নাম তার ম্যানিলা। বাড়ি চট্টগ্রামে হলেও বাবার চাকরির সুবাধে ( এনজিও) ঢাকায় আসা। ঢাকার একটি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিল। বাবার চাকরি চলে যাবার পরপরই দিশেহারা হয়ে পড়ে ম্যানিলা। এরপর পা বাড়ায় অন্ধকার জগতে। জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা ব্যবসায়। বেশ কয়েক মাস আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। স্থান হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তবে গ্রেফতার ও কারাবাসের অভিজ্ঞতা আগেও একবার ছিল। তবে দ্বিতীয়বার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বলেছিল, আর নয়। মুক্তি পেলে ফিরবে সুস্থ জীবনে। ম্যানিলা তার কথা রেখেছে। কারা কর্তৃপক্ষের প্রেষণামূলক (বন্দিদের জন্য) প্রশিক্ষণ পেয়ে নতুন জীবনে ফেরার জন্য ব্যস্ত ম্যানিলা। এ তথ্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশিক্ষণ প্রদানকারীর (মহিলা)। যিনি সমাজ কল্যাণ অধিদফতরের অধীনে মহিলা বন্দিদের বিউটিশিয়ান কোর্স ও টেইলারিং কাজ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। শুধু ম্যানিলাই নয়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক দেড় শতাধিক মহিলা বন্দি কোন না কোন হাতের কাজ শিখে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছেন।
সূত্র জানায়, দেশের ৬৮টি কারাগারে (একটি মহিলাসহ) মোট বন্দির সংখ্যা প্রায় ৬৭ হাজার। এরমধ্যে মহিলা বন্দির সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে ১৪২ জন। মহিলা বন্দিদের সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে আনতে কারা কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যাতে মুক্ত জীবনে মহিলা বন্দিরা যেন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। পাশাপাশি মহিলা বন্দিদের শিশুদের জন্য রয়েছে ডে কেয়ার সেন্টার। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ডে কেয়ার সেন্টারে বর্তমানে শিশু রয়েছে ৩৫ জন। যাদেরকে দিনের বেলায় রাখা হয় ডে কেয়ার সেন্টারে। রাতে দেয়া হয় মায়ের কাছে। একই ভাবে দেশের অন্য কেন্দ্রীয় কারাগারগুলোতে রাখা হয়েছে একই ব্যবস্থা।
আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখারউদ্দীন বলেন, মহিলা বন্দিদের পুনবার্সনের জন্য এবং দক্ষ জনশক্তি হিসেবে সমাজে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে মহিলা বন্দিদের জন্য বিউটিশিয়ান কোর্স, সূচীশৈলী, টেইলারিং, কাঁথা সেলাই, কাগজের প্যাকেট তৈরি, বাজারের ব্যাগ, খাম তৈরি, শাড়ি, সেলোয়ার-কামিজ ফতুয়া, পাঞ্জাবীর উপর হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে বন্দিরা (মহিলা) বর্তমানে কোন কোন কারাগারে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য উত্পাদন করছে। তারা কারা অভ্যন্তরে এসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেদেরকে সংশোধনের মাধ্যমে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। ফলে মুক্ত জীবনে গিয়ে তাদেরকে পুনরায় অপরাধের পথে ফিরে যেতে হবে না।
ডিআইজি প্রিজন (সিলেট রেঞ্জ) তৌহিদুর রহমান বলেন, তার রেঞ্জের অধিকাংশ কারাগারে পুরুষ বন্দিদের পাশাপাশি মহিলা বন্দিদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। মহিলা বন্দিরা খুব আগ্রহসহকারে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী বলেন, মহিলা বন্দিদের মধ্যে অনেকেই এখন প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি অক্ষরজ্ঞানশূন্য বন্দিদের (মহিলা) লেখাপড়া শেখানের জন্য বেশ কয়েকজন মহিলা বন্দি শিক্ষকের কাজ করছেন। প্রশিক্ষিত মহিলা বন্দিরা দিন গুনছেন, কবে মুক্তি পাবেন। তাদের সবারই একই কথা, আর নয়, এবার মুক্তি পেয়ে সুস্থ ভাবে জীবন শুরু করবো।