তরুণ ধোনিদের ভাগ্যজয়
ভারত: ২০০৭, দক্ষিণ আফ্রিকা
টি-টোয়েন্টি খেলাটাই তখনো হাঁটি হাঁটি পা করছে। সেই অবস্থায় প্রথম আসরটা জেতা ভারত আসলে খেলাটার সব রূপই দেখিয়ে দিয়েছিলো। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে একেবারে তরুণ এক দল নিয়ে পরীক্ষামূলক অভিযানে গিয়েছিল ভারত। প্রথম রাউন্ডই পার করলো তারা স্রেফ ভাগ্যের ওপর ভর করে। কার্যত কোনো ম্যাচ না জিতে ভারত সেমিফাইনালে চলে গেল। প্রথম রাউন্ডে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি তাদের বৃষ্টিতে ভেসে গেল। এরপর সেমিফাইনালে যেতে চাই পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়। সে ম্যাচ হয়ে গেল টাই। পরে তখনকার নিয়ম অনুযায়ী 'বোল আউট' ব্যবস্থায় পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে গেল ভারত। সেমিফাইনালে যুবরাজ সিংয়ের অসাধারণ এক ইনিংসে ভর করে ফাইনালে গেল তারা।
এরপর ফাইনালে সেই বহুল আলোচিত ভারত-পাকিস্তান নাটক। আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৫৭ রান করেছিল ভারত। শুরুর দিকেই শ্রীশান্তের ২১ রানের এক ওভারে পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে গেল ম্যাচ। এরপর যোগিন্দর শর্মা ও ইরফান পাঠান পাকিস্তানের স্কোরিং রেট কমালেন এবং উইকেটও তুলে নিলেন। এক পর্যায়ে ২৪ বলে পাকিস্তানের যখন ৫৪ রান দরকার, তখনই মিসবাহ উল হক একটার পর একটা ছক্কা মেরে এগিয়ে যেতে থাকলেন। শেষ ওভারে ১ উইকেট হাতে নিয়ে দরকার ১৩ রান। প্রথম বলে ওয়াইড, পরের বল ডট এবং পরের বল ছক্কা! বাকী চার বলে দরকার ৬ রান। তখনই মিসবাহ স্কুপ প্যাডেল করতে গিয়ে আউট।
চ্যাম্পিয়ন হল ভারত।
ট্রফি আনলেন শহীদ আফ্রিদি
পাকিস্তান:২০০৯, ইংল্যান্ড
স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৮ রানে হেরে যাচ্ছেতাইভাবে শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের। মনে হচ্ছিল, এবার আর ফাইনালেও পৌঁছাতে পারবে না পাকিস্তান। অবশ্য পরের ম্যাচে আন্ডারডগ নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সুপার এইটে পা রাখে তারা। কিন্তু সুপার এইটের শুরুটাও একেবারে খারাপই হল তাদের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯ রানের হার দিয়ে শুরু হল সুপার এইট।
পরদিনই আসলে এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের নতুন সময় শুরু হয়ে গেল। উমর গুলের সেই বিখ্যাত ৬ রানে ৫ উইকেটের বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ড কুপোকাত। নিউজিল্যান্ডকে হারানোর ভেতর দিয়ে এই শুরুর পর আর এই বিশ্বকাপে হারের মুখ দেখতে হয়নি পাকিস্তানকে। আয়ারল্যান্ডকে ৩৯ রানে হারিয়ে নিশ্চিত করে তারা সেমিফাইনাল।
আর সেমিফাইনালে আবার নাটকীয় এক ম্যাচ। আফ্রিদির অলরাউন্ড দাপটে দক্ষিণ আফ্রিকা হারলো এবার ৭ রানে। শহীদ আফ্রিদি শুরু থেকে এই একটা টুর্নামেন্টে ফর্মটা ধরে রাখলেন। আর ফাইনালের জন্য যেন জমিয়ে রেখেছিলেন সেরাটা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে ব্যাট হাতে ফিফটি করে দলকে এনে দিলেন বড় সংগ্রহ। আবার বল হাতে নিশ্চিত করলেন দলের জয়।
সবমিলিয়ে ১৭৬ রান এবং ১১ উইকেট নিয়ে সেরা আকর্ষণ সেই আফ্রিদিই।
অবশেষে 'জনক'দের ট্রফি
ইংল্যান্ড: ২০১০, ওয়েস্ট ইন্ডিজ
বলা হয় আরো অনেক খেলার মতো ক্রিকেট খেলারও জনক তারা। কিন্তু বেশিরভাগ খেলার মতো ক্রিকেটেও এই দলটির বৈশ্বিক আসরে সাফল্য নেই বললেই চলে। কার্যত এ যাবত্ তারা একমাত্র বড় ট্রফিটি ক্রিকেটে জিতেছে এই ২০১০ সালের আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি।
প্রকৃতপক্ষে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে। কিন্তু পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় ২০০৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বাতিল হওয়ায় একটা গোলমাল লেগে যায় আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলোর সূচিতে। ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়ার কথা ছিল আরেকটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সূচি মেলানোর জন্য সেটার বদলেও এই বিশ্বকাপটি আয়োজন করা হয়।
ভারত তো তবু প্রথম আসরে প্রথম রাউন্ডে বোল আউটে একটা ম্যাচ জিতেছিল; ইংল্যান্ড আক্ষরিক অর্থেই কোনো জয় ছাড়াই সুপার এইটে চলে গেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ উইকেটের হার এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পরিত্যক্ত ম্যাচ; ১ পয়েন্ট নিয়ে আইরিশদের রানরেটে পেছনে ফেলে সুপার এইট।
সুপার এইটে উঠে অবশ্য অন্য চেহারায় এলো ইংলিশরা। পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিন জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেললো তারা। আর সেমিফাইনালে স্টুয়ার্ট ব্রডের দাপটে ফাইনাল নিশ্চিত হল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। ফাইনালটা হল একেবারেই ম্যাড়মেড়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ উইকেটের সহজ এক জয় পেল তারা ৩ ওভার খেলা হাতে রেখে।
লয়েডের পর স্যামি!
ওয়েস্ট ইন্ডিজ:২০১২, শ্রীলঙ্কা
প্রথম দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, পরের বিশ্বকাপে অল্পের জন্য ট্রফি হাত ছাড়া; সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুগ, ক্লাইভ লয়েডের দলের যুগ ছিল। সেই উইন্ডিজ রাজত্বও আর নেই, ক্যারিবীয়দের হাতেও আর ট্রফি ওঠে না। ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বাদ দিলে আর কোনো বৈশ্বিক ট্রফিই ছিল না ক্যারিবীয়দের। সেই খরাটা অবশেষে ঘোচালেন ড্যারেন স্যামি।
ক্রিস গেইলের উপস্থিতির পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই টুর্নামেন্টে এমন কিছু ফেভারিট ছিল না। প্রথম রাউন্ডে গেইলের ফিফটির পরও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হার এবং একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত; স্রেফ ভাগ্যের জোরে ১ পয়েন্ট নিয়ে সুপার এইটে গেল তারা। সুপার এইটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ উইকেটে হার; ছিটকেই গিয়েছিল উইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুপার ওভারে এক ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করলো ক্যারিবীয়রা।
সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে জেতানোর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে তখন শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিকদের জয় দেখতে সেদিন সেজে উঠেছিল কলম্বো। কিন্তু আরো একবার শ্রীলঙ্কাকে একটা ফাইনাল হতাশা উপহার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল ড্যারেন স্যামির ওয়েস্ট ইন্ডিজ।