রাজধানীতে ঈদুল ফিতর ও পরবর্তী তিন দিনের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সব সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। অপরদিকে মার্কেট, বিপণি বিতানের নিরাপত্তায় বহাল থাকছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ইউনিট। আর তালাবন্ধ বাসাবাড়ি তদারকি করবে থানা ও কমিউনিটি পুলিশ। একইভাবে যানজট মুক্ত ফাঁকা সড়কগুলোতে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম-কমিশনার (গোয়েন্দা) মনিরুল ইসলাম।
ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এ বছর রমজানের শুরুতে নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ফলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব হয়েছে। শুরু থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দু'একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কিছু ঘটেনি। সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও তেমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার কারণে গভীররাত পর্যন্ত মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলোতে রয়েছে ক্রেতাদের উপছে পড়া ভিড়। এ অবস্থা ধরে রাখতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল পর্যায়ের সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তবে ছুটি না দিলেও নয় এমন দু'চার জনের ছুটি বিবেচনা করা হয়েছে।
যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে ঈদের ছুটিতে বন্ধ মার্কেট বা বিপণী বিতানের তালা ভেঙ্গে ও দেওয়াল কেটে স্বর্ণের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এ বছর প্রতিটি মার্কেটে সিসিটিভি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব মার্কেটগুলোর নিরাপত্তা তদারকিতে থানা পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করবে পুলিশের এপিবিএন ইউনিটের সদস্যরা। একইভাবে গ্রামে ফেরা মানুষদের তালাবদ্ধ বাসাবাড়ির নিরাপত্তার দিকটি তদারকি করবে স্ব স্ব এলাকার থানা ও কমিউনিটি পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মিলি বিশ্বাস বলেন, ঢাকার যানজটের চিরচেনা দৃশের কিছুটা পরিবর্তন হতে শুরু হয়েছে। দু'এক দিনের মধ্যে সড়ক থাকবে প্রায় ফাঁকা অবস্থায়। তা সত্ত্বেও ট্রাফিক পুলিশ যথারিতি আগের মতোই দায়িত্ব পালন করবে। এ কারণে ট্রাফিক পুলিশের সকল সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকেই ঈদের সময় ট্রাফিক ব্যবস্থায় কিছু নতুন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। কারণ ফাঁকা সড়কে বেড়ে যায় বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্য। বিশেষ করে মোটর সাইকেল রেস রীতিমত ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই ঘটে থাকে দুর্ঘটনা। আর অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য গঠন করা হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের কয়েকটি স্পেশাল টিম। ওই টিমগুলো ইতিমধ্যে রাজধানীর ভিআইপি সড়কে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ডিআইজি মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, পুলিশ মহা-পরিদর্শকের (আইজিপি) নির্দেশে এবারই প্রথম রমজানের সময় রাজধানীর নিরাপত্তায় এপিবিএন ইউনিট দায়িত্ব পালন করছে। এপিবিএনের চারশ' সদস্য নগরীর নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, হাতিরপুল, ইস্টার্ন প্লাজা, এলিফ্যান্ট রোড, এয়ারপোর্ট ও রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, হাউজ বিল্ডিং, মিরপুর, গাবতলী, গুলশান, বনানী ইত্যাদি এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। প্রথম দিকে নির্দেশনা ছিল ঈদের আগ পর্যন্ত এপিবিএন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু আইজিপির নির্দেশে ঈদের পরবর্তী তিনদিন পর্যন্ত মাঠে থাকবে এপিবিএন সদস্যরা।
ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহেসান বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কঠোর নজরদারির কারণে মার্কেটগুলোতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা গতকাল পর্যন্ত ঘটেনি। আশাকরি ঈদের সময় বন্ধ মার্কেট বা বিপণী বিতানের নিরাপত্তার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখভাল করবেন।