দ্রুত বিচার আইনে বিএনপির ১৪৭ নেতা-কর্মীর বিচার শুরু
পল্টনে বিএনপির সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণ মামলা
কোর্ট রিপোর্টার
ভাংচুর, বোমাবাজি ও ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় দ্রুত বিচার আইনে দায়েরকৃত একটি মামলায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক জয়নাল আবদিন ফারুকসহ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ১৪৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। একইসঙ্গে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দ্রুত বিচার আদালতের হাকিম তারেক মাইনুল ইসলাম ভুঁইয়া গতকাল সোমবার অভিযোগ গঠন করে এই আদেশ দেন। অভিযোগ গঠনকালে ৪৭ জন নেতাকর্মী অনুপস্থিত থাকায় তাদের পক্ষ থেকে আইনজীবীরা সময় চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু দ্রুত বিচার আদালতের হাকিম সময় আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার শুরু হলো বলে জানান আইনজীবীরা।
গত বছরের ১১ মার্চ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ ীয় কার্যালয়ের সামনে তত্কালীন ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে ভাংচুর ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ১৫৫ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশ পল্টন থানায় দুটি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে ভাংচুর, বোমাবাজি ও ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে গত বছরের ২৪ মার্চ ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। কিন্তু ওমর ফারুক নামের এক আসামি মৃত্যুবরণ করায় অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। আসামিদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ ও মো. শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এজেডএম জাহিদ হোসেন, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধানও রয়েছেন।
এদিকে গতকাল এই মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। ধার্যকৃত দিনে আসামিরা মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের ওপর আইনজীবীরা এবং জয়নাল আবদিন ফারুক তার অব্যাহতির আবেদনের ওপর নিজে শুনানি করেন। শুনানিতে জয়নাল আবদিন ফারুক বলেন, ঘটনার দিন আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল। যার কারণে আমাদের বহু নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। আর আমাদের নিজেদের ডাকা জনসভায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নেতাকর্মীদের হত্যার চেষ্টা করবো, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিষয়টি হাস্যকর ও অবান্তর। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ওই দিনের ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করে তিনি বলেন, আসলে পুলিশের বিরুদ্ধেই মামলা হওয়া উচিত্ ছিল অথচ মামলা হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। সেদিন পুলিশ কোনো উস্কানি ছাড়াই ভয়ঙ্কর রকমের মারমুখী হয়ে ওঠে। পুলিশের এহেন আচরণ কোনো সভ্য দেশে আশা করা যায় না। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যেই এ মামলার সূত্রপাত। তদন্ত কর্মকর্তা সরকারের প্রভাবে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
মামলার অন্যান্য আসামিদের অব্যাহতি আবেদনের ওপর অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মোহসীন মিয়া, মোসলেহ উদ্দিন জসীম প্রমুখ শুনানি করেন। শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ও দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে এই মামলা দায়ের ও অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। ওইদিনের ঘটনা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। তাতে পুলিশের মারমুখী আচরণের চিত্র উঠে আসে। আসামিরা সবাই নির্দোষ দাবি করে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানান আইনজীবীরা। এরপর দ্রুত বিচার আদালতের হাকিম আসামিদের অভিযোগ পড়ে শোনালে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। পরে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত বছরের ১১ মার্চ বিএনপি'র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে উল্লেখিত আসামিরাসহ আরও ৫০/৬০ জন হঠাত্ করেই ইট পাটকেল, লোহার রড, শাবল, লাঠি, হকিস্টিক, ইত্যাদি হাতে বিএনপির কেন্দ ীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তার উপর, টপ কালেকশনের গলি ও নয়াপল্টন মসজিদ গলির সামনের রাস্তায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তারা সরকারি-বেসরকারি অফিস ও যানবাহন ভাংচুর করে। পর পর ১৮/২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও রাস্তার উপর ৭টি স্থানে টায়ার, চট, কাগজ দিয়ে আগুন ধরিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। পুলিশ এতে বাধা দিলে তারা পুলিশের উপর ককটেল নিক্ষেপ করে। কর্তব্যরত পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ বিএনপির কেন্দ ীয় কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকেও তারা পুলিশের উপর আরও দুটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের ভিতরে তল্লাশি চালিয়ে ৩য় তলায় দাপ্তরিক রুমের বাথরুম থেকে ২টি, কনফারেন্স রুমের বাথরুম থেকে ২টি, ৪র্থ তলায় যুবদলের কেন্দ ীয় কমিটির অফিসের পূর্বকোনের বারান্দায় নির্মাণ সামগ্রীর চিপায় রাখা অবস্থায় ৪টিসহ মোট ১০টি তাজা হাতবোমা উদ্ধার করে।