আরো কিছুক্ষণ না হয় রহিতে কাছে / আরো কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে...
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দুলছিল তার জীবন, সেই উত্কণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছিল সারাবিশ্বের কোটি ভক্তের হূদয়ে। সবার প্রার্থনা ছিল এ যাত্রা সংশয় কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি। গত কয়েকদিন ধরে চিকিত্সকরা সে আশার বাণীই শোনাচ্ছিলেন। কিন্তু সব প্রত্যাশাকে পেছনে ঠেলে কোটি ভক্তকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৮২ বছর বয়সে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট নাগাদ জীবনাবসান হল মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের। আর সেই সঙ্গে অবসান হল বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের এক অধ্যায়ের।
শুধু বাংলা সিনেমার জগতেই নয়, ভূ-ভারতে, এমনকি সারাবিশ্বে বাংলাদেশের এই মেয়েটির মত মহানায়িকার আসন আর কেউ অর্জন করতে পারেননি। অভিনয় ছেড়ে দেয়ার পর অন্তরালের জীবন বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সুচিত্রা সেন সারাজীবন রূপালি পর্দার নায়িকা হিসেবেই বিরাজ করেছেন দর্শকের হূদয়ে। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকাকূল ভারতের চলচ্চিত্র জগত্। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীসহ সর্বস্তরের মানুষ হাসপাতালে ছুটে যান।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করে বাণী দিয়েছেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে মধ্য কলকাতার বেলভিউ বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। টানা প্রায় এক মাস ধরে তার শারীরিক অবস্থার উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলছিল। ফুসফুসে সংক্রমণের পাশাপাশি তার হূদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ায় ২৯ ডিসেম্বর রাতে তাকে আইসিইউ-এ স্থানান্তরিত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে ফের শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। মধ্য রাতে ফের বাইপ্যাপ দেয়ার প্রয়োজন হলেও তা নিতে অস্বীকার করেন মহানায়িকা। তখন থেকেই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। শুক্রবার ভোর থেকে প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে শেষ চেষ্টা করেন চিকিত্সকরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। সেইসঙ্গে পূরণ হলো না তার শেষ ইচ্ছাও। পরিবারের সদস্যদের কাছে তিনি জানিয়েছিলেন, মারা যাওয়ার পর যেন তাকে বাংলাদেশে তার গ্রামের বাড়িতে শেষকৃত্য করা হয়। কিন্তু গতকাল সুচিত্রা সেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দেন যে, সুচিত্রা সেনের শেষকৃত্য হবে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল দুপুরে তার কেওড়াতলা মহাশ্মশানেই দাহ করা হয়।
গতকাল দুপুর ১টা ৪৬ মিনিটে তার কন্যা মুনমুন সুচিত্রা সেনের মুখাগ্নি করেন। এই মহাশ্মশানেই মহানায়ক উত্তমকুমারেরও দাহ করা হয়েছিল। এর আগে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়িতে।
'এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো' — মোটর সাইকেলে উত্তম কুমার, পেছনে সুচিত্রা সেন। 'সপ্তপদী' সিনেমার সেই গান বাঙালি দর্শকের কাছে রোমান্টিক মুহূর্তের চিরন্তন একটি দৃশ্য। প্রেমের পথে অনিঃশেষ যাত্রার নায়ক-নায়িকা তারা। বাঙালি প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে এ চলা অন্তহীন। সেই যাত্রাপথের উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক জুটি তাই দর্শকের হূদয়ে পেয়েছে অমরত্বের মর্যাদা। সুচিত্রা সেন চলে গেলেন, নেই উত্তম কুমারও। কিন্তু বাঙালি দর্শকের হূদয়ে তাদের সেই যাত্রা কোনদিনই শেষ হবার নয়।
অভিনয়ে এক ঈর্ষণীয় স্থান দখল করেছিলেন সুচিত্রা সেন। লাখ লাখ পুরুষের হূদয়হরণ করেছিলেন। জল-ছলছল দুটি চোখ যে কোন দর্শককে মুহূর্তে ভাসাতে পারত কান্নার সাগরে। তার চোখের চাহনিতে হূদয়ে তোলপাড় তুলতো প্রতিটি যুবকের। মেয়েদের কাছে তিনি ছিলেন ফ্যাশন আইডল। তার বলার ভঙ্গি, হাসি, ঘাড় বাঁকিয়ে তাকানো —এসব আজো ভুলতে পারে না কোন বাঙালি। তিনি সুচিত্রা সেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসাবে আজো সবার উঁচুতে। এখনো বলিউডে নতুন যে কোন নায়িকা একটু লাইমলাইটে এলেই তার তুলনা করা হয় সুচিত্রা সেনের সঙ্গে। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭৮ পঁচিশ বছর অভিনয় করে প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে তিনি চলচ্চিত্রের বাইরে, এমনকি লোক চোখের আড়ালে— তারপরও তার আবেদন কমেনি এতটুকু। বরং তার প্রতি আকর্ষণ দিন দিন আকাশচুম্বি হয়েছে।
অবিভক্ত ভারতের বর্তমান বাংলাদেশের পাবনায় জন্ম নেয়া রমা দাশগুপ্ত হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সিনেমার স্বপ্নের রানী। একজন ভারতীয় নায়িকা হিসাবে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জনের সম্মান অর্জন করেছিলেন। কি ছিল তার অসামান্য সাফল্যের রহস্য? তার অভিনয়ে প্রতিটি দর্শক খুঁজে পেয়েছে তার আরাধ্য মানুষটিকে। তিনি কখনো আদরের বোন, কখনো দায়িত্বশীলা মেয়ে। কখনো সংসার ত্যাগী প্রেমিকা কিন্তু ভারতীয় নারীর সম্ভ্রম বজায় রাখা কঠোর চরিত্রের নারী। সবমিলিয়ে মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ নিয়ে রূপালী পর্দায় একজন আদর্শ ভারতীয় নারীর প্রতিরূপ হয়ে উঠেছিলেন সুচিত্রা সেন। সুচিত্রার পরিচালকেরা, যেমন অগ্রদূত (বিভূতি লাহা ও সহযোগী), যাত্রিক, অজয় কর, নির্মল দে, গুলজার এই আদর্শ নারীর চরিত্রেই সুচিত্রা সেনকে উপস্থাপন করলেন। সাধারণ মানুষের কাছে সুচিত্রার এই ক্যারিশমাটিক অবয়ব নির্মাণের সূচনা ঘটেছিল 'অগ্নিপরীক্ষা' মুক্তি এবং তার ব্যাপক সাফল্যের মধ্য দিয়ে। একদিকে, উত্তম কুমারের সঙ্গে রোমান্টিক চরিত্র চিত্রায়ণ অন্যদিকে, রোমান্টিক এই চরিত্রের পাশাপাশি 'দ্বীপ জ্বেলে যাই' ও 'উত্তর ফাল্গুনী' চলচ্চিত্র দুটি সুচিত্রার রোমান্টিক চরিত্রের বাইরে সর্বত্যাগী নারীর চরিত্রকে তুলে ধরেছিল।
অন্তরালের সুচিত্রা
১৯৭৮ সালে অভিনয় ছেড়ে দিয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছিলেন তিনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর কখনোই দর্শকের সামনে ধরা দেবেন না। দর্শকদের এই খবর মেনে নেয়া ছিল খুব কষ্টের। হাজারো অনুরোধের পরেও সেই প্রতিজ্ঞা ভাঙানো যায়নি। কিন্তু কেন এই স্বেচ্ছা নির্বাসন? এ প্রশ্নের উত্তর আজো খুঁজে ফেরেন তার লাখো কোটি ভক্ত । তিনি কী অভিমান করেছেন? নাকি পারিবারিক কোন সমস্যা? তিনি কোন জটিল অসুখে ভুগছেন — এমন নানা প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর পাওয়া যায়নি। প্রতিবারই সুচিত্রা সেনের প্রতিজ্ঞার নিশ্ছিদ্র মৌনতার দেয়ালে বাধা পেয়ে ফিরে এসেছে প্রশ্নগুলো।
সুচিত্রা সেন নিজের গোপনীয়তা এমনভাবেই রক্ষা করতে চেয়েছেন যে, ২০০৫ সালে তাকে ভারত সরকার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে' প্রদানের জন্য মনোনিত করলেও তিনি অনুষ্ঠানে গিয়ে সেই পুরস্কার গ্রহণে রাজি হননি। নিজের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য তিনি সেই সম্মানজনক রাষ্ট্রীয় পুরস্কারকেও দূরে ঠেলেছিলেন।
অভিনয়ের পুরোটা কাল তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে, ছিলেন মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। তার অন্তরালের জীবন নিয়েও মানুষের মাঝে তীব্র কৌতূহল। কিন্তু নিজের পারিবারিক ও অন্তরালের জীবন নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা মেনে চলেছেন সুচিত্রা সেন। শুধু তিনিই নন তার একমাত্র মেয়ে চিত্রনায়িকা মুনমুন সেন, হালের নায়িকা দুই নাতি রিয়া ও রাইমা সেন কেউই কখনো মুখ খোলেননি। এমনকি তার একান্ত ব্যক্তিগত চিকিত্সক, হাসপাতালের নার্স, পত্রিকার সাংবাদিক কেউই তার স্বেচ্ছা নির্বাসনে যাবার বিষয়টিকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেননি। বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নায়িকার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে তার গোপনীয়তাকে রক্ষাই করেছেন সবাই।
এই স্বেচ্ছা নির্বাসনে গিয়ে সুচিত্রা সেন ব্রতী হন রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায়। শেষ জনসমক্ষে আসেন ১৯৮৯ সালে তার গুরু ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর।
এক নজরে সুচিত্রা সেন
সুচিত্রা সেনের জন্ম আমাদের এই বাংলাদেশে। তার শ্বশুড় বাড়িও ছিল ঢাকার গেণ্ডারিয়ায়। পাবনায় ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রমা দাশগুপ্ত। পরবর্তীকালে যিনি সুচিত্রা সেন পরিচয়ে বাঙালির হূদয়ে চির আসন করে নেন। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত একজন গৃহবধূ। রমা বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান এবং তৃতীয় কন্যা। বাবা-মা, এক ভাই ও তিন বোনকে সাথে নিয়ে রমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের বাড়িতে। পাবনাতেই তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষা শুরু হয়। পাবনা মহাখালী পাঠশালায় শুরু এবং পরবর্তী সময়ে পাবনা গার্লস স্কুলে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর তার আর পড়াশোনা হয়েছে বলে জানা যায়নি। পাবনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সপরিবারে কলকাতায় পাড়ি দেন। পাবনা ভোকেশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও পাবনা সরকারি বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ের বিপরীতেই সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি।
১৯৪৭ সালে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয সুচিত্রা সেনের। সুচিত্রা সেনের স্বামী দিবানাথ সেন ছিলেন গেণ্ডারিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও অভিজাত ব্যক্তিত্ব দীননাথ সেনের নাতি। চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠায় দিবানাথের বাবা আদিনাথ সেনের সহযোগিতা পেয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। ১৬ বছরের দাম্পত্যজীবন শেষে সুচিত্রা সেন ও দিবানাথ সেন আলাদা হয়ে যান।
পুরস্কার
১৯৭২ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার লাভ করেন। জনসমক্ষে না আসতে চেয়ে ২০০৫ সালে প্রত্যাখ্যান করেন দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার। ২০১২ সালে বঙ্গ বিভূষণ পান। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে পুরস্কার পান। ১৯৬৩ সালে 'সাত পাকে বাঁধা' ছবির জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫২ সালে 'শেষ কোথায়' ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। পরের বছর উত্তম কুমারের বিপরীতে 'সাড়ে চুয়াত্তর' ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। ছবিটি বক্স-অফিসে সাফল্য লাভ করে এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৫৫ সালের 'দেবদাস' ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর আদলে চিত্রায়িত চলচ্চিত্র 'আঁধি'তে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার' পুরস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং তার স্বামী চরিত্রে অভিনয় করা সঞ্জীব কুমার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
সুচিত্রা সেন অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র
সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩), ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪), অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), শাপমোচন (১৯৫৫), সবার উপরে (১৯৫৫), সাগরিকা (১৯৫৬), পথে হল দেরি (১৯৫৭), হারানো সুর (১৯৫৭), দীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯), সপ্তপদী (১৯৬১), বিপাশা (১৯৬২), চাওয়া-পাওয়া, সাত-পাকে বাঁধা (১৯৬৩), হসপিটাল, শিল্পী (১৯৬৫), ইন্দ্রাণী (১৯৫৮), রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), সূর্য তোরণ (১৯৫৮), উত্তর ফাল্গুনী (১৯৬৩) (হিন্দিতে পুনঃনির্মিত হয়েছে মমতা নামে), গৃহদাহ (১৯৬৭), ফরিয়াদ, দেবী চৌধুরানী (১৯৭৪), দত্তা (১৯৭৬), প্রণয় পাশা, প্রিয় বান্ধবী, আঁধি প্রভৃতি।
জন্ম-মৃত্যু
জন্ম ৬ এপ্রিল ১৯৩১ বাংলাদেশের পাবনায়। মৃত্যু ১৭ জানুয়ারি
২০১৪, কলকাতা। দীর্ঘ
অসুস্থতার পর গতকাল শুক্রবার কলকাতার এক হাসপাতালে
৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিয়ে ও সন্তান
বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ভাইবোনের মধ্যে সুচিত্রা ছিলেন পঞ্চম। ১৯৪৭ সালে শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে। একমাত্র কন্যা মুনমুন সেন।
প্রথম পুরস্কার
প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী হিসাবে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেত্রীর সম্মান। ১৯৭২ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার। জনসমক্ষে আসবেন না বলে ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান। ২০১২ সালে 'বঙ্গ বিভূষণ'।
প্রথম সবকিছু
প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমা 'সাত নম্বর কয়েদি'। মুক্তি পায় ১৯৫৩ সালে। প্রথম হিন্দি সিনেমা 'দেবদাস' মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালে। উত্তম কুমারের সঙ্গে প্রথম চলচ্চিত্র 'সাড়ে চুয়াত্তর' মুক্তি পায় ১৯৫৩ সালে।
শেষ অভিনয়
শেষ হিন্দি সিনেমা 'আঁধি' মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। শেষ বাংলা সিনেমা 'প্রণয় পাশা' মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে। সে বছরই সিনেমা থেকে অবসর নেন বাঙলার এই স্বপ্নের নায়িকা। একই সঙ্গে তিনি চলে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে।
শেষ জনসমক্ষে
চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেয়ার পর আর তিনি জনসমক্ষে আসেননি। ১৯৮৯-এ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর। তবে তিনি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মঠে এসেছিলেন।