আজ ২৮ রমজান। রমজান সিয়াম পালনের মাধ্যমে দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়ন সাধিত হয়। ইলমে তাসাওউফে মানব দেহের ১০টি স্থানের কথা বলা হয়েছে সেগুলোকে বলা হয় লতীফা: কল্ব, রূহ, সিরর্, খকী, আখফা, নফ্স, আব, আতশ, খাক্, বাদ এই দশ লতীফার মধ্যে ছয়টির নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে আর আব্ (পানি), আতশ (আগুন), খাক্ (মাটি), বাদ (বাতাস) রয়েছে দেহের সর্বত্র। লতীফাগুলো সেই রূহানী কেন্দ্রের নাম যা আল্লা জাল্লা শানুহুর হুকুমে মানব দেহে সৃষ্টি হয়েছে। লতীফাগুলো আল্লাহর যিক্র-এ জারী হয় এবং সেগুলো জারী পৃষ্ঠা ১৯ কলাম ৬হলে সমগ্র দেহ্ নূরানী হয়ে যায়। হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী রহমাতুল্লাহি 'আলায়হি মকতুবাত শরীফে বলেছেন: মানুষ হচ্ছে একটা আলমে সগীর বা ছোটো জগত্ যা দশ লতীফা দ্বারা সমন্বিত। এই সব প্রত্যক্ষ করা যায় ইলমে তাসাওউফ চর্চার মাধ্যমে। সালাত, সওম প্রভৃতির নিজস্ব রং তাসাওউফ চর্চাকারিগণ দেখতে পারেন এবং সবকিছুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেন অনায়াসে। শরীয়ত, তরীকত, হকীকত ও মারিফত-এর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ইলমে তাসাওউফ। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে: নিশ্চয়ই সে সাফল্য অর্জন করে যে পবিত্রতা অর্জন করে এবং তার রব্-এর নাম যিক্র করে ও সালাত আদায় করে। (সূরা আ'লা: আয়াত-১৪-১৫) তায্কীয়ায়ে নফ্স অর্থাত্ আত্মশুদ্ধির জন্য বেশি বেশি আল্লাহর যিক্র করার উপর বিশেষ তাকীদ দেয়া হয়েছে। হাদীস শরীফে আছেঃ তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এমনভাবে যে, তুমি আল্লাহেক দেখছো। যদিও তুমি তাঁকে দেখোনা, তিনিতো তোমাকে দেখছেনই। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাত্সর্য এই ষড়রিপু দমন করা যায় সিয়াম পালনের মাধ্যমে। ইলমে তাসাওউফে রয়েছে শয়তানকে পর্যুদস্ত করে এবং রিপুসমূহকে দমন করে পরিচ্ছন্নতার সৌরভে নিজেকে সুরভিত করার কার্যকর পদ্ধতি। ইলমে তাসাওউফ অর্জন করা অতি জরুরি। এজন্য কামিল পীরের মুরীদ হওয়া জরুরি। পীর কামিল কিনা তা যাচাই-বাছাই করা জরুরি। তাসাওউফের তা জ্ঞানও নেই এমন কিছু ভন্ড রয়েছে যারা কিবলাজান, বাবাজান, দয়াল বাবা, সূফী সম্রাট, খাজা বাবা ইত্যাদি গালভরা লকব এঁটে নানা কৌশলে লোক জড়ো করে তাদের ঈমান-আকিদা, বরবাদ করে দেয় এবং ধন-সম্পদ লুট করে নেয়। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। যুগ শ্রেষ্ঠ সূফী কুত্বুল আলম হযরত মওলানা শাহ্সূফী তোয়াজউদ্দীন আহমদ রহমাতুল্লাহি 'আলায়হি দালাল লাগিয়ে, বিজ্ঞাপন দিয়ে, ভিনদেশী পশু আমদানি করে, নানা ধরনের কলা কৌশল প্রয়োগ করে লোক জড়ো করা যায় বটে, কিন্তু পীর হওয়া যায় না।
আমাদের মনে রাখতে হবে তাসাওউফবিহীন জীবন হচ্ছে সাগরের তলদেশে পড়ে থাকা পাথরের নূড়ির মতো কিম্বা খুশবুবিহীন ফুলের মতো।