আর্সেনাল ও চেলসির মধ্যকার বিরক্তিকর গোলশূন্য ড্র লিভারপুলকে বড়দিনের ছুটিতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকার সুযোগ করে দিল। সাধারণত প্রিমিয়ার লিগে বড় দিনের প্রাক্কালে যে দল শীর্ষে থাকে সচরাচর তারাই শিরোপা জেতে।
আর্সেন ওয়েঙ্গারের দলটি নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠিত এ খেলায় জিততে পারলে আবার শীর্ষে ফিরতো; কিন্তু ড্রটির পর কোচ ব্রেন্ডন রজার্সের অধীনে চলতি মৌসুমে ভাল খেলে চলা লিভারপুল শীর্ষেই থাকলো। যদিও অলরেডসদের পয়েন্ট আর্সেনালের মতোই ৩৬ পয়েন্ট; কিন্তু গোল ব্যবধানের কারণে আর্সেনাল দ্বিতীয় স্থানে গড়িয়ে গেল। চেলসি উঠে এসেছে চতুর্থ স্থানে। ম্যানচেস্টার সিটি আছে তৃতীয় স্থানে। মজার ব্যাপার হলো- শীর্ষ চার দল নিজেদের মধ্যে কেবল দুই পয়েন্টের ব্যবধান রেখে বড়দিনের ছুটিতে গেল।
ইংল্যান্ড জুড়ে তীব্র তুষারপাতের মধ্যে লন্ডনের এ দুইটি ক্লাব গত সোমবার রাতে মুখোমুখি হয়। এতে প্রথমার্ধে চেলসি মিডফিল্ডার ফ্রাংক ল্যাম্পার্ডের শট একবার ক্রসবারে লাগা এবং থিও ওয়ালকোটের একটি পেনাল্টির জোরালো আপিল অগ্রাহ্য হওয়া ছাড়া খেলাটিতে দুই দলই ছিল সতর্ক। যদিও শেষদিকে আর্সেনাল ফরোয়ার্ড অলিভার জিরুদ একেবারে কাছে থেকে বল জালে পাঠানোর সুযোগ পেয়েও বাইরে মারেন।
চেলসি কোচ হোসে মরিনহোর খেলা শেষে স্কাই টিভিকে বলা কথাতেই ফুটে ওঠে খেলাটির চরিত্র। পর্তুগীজ এই কোচ বলেন, 'এটা ছিল এমন একটা ম্যাচ যা আর্সেনাল জিততে চেয়েছিল। আবার আর্সেনাল তা হারতেও চায়নি। এটা ছিল এমন একটা ম্যাচ যা চেলসি জিততে চেয়েছিল। আবার চেলসি তা হারতেও চায়নি।' তারপরও মরিনহোর রক্ষণাত্মক কৌশলে দল নামানোর বিষয়টিকে উপহাস করে দুয়োধ্বনি দেয় স্বাগতিক দর্শকরা।
কোচ ওয়েঙ্গারও প্রায় একই রকম সুরে বলেন, তিনি খেলা চলাকালে কোন খেলোয়াড়কে বদল করেননি। কারণ তিনি তার রক্ষণাত্মক ধরনটিকে বদলাতে চাননি। যদিও তিনি জিততে চেয়েছিলেন বলে দাবি করেন। গানার্স কোচের অভিযোগ- প্রথমার্ধে থিও ওয়ালকটকে উইলিয়ান যে ফাউল করেন তাতে পেনাল্টি দেয়া উচিত ছিল। অপরদিকে মরিনহো ইঙ্গিত দেন- খেলায় তার দলের সবচাইতে বড় সুযোগ ছিল ল্যাম্পার্ডের শটটি।
এদিকে চেলসি কোচ হোসে মরিনহোর বিরুদ্ধে জয় অধরাই থাকলো ফরাসি কোচ ওয়েঙ্গারের। কেননা এ নিয়ে দশবারের মুখোমুখিতায় একবারও জিততে পারেননি আর্সেন। বিপরীতে পাঁচবার জিতেছেন মরিনহো। অন্য পাঁচটি খেলা ড্র হয়েছে।
ওয়েঙ্গার অবশ্য দাবি করেন, গত সপ্তাহে ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে আর্সেনালের ৬-৩ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ায় গানার্সদের নিয়ে যে সমালোচনা শুরু হয়েছিল তা এই ম্যাচের পরে কিছুটা হলেও বন্ধ হবে। এই রাতে ৪-৫-১ ছকে মাঠে দল নামান মরিনহো। ফলে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানো হয় ফার্নান্দো টরেসকে। মূলত এই রক্ষণাত্মক কৌশলের কারণেই আর্সেনাল ছন্দ হারিয়ে ফেলে।
বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে মরিনহো শিষ্যরা রক্ষণাত্মক কৌশল ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ঠিক তখনই ইডেন হ্যাজার্ডের পাস থেকে ফ্র্যাংক ল্যাম্পার্ডের ভলি ক্রসবারে না লাগলে চেলসি এগিয়ে যেতে পারতো। ফিরতি বলে টরেসের প্রয়াসটি ভেস্তে দেন আর্সেনাল গোলরক্ষক। ম্যাচের সময় যত গড়িয়েছে ওয়েঙ্গার ততই বিরক্ত হয়েছেন। বিশেষ করে আরটেটাকে আক্রমণাত্মক ভাবে ফাউল করলেও রেফারি মাইক ডিন যখন মিকেলকে অন্তত হলুদ কার্ডও দেখাননি সেসময় ওয়েঙ্গার রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অথচ ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন- এতে লাল কার্ড পাওয়া উচিত ছিল মিকেলের। এরপর ওয়ালকটকে বল ছাড়াই উইলিয়ান পায়ে আঘাত করলে তাতেও পেনাল্টি দেননি রেফারি।
অবশ্য শেষ দিকে জিরুদ দুইটি সুযোগ নষ্ট না করলে এসব অভিযোগ ছাড়াই জিততে পারতো আর্সেনাল; কিন্তু লিগে শুরুর দিকে ভাল নৈপুণ্য দেখানো ফরাসি খেলোয়াড়টি ২৩ নভেম্বর সাউদাম্পটনের বিরুদ্ধে গোল করার পর আর এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারছেন না।
ইংলিশ প্রিমিয়ারের পয়েন্ট টেবিলে বড় দলগুলো
দল পয়েন্ট গোল পার্থক্য পয়েন্ট
লিভারপুল ১৭ ২৩ ৩৬
আর্সেনাল ১৭ ১৬ ৩৬
ম্যান সিটি ১৭ ৩১ ৩৫
চেলসি ১৭ ১৪ ৩৪
এভার্টন ১৭ ১৩ ৩৪
নিউক্যাসল ১৭ ২ ৩০
টটেনহ্যাম ১৭ -৫ ৩০
ম্যান ইউ ১৭ ৮ ২৮