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কমেছে। এবছরের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ৭ শতাংশ না হলেও প্রবৃদ্ধি যেনো কোনভাবে ৬ শতাংশের নিচে নেমে না আসে, সে লক্ষ্য নিয়ে নতুন সরকারকে এগুতে হবে। আগামী ছয় মাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। বাকি ছয় মাসেও এ ধারা অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয়ের চাপ বেড়েছে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, গত কয়েক মাসে হরতাল-অবরোধসহ ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে আমাদের অর্থনীতির সব খাতই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার প্রভাবে কমেছে আয়কর আদায়। অন্যদিকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির চাপ রয়েছে। বাড়তি চাপ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বাড়াতে হতে পারে। সরকারি ব্যয়ে চাপ কমিয়ে পরিস্থিতির উত্তরণে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ছাড় বাড়িয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে (এডিপি) তাগিদ দেন তিনি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় না থাকলে বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ এর পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
প্রবৃদ্ধির তথ্যে দেখা গেছে, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪৩ থেকে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হরাস পেয়ে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ হয়েছে। এর আগে ২০০০-০১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে ২০০১-০২ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশে নেমেছে। অর্থাত্ এর আগের নির্বাচনকালীন অর্থবছরেও এ পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এর জন্য নির্বাচনকালীন বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
সমপ্রতি বিশ্বব্যাংক তাদের বিশ্ব অর্থনীতির পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশংকা করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে সাড়ে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে।
বিগত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর পূর্বাভাস সঠিক হয়নি উল্লেখ করে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, এবারও তাদের পূর্বাভাস সঠিক হবে না। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক সংকটের পরেও গত বছরের তুলনায় এবছর অর্থনীতির অনেক সূচক ঊর্ধ্বমূখি। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আগের অর্থবছরের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ ৬ বিলিয়ন ডলার বেড়ে রেকর্ড ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও এ অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। তবে এর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছরেই বাংলাদেশে নির্বাচনের বছরে প্রবৃদ্ধি কমে যায়। এটা হয় নির্বাচনকালীন পরিবেশ অর্থনীতিসুলভ না হওয়ার কারণে। কিন্তু পরক্ষণেই অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, নির্বাচনউত্তর পরিস্থিতির আরো উন্নতি ঘটবে এবং বাংলাদেশের মানুষ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবেই। সরকারের নির্বাচন পরবর্তী প্রধান করণীয় হবে দেশে আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখা এবং অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে তার ইশতেহার অনুযায়ী দ্রুততার সঙ্গে কর্মপদক্ষেপে চলে যাওয়া।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করাটাও কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে অর্থবছরের অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে। বাকি সময়গুলোতে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ করে উত্পাদনশীল খাত সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন বলে মনে করেন তিনি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের ঋণে সুবিধা দেয়া প্রয়োজন। এলক্ষ্যে আসছে মুদ্রানীতিকে সেভাবে সাজানো প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইইউ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ে পাস হওয়া এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, 'যেসব রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসী তত্পরতা চালাচ্ছে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত।' আপনিও কি তাই মনে করেন?