স্বাধীন দেশ মিয়ানমারের ৬৫ বছর পূর্ণ হলো গতকাল শুক্রবার। পুরো নাম রিপাবলিক অব দ্য ইউনিয়ন অব মিয়ানমার। ৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫৩৮ বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট দেশটিকে 'মিয়ানমার' নামেই চেনে সবাই। কিছু দেশ অবশ্য আগের নাম 'বার্মাই' ধরে রেখেছে। দেশটির চিত্র বলতে গেলে কিন্তু সবার কাছেই একরকম। সামরিক শাসন আর গণতন্ত্রের অনিঃশেষ সংগ্রামের দেশ, যেখানে একদিকে অং সান সুচির গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন সামরিক কর্মকর্তাদের আস্ফাালন।
ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মিয়ানমার মুক্ত হয় ১৯৪৭ সালের ৪ জানুয়ারি। দেশটির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা অং সান সুচির জন্য সেই দিনটি শুধু আনন্দের নয়, বেদনারও। কেননা, তার বাবা অং সান যে সেই দিনটি দেখে যেতে পারেননি! স্বাধীনতার মাত্র ছয় মাস আগে আততায়ীর গুলিতে মারা যান তিনি। অথচ দেশকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করতে তিনি কী না করেছেন। রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, গড়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি। মিয়ানমারের মানুষ এখনো তাকে মানেন স্বাধীন মিয়ানমারের জনক এবং আধুনিক সামরিক বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাবার হাতে গড়া সেই সামরিক বাহিনীই অং সান সুচিকে তার দেশে গণতন্ত্রকে বন্দি করে রাখে অনেক বছর। সুচির রাজনৈতিক জীবন প্রায় ২২ বছরের। ১৯৯০ সালে জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। কিন্তু সামরিক বাহিনী তাকে গৃহবন্দি করে রাখে। তাই জনগণ দেশ পরিচালনার অধিকার দিলেও সে সুযোগ পাননি অং সান সুচি। পরের ২০ বছরের মধ্যে প্রায় ১৫ বছর বন্দিই থাকতে হয়েছে তাকে। আন্তর্জাতিক অবরোধ, মানবতাবাদী এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের দাবি টলাতে পারেনি সামরিক জান্তাকে। ২০১০ সালে মুক্তি দেয়া হয় সুচিকে। গত বছর সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেন তিনি। সেই সুবাদে এখন তিনি বিরোধী দলের নেত্রী। কিন্তু সেই ভূমিকায় খুব কী সক্রিয় বা সরব নোবেল শান্তি পুরস্কারসহ অনেক স্বীকৃতি পাওয়া গণতন্ত্রের এই মানসকন্যা? দেশে যে অশান্তি, হানাহানি লেগেই আছে এ বিষয়ে কতটা সোচ্চার তিনি? এরকম অনেক প্রশ্নের সমাধান মেলেনি এখনো। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। এ কারণে সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে চেষ্টাও তিনি করেছেন।ডয়েচে ভেলে।