চিনি শিল্প করপোরেশনের চিনিকলগুলোর গুদামগুলোতে চিনির পাহাড় জমেছে। উত্পাদিত চিনি বিক্রি হচ্ছে না। অর্থাভাবে মিলগুলো চাষিদের আখের দাম পরিশোধ করতে পারছে না। শ্রমিক-কর্মচারীদের দুই মাসের বেতন-ভাতা বাকি পড়েছে। সব মিলিয়ে করপোরেশন মহাসংকটে পড়েছে।
চিনি শিল্প করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে—আরেক দফা কমিয়ে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫০ থেকে ৪০ টাকা করা হয়েছে। তার পরও মিলগুলোর চিনি বিক্রি হচ্ছে না। উত্পাদদিত চিনির মজুত বেড়েই চলেছে। গত বছরে উত্পাদিত চিনির প্রায় পুরাটাই মজুত ছিল। বিপুল পরিমাণ চিনির মজুত মাথায় নিয়ে চলতি মৌসুমের (২০১৩-১৪) উত্পাদন শুরু করে করপোরেশনের অধীন ১৫টি চিনিকল। প্রথম দিকে বিরোধীদলের হরতাল-অবরোধের কারণে উত্পাদন দারুনভাবে ব্যাহত হয়। এবার ১৮ লাখ ৬০ হাজার টন আখ মাড়াই করে এক লাখ ৩৮ হাজার ১৫০ টন চিনি উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে করপোরেশন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১১ টন আখ মাড়াই করে এক লাখ ৩ হাজার ২২৭ টন চিনি উত্পাদন হয়েছে। করপোরেশনের কর্মকর্তারা আশা করছেন—এবার চিনি উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হতে পারে। বর্তমানে আখের অভাবে রাজশাহী, সেতাবগঞ্জ ও পাবনা চিনিকল বন্ধ হয়ে গেছে। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ, শ্যামপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, নর্থ বেঙ্গল চিনিকল, নাটোর, কুষ্টিয়া, দর্শনার কেরু, মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর ও জিলবাংলা চিনিকল চালু আছে।
উত্পাদিত চিনি বিক্রি না হওয়ায় করপোরেশন চাষিদের আখের মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না। মিলের গুদামগুলোতে ৮২৮ কোটি টাকা মূল্যের দুই লাখ ৭ হাজার টন চিনি মজুত রয়েছে। সামান্য পরিমাণ চিনি বিক্রি হচ্ছে। ক্রয়কৃত আখের মূল্য বাবদ পাওনা ১২৪ কোটি টাকা চাষির পরিশোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন চাষিদের পাওনা টাকার পরিমাণ বাড়ছে। মিলগুলোতে পাওনা টাকার জন্য চাষিরা ভাউচার হাতে ধর্না দিচ্ছে। টাকা না পেয়ে তারা মিলের প্রতি বিরূপ মনোভাব নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এতে আগামীতে আখ চাষে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ দিকে, টাকার অভাবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মকর্তা, কর্মচারী-শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারেনি বলে করপোরেশনের হিসাব রক্ষণ বিভাগের এক সূত্রে জানা গেছে।
মিল-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে—প্রতি বছর উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চিনির উত্পাদন খরচ বেড়ে চলেছে। বর্তমানে এক কেজি চিনির উত্পাদন খরচ ৯০ টাকার মতো। প্রতি কেজি চিনির বিক্রয় মূল্য ৪০ টাকা। কেজিপ্রতি ৫০ টাকা লোকসান হচ্ছে। এতে লোকসানের পরিমাণ আরো স্ফীত হবে। গত অর্থ-বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে চিনি শিল্প করপোরেশনের।