বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, 'বর্তমান যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও করণীয় বিষয় হচ্ছে—পরিবেশ রক্ষা। এর কোনো সীমারেখা নেই, এটা অসীম। পরিবেশ দূষণ থেকে পরিত্রাণ পেতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশিক্ষা ও আধুনিক জীবন-যাপনের প্রচেষ্টা থাকতে হবে। পাশাপাশি সাংগঠনিক শক্তিও অর্জন করা প্রয়োজন।' আজ শনিবার রাজধানীর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পিলখানায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত 'এসইএল ৩য় আইএফপি জাতীয় আন্তঃকলেজ পরিবেশ বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০১৪'র পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, 'পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রায় সব অর্থই আসে বিদেশিদের কাছ থেকে। তবে এই অর্থের ব্যবহারের জন্য যে সাংগঠনিক শক্তি দরকার, সেটি আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। এই শক্তি রাতারাতি অর্জনও সম্ভব নয়। তবে প্রচেষ্টা থাকলে দ্রুত অর্জন করা সম্ভব।'
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ''শতবর্ষ আগে কবি বলেছিলেন 'তোমরা তোমাদের শহর ফিরিয়ে নাও, আমাকে আমার প্রকৃতি ফেরত্ দাও।' কবির কথা ধরে বলতে হয়—মূলত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণেই পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে—জ্বালানি না থাকলে স্বাভাবিক কারণেই লাকড়ি দরকার হবে। লাকড়ির জন্য গাছ কাটতে হবে। গাছ কাটতে সমস্যা নেই, কিন্তু গাছ লাগাতেও হবে। পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার—স্বাধীনের সময় দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি, এখন তা হয়েছে ১৬ কোটি। যে কারণে গাছ লাগানোর জায়গাও কমে এসেছে। ঘুরে-ফিরে সেই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যেই সবাইকে থাকতে হচ্ছে। তবে আশার কথা—সমুদ্র থেকে আরেকটি বাংলাদেশ উঠে আসছে। অবশ্য এর উন্নয়নে দরকার অর্থনৈতিক শক্তি। এই অর্থ তাদেরই দিতে হবে, যাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ রয়েছে। কার জন্য কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটি বিবেচনা করতে হবে।''
বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, 'এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের কারো কারো বক্তব্যে মনে হতে পারে—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ দূষিত—এটা ঠিক নয়। নিউইয়র্ক ও সিকাগোসহ দু-তিনটি শহর ছাড়া পুরো যুক্তরাষ্ট্রই সবুজ, মনে হবে যেন বাগান—এই দৃশ্য চীনেও। এটা সম্ভব হয়েছে তাদের অর্থনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তির কারণে।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, 'আমরা শিল্পায়ন করলেও এর বর্জ্য পরিশোধন অনেক ব্যয়বহুল। এখন যারা শিল্প করছেন, একদিন তাদেরই একই সঙ্গে বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থাও করতে হবে। এ জন্য দরকার ধৈর্য্য। ৪০-৪২ বছর একটি দেশের জন্য বেশি সময় নয়। নির্মাণসামগ্রী ইটের জন্য আমাদের মাটি পোড়াতে হয়। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। জুনের পর থেকে আধুনিক পদ্ধতিতেই ইট পোড়াতে হবে, নইলে ওসব ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে।' এ জন্য অবশ্য ইটভাটাগুলোকে স্বল্প সুদে ব্যাংক-ঋণ দেয়া হবে বলে সরকারের সিদ্ধান্তের কথাও জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, 'ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তরের বিষয়েও গতি আনা হচ্ছে। এই খাত থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার উপার্জনের পাশাপাশি ১৬ কোটি মানুষের নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকারের কথাও অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে।'
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আরো বলেন, 'যখন আমরা আর্থিক উন্নয়ন, সুশিক্ষা ও সাংগঠনিক শক্তি অর্জন করতে পারব, তখনই আমাদের সবুজ দেশ গড়ার প্রচেষ্টা সফল হবে। তখন সব শহর বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর হতে হবে। প্রতিষ্ঠানও রাতারাতি গড়ে ওঠে না, এ জন্য দরকার মেরুদণ্ডসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। আর মেরুদণ্ড তখনই সোজা হয়, যখন আর্থিক সচ্ছলতা অর্জিত হয়।'
পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
'চল আমরাই, নিজেরাই বদলাই' প্রতিপাদ্য সামনে রেখে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কলেজ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ইনিশিয়েটিভ ফর পিস (আইএফপি) ৬ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত এই পরিবেশ বিতর্কের আয়োজন করে। আইএফপির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আরিফুর রহমানের সঞ্চালনায় এবং এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক (শিক্ষা) মেজর হাফেজ মো, জোনায়েদ আহাম্মদ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ মুসাররাত নাইমা প্রমুখ।