ফ্লাইওভার বা ওভারপাস খুব উপকারী রাস্তা হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। মূলত জানযট কমানোর লক্ষ্যেই এই ফ্লাইওভার বা ওভারপাসের ধারণা আসে। বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে এ ধরনের সড়ক। এই ধরনের সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাজ্যের স্প্যাগিটি জংশন। এই নামের পেছনেও রয়েছে বিশাল এক ইতিহাস। পেঁচানো এই রাস্তাটি নিয়ে লিখেছেন প্রাঞ্জল সেলিম
ফ্লাইওভার (যুক্তরাজ্য ও বেশিরভাগ কমনওয়েলথভুক্ত দেশে প্রচলিত নাম) বা ওভারপাস হচ্ছে একপ্রকার সেতু, সড়ক, রেলরাস্তা বা এ ধরনের কোনো স্থাপনা, যা কোনো সড়ক বা রেললাইনের ওপর দিয়ে নির্মিত হয়। ওভারপাসের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এক্ষেত্রে নিম্ন ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট সড়কের ওপর অপেক্ষাকৃত বেশি ধারণাক্ষমতা বিশিষ্ট রাস্তা তৈরি করা হয়। ধারণক্ষমতা নির্ধারিত হয় রাস্তার লেনের সংখ্যা, যাতায়াতকৃত যানবাহনের পরিমাণ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে। উত্তর আমেরিকায় প্রচলিত সংজ্ঞানুসারে 'ফ্লাইওভার' হচ্ছে অনেক উঁচুতে অবস্থিত ওভারপাস। এছাড়া কোনো দুইটি রাস্তার মধ্যে ক্রস সংযোগ তৈরি হলে এবং তার ওপর কোনো সেতু সদৃশ রাস্তা তৈরি হলে সেটাকেও ফ্লাইওভার হিসেবে অভিহিত করা হতে পারে। দ্বিতীয়টি যান প্রকৌশলীদের কাছে গ্রেড সেপারেশন নামে পরিচিত। এছাড়া ফ্লাইওভারগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ তৈরির জন্য বাড়তি রাস্তা যোগ করলে, তাও ফ্লাইওভারের অংশ হিসেবে গণ্য হয়। ১৮৪২ সালে ইংল্যান্ডের নরউড জংশন রেলওয়ে স্টেশনে বিশ্বের প্রথম ফ্লাইওভারটি নির্মিত হয়। এটি নির্মাণ করে লন্ডন অ্যান্ড ক্রয়ডন রেলওয়ে। ব্রাইটন মেইল লাইনের ওপর দিয়ে তাদের রেলগাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা এটি নির্মাণ করে।
স্প্যাগিটি জংশন
স্প্যাগিটি জংশনের ধারণাটি মূলত স্প্যাগিটি নামের একটি নুডুলস থেকে আসে। এই নুডুলস বিখ্যাত তার স্বাদের জন্য তো অবশ্যই। পাশাপাশি এটির দৈর্ঘ্যও অনেক বেশি। আর এই নুডুলস পরিবেশন করা হয় আনুষাঙ্গিক সবকিছুর সাথে কিছুটা পেঁচিয়ে একটা ছোট পাত্রে। আর এ থেকেই প্রথম ধারণাটি করা হয়, খুব কম জায়গা নিয়ে বিশাল দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার তৈরির। নামকরণও করা হয় স্প্যাগিটি নুডুলসের নামে। কারণ এটি অনেক বেশি পেঁচানো, আর অনেক ঘন। স্প্যাগিটি ফ্লাইওভারটির অবস্থান যুক্তরাজ্যের ব্রিমিংহাম স্টেটে। ১৯৬৫ সালের ১ জুন এক জার্নালিস্ট রয় স্মিথ এই স্প্যাগিটি জংশন নিয়ে একটি ফিচার প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে বলা ছিল এই উড়ালসড়কটির নামকরণের ইতিহাস এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে। শিরোনাম ছিলো, 'লাইক ক্রস বিটউইন এ প্লেট অব স্প্যাগিটি'। স্প্যাগিটি জংশনটি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যেখানে এটাকে বলা হয় সবচেয়ে উপকারী রাস্তা। কারণ এর নির্মাণ কৌশল। খুব কম সময়েই যাত্রীকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে এই জংশনটি। এখানে আরও একটি মজার তথ্য রয়েছে। সেটা হলো, এই ফ্লাইওভারটিকে জংশন বলার কারণ। এর মূল কারণ হলো, অনেকগুলো রাস্তা এসে একত্র হয়েছে এই একটি বিন্দুতে। সেখান থেকে আবার বাঁক খেয়ে চলে গেছে যার যার গন্তব্যে। সব কিছু মিলিয়ে এটাকে জংশন হিসেবে নাম দেওয়া যায় অনায়াসেই। ১৯৭২ সালের ২৪ মে প্রথম গাড়ি চলা শুরু করে এই ফ্লাইওভার দিয়ে। পুরোটা ফ্লাইওভার প্রায় ১২ হেক্টর জমির উপর অবস্থিত। প্রায় ৪ কিলোমিটার বিস্তৃত এই জংশনটি ৫৫০টি কলাম নিয়ে গঠিত। সেই সাথে প্রায় ২৪ মিটার উঁচু। আরও মজার তথ্য হলো, এটিতে প্রায় ২১০,০০০টি যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে।
হাইলাইট
ফ্লাইওভার বহুতলা বিশিষ্ট হতে পারে। বড় বড় শহরগুলোতে এ ধরনের ফ্লাইওভার দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত নিচের রাস্তাসহ এ ধরনের ফ্লাইওভারে মোট চারটি তলা থাকে। এগুলো হলো—
১ম তলা :আন্ডারপাস লেভেল
শুধুমাত্র নিকটবর্তী দুইটি রাস্তাকে যুক্ত করার জন্য এই তলাটি ব্যবহূত হয়।
২য় তলা :গ্রাউন্ড লেভেল
এই লেভেলটি মাটির সমান্তরালে অবস্থান করে। বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, দোতলা বাস, ট্রাক প্রভৃতি যানবাহন এই তলা দিয়ে যেতে পারে। মূলত স্থানীয় ও অল্প দূরত্বের যানবাহনগুলো এই তলা ব্যবহার করে।
৩য় তলা :ফ্লাইওভার লেভেল
এটি মূল ফ্লাইওভার। দূরবর্তী অঞ্চলগামী যানবাহনগুলো এই তলা ব্যবহার করে। এর ফলে স্থানীয় যানবাহনের ভিড় দ্বারা আক্রান্ত হতে হয় না।
৪র্থ তলা :মেট্রো রেল লেভেল
এই লেভেলটি সবার ওপরে অবস্থিত, এবং এটি দিয়ে শুধুমাত্র শহরের মেট্রো রেল চলাচল করে।