বাংলাদেশজুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রাকৃতিক আর মনুষ্যনির্মিত দর্শনীয় স্থান। মূলত এই স্থানগুলোর কথা মাথায় রেখেই প্রতি শুক্রবারের আয়োজনে থাকছে একটি করে দর্শনীয় স্থানের বিবরণ। আর আজ এতে প্রকাশিত হলো বগুড়ার মহাস্থানে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর-এর কথা।
কোনো একটি দেশ বা অঞ্চলের হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে সে অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন স্থাপনা ও নিদর্শন। আর আমাদের দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক গৌরবের এমনই সব সাক্ষ্য বহন করে যে জাদুঘরটি এর দর্শনার্থীদের সুযোগ করে দিচ্ছে অতীত সময়কে ভালোভাবে জানার সেটি হলো বগুড়ার মহাস্থানে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। বগুড়া থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে এবং মহাস্থানগড় থেকে সামান্য উত্তরে গোবিন্দ ভিটার ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। প্রথম দিকে ৩ একর জায়গার উপর জাদুঘরের মূল অংশটি থাকলে নানা সময়ে সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমানে এর পরিধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ একরে। এই জাদুঘরে বেশ পুরানো মাটির মূর্তি, বাসনপত্র, স্বর্ণবস্তু, ব্রোঞ্জের সামগ্রী, কালো পাথরের মূর্তি, বেলে পাথরের মূর্তি, মাটি দিয়ে তৈরি খোদাই করা ইট, বিভিন্ন শিলালিপি, মাটি ও অন্যান্য ধাতুর তৈরি বোতাম, কানের ফুল, নাক ফুল, মূল্যবান পাথর, মার্বেল, পোড়া মাটির পুতুল, খেলনা, নানা ধরনের প্রাচীন অলংকারসহ বহু প্রাচীন ও মূল্যবান নিদর্শন রয়েছে। এছাড়া জাদুঘরের অভ্যন্তরে সংরক্ষরণ করা রয়েছে বিভিন্ন সময়ের সাক্ষ্য বহন করা পোড়া মাটি ও দামি পাথরের একাধিক মূর্তি, শিলালিপি, অলংকার ও ধাতব সামগ্রী। এগুলোর মধ্যে উল্লে¬খযোগ্য কয়েকটি হলো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের পোড়ামাটির দণ্ডয়িমান মূর্তি, ৭ম থেকে ১১শ শতকের পোড়ামাটির দ্রব্য, ১৫শ শতকের আরবি শিলালিপি, ১৮শ শতকের মূল্যবান মার্বেল পাথরের গণেশ, ১১শ শতকের বিঞ্চু , ১২শ শতকের ব্রহ্ম, ৮ম-১২শ শতকের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, ৮ম থেকে ১০ম শতকের অলংকৃত মাটির বল, ৯ম এবং ১০ শতকের অষ্ট ধাতু নির্মিত বালা, বিভিন্ন সময়ের লৌহ নির্মিত দ্রব্যাদি, ১১শ শতকের কালো পাথরের অম্বিকা, ১০ম ও ১১শ শতকের পোড়া মাটির ফলক, ৭ম থেকে ৯ম শতকের বিভিন্ন আকারের ব্রোঞ্জের মূর্তি, চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের পোড়ামাটির মূর্তির অংশবিশেষ প্রভৃতি। এ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি হলো বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি) এবং শীতকালীন সময়সূচি হলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত (দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি)। মহাস্থান-এর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর প্রতি সপ্তাহের রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে।