প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের ২৬ হাজারের বেশি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি নাগাদ দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে সম্পূর্ণ জাতীয়করণেরও ঘোষণা দেন। গতকাল বুধবার জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ উপলক্ষে প্রাথমিক শিক্ষকদের এক মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনটি ধাপে দেশের সকল বেসরকারি, রেজিস্টার্ড ও নন-রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সকল এমপিওভুক্ত বিদ্যালয় জাতীয়করণের আওতায় পড়বে এবং সকল নন-এমপিও রেজিস্টার্ড ও নন-রেজিস্টার্ড বিদ্যালয় আগামী ১ জুলাই থেকে জাতীয়করণ করা হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৪ সালে ১ জানুয়ারি নাগাদ অন্যান্য বিদ্যালয়ও জাতীয়করণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে সরকারি তহবিল পাওয়ার আশায় বেসরকারি উদ্যোগে দেশে কোন নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না। প্রয়োজন হলে সরকারই দেশে নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করবে।
জাতীয়করণ করা স্কুলগুলোর মধ্যে এমপিওভুক্ত রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থায়ী নিবন্ধনপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অস্থায়ী নিবন্ধনপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিওবহির্ভূত কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এনজিও বিদ্যালয়, পাঠদান চালুর অনুমতির অপেক্ষাধীন বিদ্যালয়সমূহ রয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ফলে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মত এক লাখেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি সরকারি হলো। এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭৩ সালে দেশের ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রথম জাতীয়করণ করে সকল প্রাথমিক শিক্ষাকে সরকারি করেছিলেন।
মহাসমাবেশে হাজার হাজার শিক্ষকের করতালির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ একটি শিক্ষিত জাতি চায়। তাই এই সরকার সর্বদাই শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষাকে শিক্ষার ভিত্তি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গত ৪১ বছরেও দেশে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সরকার সর্বদা শিক্ষকদের সকল সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে চায় বলেই অন্যরা নয়, আমরা এটা করতে পারি।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের চাকরি জাতীয়করণের সুযোগ পেয়ে আমি গর্ববোধ করছি এজন্য যে, আমি জাতির জনকের একটি স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার একটি সার্বজনীন জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করেছে এবং শিক্ষিত জাতি গঠনে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, অতীতে বিভিন্ন সরকার নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও মাত্র চার বছরে আমরা যা করেছি ৪০ বছরেও অন্যরা তা করতে পারেনি। তিনি বলেন, স্থানীয় লোকদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম বৃদ্ধি ছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুল শিশুদের ঝরে পড়া রোধে বৃত্তি ও মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'তারা (বিএনপি) কেবল শিক্ষার হারই কমায়নি—দেশের খাদ্য উত্পাদনও আমদানিনির্ভর করে ফেলে।' শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ৫৬ হাজার ৭২০টি স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছে এবং ৩৭ হাজার ৬৭২টি স্কুলে অন্তত একজন অতিরিক্ত শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করেছে। তিনি এ বছর স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে ২৭ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণের উল্লেখ করে বলেন, এর ফলে শিক্ষাবর্ষের শুরুতে পিতা-মাতার পুস্তক সংগ্রহের বিরাট বোঝা লাঘব হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি অভিন্ন পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষা পদ্ধতির আওতায় শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া অঞ্চল ও ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর শিশুরা যাতে পড়াশুনার কাজ চালিয়ে যেতে পারে তার জন্যও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
মহাসমাবেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নিয়াজ উদ্দীন বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠনের মহাসচিব এম মনসুর আলী স্বাগত বক্তৃতা দেন।