শৈশব-কৈশোর কেটেছিল পাবনার যে একতলা পাকা বাড়িটিতে সেই বাড়িটি দখলমুক্ত দেখা হলো না সুচিত্রা সেনের। পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার দিলালপুর হেমসাগর লেনে সুচিত্রার এই পৈত্রিক বাড়িটি। ১৯৫১ সালের মাঝামাঝিতে সুচিত্রা সেনের পরিবার পাড়ি জমায় কলকাতায়। এর পর থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয় বাড়িটিতে।
গোপালপুর মৌজার এসএ-৯৯ খতিয়ানভুক্ত ৫৮৭-এসএ দাগের ০.২১২৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত সুচিত্রার পৈত্রিক ভিটা ১৯৮৭ সালে তত্কালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমানের সহযোগিতায় জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সুবহানসহ অন্যরা একসনা লিজ নেয়। এখানে তারা 'ইমাম গাজ্জালী ইনস্টিটিউট' নামে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গড়ে তুলেছেন। সে সময় বাড়িটির মূল্যবান ফলদ ও বনজ বৃক্ষ কেটে ফেলে দখলকারীরা।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরও দখলমুক্ত হয়নি সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক ভিটা। বাড়িটি এখনও জামায়াত নেতার ভোগ দখলে। বাড়িটি দখলমুক্ত করার দাবিতে পাবনার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আন্দোলন শুরু করে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, ২০০৯ সালের ২২ জুন পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইমাম গাজ্জালী ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ'র লিজ বাতিল করে।
২০০৯ সালের ৮ জুলাই-এর মধ্যে অর্পিত সম্পত্তির দখল ছেড়ে দেয়ারও নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পর জামায়াত নেতারা বাড়িটি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। জামায়াত নেতারা হাইকোর্ট-এ লিজ বাতিলের বিরুদ্ধে আবেদন জানালে, হাইকোর্ট লিজ বাতিলের উপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।
সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৬ জুলাই একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে, সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি সরকারের দখলে নেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে দখলকারীরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে হাইকোর্টে সে আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন আপিল বিভাগ। এভাবেই রিটের পর রিট আর আদেশের বিপরীতে স্থগিতাদেশের আইনি মারপ্যাঁচে ধ্বংস হতে বসেছে সুচিত্রা সেনের শেষ স্মৃতিটুকু। এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি এম সাইদুল হক চুন্নু বলেন, মামলাটি হাইকোর্টের অ্যাপিলেড ডিভিশনে আটকা পড়ে আছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করে বাড়িটি দখলমুক্ত করার যায়। কিন্তু আইনি জটিলতায় কাজ হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, 'সুচিত্রা সেনের বাড়িটি দখলমুক্ত করা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। এটা আমরা করবই। '
নিউইয়র্ক প্রবাসী পাবনার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠক গোপাল সান্যাল শুক্রবার ইত্তেফাককে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন জামায়াতের দখল থেকে মহানায়িকা সূচিত্রা সেনের বসতভিটাটি দখলমুক্ত করতে পাবনায় জোরালো আন্দোলনের পর, বিদেশের মাটিতে এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমরা আশাবাদী খুব শিগগিরই বাড়িটি দখলমুক্ত হবে। বেদনা নিজ বাড়ি দখলমুক্ত দেখে যেতে পারলেন না মহানায়িকা।