
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী, সাংবাদিক, লেখিকা বেবী মওদুদ মৃত্যুবরণ করেছেন গত শুক্রবার, রাজধানীর একটি হাসপাতালে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৬ বছর। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন, কলকাতায়। তিনি বাংলাদেশের সংসদ সদস্যও ছিলেন। তার পুরো নাম এ. এন মাহফুজা খাতুন। দীর্ঘদনি তিনি ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। বেবী মওদুদ বিডি নিউজ টয়েন্টিফোর ডটকমের সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। তার দুটি ছেলে আছে। স্বামী এ্যাডভোকেট মোঃ হাসান আলীর কবরেই সমাধিস্থ করা হয়েছে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী ছুটে যান তার মরদেহের পাশে। ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ও সহযোদ্ধা বেবী মওদুদের মরদেহের পাশে কিছু সময় অতিবাহিত করেন। দুই ছেলেকে সান্ত্বনা দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেও আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন। শোকবার্তায় তিনি বলেন, 'তার মৃত্যুতে আমি আমার দীর্ঘদিনের একজন প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছি।' রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ শোকবার্তায় বলেছেন, 'বেবী মওদুদ ছিলেন একজন সত্ ও নির্ভীক সাংবাদিক। তার মৃত্যুতে জাতি এক নির্ভীক সংবাদকর্মীকে হারালো।' অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বেবী মওদুদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
বেবী মওদুদের বাবার নাম আবদুল মওদুদ। তিনি ছিলেন একজন বিচারপতি। তার মায়ের নাম হেদায়েতুন নেছা। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ১৯৬৭ সাল থেকে সাংবাদিকতায় জড়িত বেবী মওদুদ দৈনিক সংবাদ, বিবিসি, দৈনিক ইত্তেফাক, বাসস ও সাপ্তাহিক বিচিত্রায় দীর্ঘদিন কাজ করার পর বিডি নিউজ ডটকমে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে জড়িত হয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে বেবী মওদুদ বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এম. এ ডিগ্রি নেয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হলের ছাত্রী সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লড়াকু যোদ্ধা ছিলেন বরাবর তিনি। নব্বইয়ের দশকে গঠিত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতেও সোচ্চার ছিলেন তিনি। বেবী মওদুদ নবম জাতীয় সংসদের সমাজ কল্যাাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তার অনুরাগীরা অভিমত প্রকাশ করে বলেন, 'তার আচরণ ছিলো স্নেহময়ী জননীর মত।' সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'-র সম্পাদনাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি নিজে বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবন ও ছেলেবেলা নিয়ে যে দীর্ঘ নিবন্ধটি লিখেছেন তাতে প্রকাশ পেয়েছে ভাষার মাধুর্য ও লালিত্য। শিশুদের নিয়েও লিখেছেন। বাংলা একাডেমি থেকে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে 'শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর ডায়রী' সেখানে অল্পকথায় তার প্রিয় শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর জীবনচিত্র ফুটিয়ে তোলেন। ওই ডায়েরীতে ১৯৭১ সালের ৭/৮ মাসের ভয়াবহ ঘটনা স্কেচ আকারে লিখে রেখেছেন জনাব চৌধুরী। প্রসঙ্গক্রমে শেখ হাসিনার নামও এসেছে, কারণ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।
বেবী মওদুদের উল্লেখযোগ্য দুটো বই, 'গণতন্ত্রের মানস কন্যা' 'ও বাংলাদেশের নারী'। শেখ হাসিনার জীবন বৃত্তান্ত ছাড়াও তার রাজনৈতিক জীবনের আলেখ্য ফুটিয়ে তুলেছেন। 'বাংলাদেশের নারী' বইতে বেবী মওদুদের গবেষণা কর্মের সাক্ষ্য আছে। বেগম রোকেয়া ও মহীয়সী কবি সুফিয়া কামালসহ বাঙালি সংগ্রামী নারীদের জীবনকর্ম বর্ণনা করেছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বই যৌথ সম্পাদনা করেছেন। এর মধ্যে 'বিএনপির দুঃশাসন' বইটি যথেষ্ট তথ্যসমৃদ্ধ।
নিরন্তর লিখেছেন, গবেষণা করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, রাজনীতি করেছেন, সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন, গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন লড়াকু নারীর অন্তর্ধানে আমরা শোকবিহ্বল না হয়ে পারি না। তার আত্মা চিরশান্তি লাভ করুক।
লেখক :গবেষক