ছোটবেলায় আর দশটা বালিকার মতো মিমও স্বপ্ন দেখতেন পড়াশোনা শেষ করে বড় কিছু হবেন। তারমধ্যে অন্যতম ছিল নিজেকে ডাক্তার রূপেই দেখা। তাই পড়াশোনায় মনোনিবেশটাও ছিল বেশ। পাশাপাশি ভালোলাগা থেকে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন গান ও নাচের সাথে। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় ২০০৭ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলেন। তখন একবারও ভাবেননি, বিজয়ীর মুকুটটি তার মাথাতেই উঠবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছিল দারুণ একটা চমক। বিদ্যা সিনহা মিম ডাক্তার না হতে পারলেও এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিণত হয়েছেন মিডিয়ার তারকায়। সেই থেকে দর্শকদের ভালোবাসার মাঝে তিনি শুধু বেড়েই ওঠেননি, হয়ে উঠেছেন দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
গতানুগতিক নায়িকা চরিত্রের মাঝে নিজেকে কখনোই বন্দী করতে চাননি লাক্সসুন্দরী মিম। তার ভাষ্যে, 'আমি লাক্স-চ্যানেল আই সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে এসেছি বলে অনেকে হয়তো ধরে নিয়েছিলেন, অন্য কারও কারও মতো আমিও গতানুগতিক নায়িকা চরিত্রগুলোতে কাজ করব। কিন্তু তা না করে আমি একটু ভিন্ন পথে হেঁটেছি। আমি সব সময় সেই সব চরিত্রে কাজ করেছি, যেখানে আমার অভিনয়ের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমার মনে হয় আমি কিছুটা হলেও পেরেছি।' মিম অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে—'বনলতা সেন', 'কোনো এক প্রেমিক', 'আমাদের ফলো করুন', 'বাদলা দিনে', 'পরী কিংবা তার বাবার গল্প', 'তবুও তুমি আমার', 'ছেলেটি ঢাকা এসেছিল', 'যান্ত্রিক ভালোবাসা', 'এমনি বিএস', 'বাড়ি থেকে পালিয়ে', 'অলসপুর', 'উত্তরাধিকার', 'টো টো কোম্পানি' প্রভৃতি। এর মধ্যে আকরাম খানের পরিচালিত 'বনলতা সেন' নাটকে মিমের অনবদ্য অভিনয় সবার নজর কেড়েছিল। বনলতা সেন চরিত্র সম্পর্কে মিম বলেন, 'নাটকটিতে কাজের জন্য পরিচালক যখন আমাকে প্রস্তাব দেন তখন আমি বেশ আনন্দিত হয়েছিলাম। কারণ, এ ধরনের একটি চরিত্রে কাজ করা যেকোনো অভিনেত্রীর জন্যই স্বপ্নের মতো বিষয়। তবে পরবর্তী সময়ে আবার খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম এই ভেবে যে, জীবনানন্দের বনলতাসেনকে একেক জন মানুষ একেকভাবে কল্পনা করেন। এই চরিত্রে কাজ করাটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং। তারপরও ভালো কাজের ক্ষুধা থেকে আমি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি। স্ক্রিপ্ট পাওয়ার আগ আমি বনলতাসেনকে নিয়ে যা ভেবেছিলাম—স্ক্রিপ্ট পাওয়ার পর দেখলাম আমার ভাবনার ঠিক উল্টোটি। এরপরও আমি থেমে যাইনি। চরিত্রের মাঝ নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছি। তাই কাজটি দর্শকদের সাথে সাথে আমাকেও আনন্দ দিয়েছে।' বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজের প্রতি মিমের ঝোঁকটা বরাবরই একটু কম। তবে এই লাক্সতারকা যে কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন, প্রায় সবগুলোর জন্যই ভালো সাড়া পেয়েছেন। মাঝে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত বিভিন্ন বিজ্ঞাপনচিত্রে মিমের উপস্থিতি দর্শকদের মাঝে তাকে খানিকটা সমালোচিত করেছে। মডেলিং না অভিনয় কোনটি আপনার পছন্দের—এমন প্রশ্নের জবাবে মিম বলেন, 'মডেলিং আমাকে চুম্বকের মতো টানে আর অভিনয় হলো ভালোবাসা।' প্রয়াত জননন্দিত নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের 'আমার আছে জল' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মিম রুপালি পর্দায় নাম লেখান। বাণিজ্যিক ধারার এ ছবিতে তার নায়ক ছিলেন ফেরদৌস। এরপর জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত শাকিব খানের বিপরীতে বাণিজ্যিক ধারার ছবি 'আমার প্রাণের প্রিয়া'তেও সফলতার পর একাধিক নির্মাতা ও প্রযোজক নতুন চলচ্চিত্রে কাজের ব্যাপারে অফার করলে তা তিনি সানন্দে গ্রহণ করেন। এরমধ্যে খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত 'জোনাকির আলো' শিরোনামের চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন। ছবিটিতে আরও অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী ও ইমন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'অনেকদিন থেকেই বেশ ক'জন পরিচালক তার চলচ্চিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু আমি এমন একটি গল্প ও অভিনয়ের ক্ষেত্র খুঁজছিলাম যেখানে নতুন করে নিজেকে বিকশিত করতে পারব। আমি মনে করি, 'জোনাকির আলো' চলচ্চিত্রটি আমার জন্য 'এক্সট্রা অরডিনারি' কিছু হবে। এরইমধ্যে ছবিটির শুটিং শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডাবিংয়ের কাজ চলছে।' এর বাইরে নবীন পরিচালক তন্ময় তানসেন পরিচালিত মিম অভিনীত 'পদ্মপাতার জল' ছবির প্রথম লটের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরেই এই ছবি দুটো মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। সেই সাথে তার কাছে আরও কয়েকটি নতুন চলচ্চিত্রের অফারও রয়েছে। নিজের চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে মীম বলেন, 'চলচ্চিত্রে সাফল্য আসলে ভাগ্যের ব্যাপার। তবে আমি লাকি যে, আমার আগের দুটি ছবিই ব্যবসা সফল হয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত চলচ্চিত্রের অফার আসে। বেছে বেছে ছবির কাজ করছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই ভালো কিছু ছবির মাধ্যমে আমার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে একটা স্থায়িত্ব আনতে পারব।' তিনি আরও বলেন, 'আমি এ বছর চলচ্চিত্রকে গুরুত্ব দেবো। চলচ্চিত্রে কিন্তু একটা পরিবর্তন আসছে। আমি এ সুযোগ ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে চাই। কিছু ভালো ছবিতে কাজ করার ইচ্ছা আছে।' ছবির শুটিং ছাড়াও এই লাক্স সুন্দরী বর্তমানে বেশ কয়েকটি এক খণ্ডের নাটকে অভিনয় করছেন। ভবিষ্যতের ভাবনার কথা জানতে চাইলে প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী মিম বলেন, 'ভালো অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের হূদয়ে টিকে থাকতে চাই। সর্বোপরি একজন ভালো অভিনয়শিল্পী হতে চাই।'