সম্মুখযুদ্ধে 'অগ্রবর্তী দল' বলে একটা ব্যাপার থাকে। মূল বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছানোর আগে এই দল শত্রুপক্ষ সম্পর্কে ধারণা নেয়, অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং মূল যুদ্ধে নিজেদের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগায়।
কিছুদিন আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে এরকম অগ্রবর্তী দলের সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের বেশ কয়েক জন সদস্য। ব্যাপারটা যুদ্ধ না হলেও সেই 'সৈনিক'দের অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগানোর সময় এসেছে। এবার বাংলাদেশের মূল বাহিনী যাচ্ছে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। আর এই মূল যুদ্ধে অগ্রবর্তী দলের হয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতাটা যোগান দিতে সবচেয়ে বেশি যোগ্য মানুষ হিসেবেই যোগ দিয়েছেন ওপেনার ইমরুল কায়েস।
গত মে-জুন মাসে বাংলাদেশ 'এ' দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করা খেলোয়াড়দের মধ্যে ৫ জন এবার জাতীয় দলের হয়ে যাচ্ছেন আবার। তবে এর মধ্যে একমাত্র বলার মতো পারফরম্যান্স ছিল এই ইমরুল কায়েসের। যে দুটি ম্যাচ খেলেছেন, তাতে ৪২.৫০ গড়ে একটি সেঞ্চুরিসহ ১৭০ রান করেছিলেন। তিনি ছাড়া এই দুই বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে আর একমাত্র নাসির হোসেনই একটি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলতে পেরেছিলেন।
ফলে পারফরম্যান্সের বিচারে ইমরুলের চেয়ে যোগ্য লোক এই ক্যারিবীয় সফরের দলে আর হতে পারতো না। এই বিপরীত কন্ডিশনে গিয়ে কিভাবে রান পেতে হবে, এটা অন্তত বলার যোগ্যতা তৈরি হয়েছে তার। অবশ্য ইমরুল ব্যাপারটা এভাবে দেখতে রাজী নন। তিনি বলছেন, সবার অভিজ্ঞতাই কাজে লাগবে, 'এটা ঠিক যে আমি রান পেয়েছি। তবে বাকী যারা গিয়েছিল, ওদের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগবে। আর দলের অনেকেই এর আগে বিভিন্ন সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেছে। ফলে একটা ধারণা সবারই আছে। এখন আমরা পরষ্পরের সঙ্গে সেগুলো শেয়ার করছি।'
অবশ্যই এই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নেয়ার ক্ষেত্রে ইমরুলের কাছ থেকে একটা বড় জানতে চাওয়া হতে পারে— কিভাবে এখানে সফল হতে হবে। ইমরুল সেটা একটু বললেনও। তার কাছে সফলতার সূত্রটা খুব কঠিন নয়, 'আমরা ওখানে পেস ও বাউন্সি উইকেট পেয়েছিলাম। এমনিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরকম উইকেট আগের মতো বেশি না বানালেও আমার মনে হয়, আমাদের মতো উপমহাদেশীয় দলের জন্য এমন উইকেটই হবে। আর এখানে আসলে ব্যাটিংয়ের মূল ব্যাপারটা মনে হয়, তাড়াহুড়ো করা যাবে না। সেটা হতে হবে। উইকেটে সময় কাটালে রান আসবে।'
'এ' দলের সফরের কথা মনে করেই এই টিকে থাকার ওপর আরো বেশি জোর দিচ্ছেন ইমরুল, 'আমি বারবাডোজে যখন ব্যাটিং করছিলাম, তখন নান্নু ভাই (নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন) এটা বলছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, টিকে থাকাটা মূল চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেয়া উচিত। ওখানে একজন বলছিল, বারবাডোজে এই যে উইকেট, এখানে রান করতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সব উইকেটে রান করা যাবে।' সে ক্ষেত্রে জাতীয় দল ভরসা রাখতে পারে যে, ইমরুল অন্তত হতাশ করবেন না।
অবশ্য ইমরুল হতাশ করলেনই বা কবে! পারফরম করেও বারবার দলের বাইরে চলে যাওয়া নিয়ে বরং বিস্ময় ও হতাশাই প্রকাশ করতে পারেন ইমরুল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জাতীয় দলে ফিরেছিলেন দীর্ঘ বিরতির পর। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফরম করে ফিরেছিলেন ইমরুল। ফিরেই প্রথম টেস্ট ম্যাচেই সেঞ্চুরি, একমাত্র ওয়ানডেতে ফিফটি। এরপর বিস্ময়করভাবে আবার দলের বাইরে।
ইমরুল এ নিয়ে হতাশা বা ক্ষোভ প্রকাশ করলেন না। তবে এভাবে বাদ পড়া ও ফেরার যন্ত্রণাটা একটু বললেন, 'একবার পারফরম করে জাতীয় দলে ফিরে পারফরম করতে না পারলে তো বাদ পড়তে হবে। কিন্তু পারফরম করেও বাদ পড়লে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়, একটু হতাশ লাগে। যা হোক, এটা তো আমার হাতে না। আমি সুযোগ পেলেই নিজের খেলাটা খেলার চেষ্টা করতে পারি, বাকীটা আমার নিয়ন্ত্রণে তো নেই।' ইমরুলের নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও যাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, তাদের অন্তত ব্যাপারটা ভাবা উচিত।