পাকিস্তান কেন ভারতের বিপক্ষে এমন সহজ সহজ জয় পাচ্ছে? এ প্রশ্ন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা মত দিতে পারেন। তবে দুই অধিনায়ক একটা ব্যাপারে একমত, যার যার টপ অর্ডার এবং বোলিংই ঘটনাটা ঘটাচ্ছে। পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ উল হক সিরিজ জয়ের পর পরিষ্কার বলে দিলেন, ভারতের বিপক্ষে স্মরণীয় এই জয় মূলত তার টপ অর্ডার ব্যাটিং ও দুরন্ত বোলিংয়ের ফল। আর ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি বলছেন, তার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ও সামগ্রিক বোলারদের ব্যর্থতা এই পরাজয়ের কারণ।
পাকিস্তানের দু'ম্যাচেই জয়ের নায়ক বলা যায় ওপেনার নাসির জামসেদকে। দ্বিতীয় ম্যাচে নাসিরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির সঙ্গে আরেক ওপেনার মোহাম্মদ হাফিজের ৭৬ রান পাকিস্তানকে এনে দিয়েছিল দুরন্ত এক শুরু। আর এই শুরুতেই ম্যাচটা খানিকটা হাতে চলে এসেছে বলে বিশ্বাস করেন অধিনায়ক মিসবাহ উল হক।
হাফিজ বলছেন, এমন একটা শুরুর পর তাদের আসলে আত্মবিশ্বাসই বেড়ে গিয়েছিল, 'আমাদের দুই ওপেনার অসাধারণ শুরু করল। এটা ঠিক যে, এই শুরুর পর মিডল অর্ডার কাজটা ভালো করতে পারেনি। তবে ওপেনাররা এতো বড় একটা পার্টনারশিপ গড়ে দেয়ায়, ছয়ের ওপরে রান তোলায় কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। বাকি কৃতিত্বটা অবশ্যই বোলারদের। অসাধারণ বল করে তারাই জয়টা এনে দিয়েছে ভারতের বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে যে কোনো ফরম্যাটে যে কোনো সময় জয় পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।' ঠিক এই কথাগুলো উল্টে দিলে যা দাঁড়ায়, তাই বলছেন ধোনি। সেই ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর টানা ব্যর্থতার মধ্যে চলছে ধোনির অধিনায়কত্ব। সব ব্যর্থতাকে ভারতীয় সমর্থকদের মনে অন্তত ছাপিয়ে গেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই পরাজয়। আর ধোনি বলছেন, এ পরাজয়ের দায় অবশ্যই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিতে হবে, 'এখানে ভালো শুরু করাটা জরুরী ছিল। শেষ ১০ ওভারে ৮০-৯০ রান দরকার হলেও সেটা করা যেত। এমন নয় যে, টপ অর্ডার চেষ্টা করেনি। তবে তারা পারেনি এমন হয়। আর বোলাররাও পাকিস্তানী ইনিংসের শুরুতে অন্তত খুবই অসহায় ছিল।'
বোলাররা যে অসহায় ছিল, সেটা আর বলে দিতে হয় না। পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটিতে ১৪১ রান দেখলেই বোঝা যায়। এই দারুণ উদ্বোধনী জুটি নিয়ে পাকিস্তানী অধিনায়ক যেমন তৃপ্ত, তেমনই মিডল অর্ডারের ভূমিকায় একটু অসন্তুষ্ট। তিনি বলছিলেন, এই শুরুর ওপর দাঁড়িয়ে যে রান হওয়া উচিত ছিল, তা একদমই হয়নি। ফলে বোলাররা দারুণ কিছু না করলে এই ম্যাচ জেতা সম্ভব হত না বলে বিশ্বাস মিসবাহর, 'এই শুরুর ওপর দাঁড়িয়ে স্কোর বোর্ডে অবশ্যই ২৯০ থেকে ৩০০ রান থাকা উচিত ছিল। আমরা যে ২৫০ রান করলাম, ভারতের বিপক্ষে এটা কখনোই উইনিং স্কোর হতে পারে না। আমরা জানতাম, এই ম্যাচ বের করতে হলে বোলারদের অসাধারণ কিছু করতে হবে। বোলাররা শুধু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়েছে, তাই নয়; তারা রানটাও দারুণভাবে চেপে ধরে রেখেছিল।'
অবশ্য ধোনিও বোলারদের কিছু প্রশংসা করছেন। বিশেষ করে পাকিস্তানী ইনিংসটা তার বোলাররা যেভাবে হঠাত্ গুড়িয়ে দিয়েছেন, তাতে ধোনি খুবই আনন্দিত ছিলেন, 'বোলাররাই আমাদের যা একটু খেলায় ফিরিয়ে এনেছিল। ওদের ইনিংসের দ্বিতীয় অংশে আমাদের স্পিনাররা ভালো করছিল। ফাস্ট বোলাররাও উইকেট থেকে যতোটা সম্ভব পেস-বাউন্স তুলছিল। ফলে আমরা বেশ খেলায় ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু শুরুতে ওভাবে কয়েকটা উইকেট হারিয়ে ফেলায় আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।' আর এই ঘুরে না দাঁড়ানোই পাকিস্তান পেয়ে গেল আনন্দে ফেটে পড়ার মতো এক উপলক্ষ। এখন মিসবাহরা এই উপলক্ষটা আরও দীর্ঘায়িত করারই পরিকল্পনা আটছেন।