প্রেম, ভালোবাসা ও শুদ্ধাচরণের দীপ জ্বেলেছিলেন সুচিত্রা সেন। রোমান্টিসিজমের যে ভেলা তিনি ভাসিয়েছিলেন সেই ভেলায় চড়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্তত তিন প্রজন্মের দর্শক। চলচ্চিত্রপ্রেমী আশি-ঊর্ধ্ব বৃদ্ধ থেকে ১৮ বছরের তরুণও তার মৃত্যুতে যেন প্রেমিকা হারিয়েছেন। এপার বাংলার মেয়ে রমার এ মহাপ্রস্থানে দুই বাংলার তরুণরাও যেন হারিয়েছেন পাশের বাড়ির মিষ্টি মেয়েকে। বাংলাদেশের এ মেয়েকে হারিয়ে আগামী দিনগুলোতে 'হারানো সুর' খুঁজে বেড়াবে 'অগ্নিপরীক্ষা'য় রাজি তরুণরা।
৮২ বছরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুচিত্রা সেন ছিলেন দুই বাংলার তিন থেকে চার প্রজন্মের প্রেমিকা। তার বিদায়ে নস্টালজিক হয়ে পড়েছেন হাল সময়ের সদ্য কৈশোরউত্তীর্ণ তরুণও। তরুণদের মতে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়তো তাকে চিরদিনের জন্য চোখের আড়াল করে ফেলল ভক্তদের কাছ থেকে; তবে তার অভিনীত চরিত্র বিপাশা, সাগরিকা, মঞ্জু, পার্বতী, দত্তারা রয়ে যাবে চির অম্লান। বাংলা চলচ্চিত্রে সুচিত্রা সেন নিজেই ইতিহাস। এ শিল্পকে দুই বাংলায় জনপ্রিয় করতে তার অসামান্য অবদান রয়েছে।
সুচিত্রা সেনের বিদায়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক জাহেদুর রহমান আরমান বলেন, 'আমার দাদার নায়িকা ছিলেন তিনি, আমার বাবারও। আর আমিতো তার চলচ্চিত্র গিলেছি আর প্রেমিকার ছবি এঁকেছি। কোনো সন্দেহ নেই, তার স্মৃতিতে নস্টালজিক থাকবো অনেকদিন।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি রিয়াজুল হক রাজু বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রকে জনপ্রিয় করার পেছনে যে কয়জনের প্রধান ভূমিকা রয়েছে, সুচিত্রা তাদের একজন। তার প্রয়াণে চলচ্চিত্রের এখন যে খুব বড় ক্ষতি হয়েছে, তা হয়তো নয়। তবে অনেকেরই প্রিয় বা 'প্রেমিকা' ছিলেন তিনি। সে হিসেবে প্রিয় মানুষের প্রস্থান বেদনাহত করবে কোটি ভক্ত হূদয়কে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ফারজানা রিমি বলেন, সুচিত্রা বাংলা চলচ্চিত্রে রোমান্টিক নায়িকার একটি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছেন। তার সময়ে তো বটেই, এখনও এই স্ট্যান্ডার্ড সমানভাবে প্রযোজ্য।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি মাহবুবুল হক ভুঁইয়া বলেন, সুচিত্রা তার কর্মে ও অবদানে ইতিহাস গড়েছেন। তিনি চলচ্চিত্রে যেভাবে রোমান্টিসিজম উপস্থাপন করেছেন সেভাবে তার সময়ে বা পরেও কেউ পারেনি। এ ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃত্। তাই প্রজন্মান্তরে তিনি নায়িকাই হয়ে থাকবেন।
আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নাহিদ জানালেন, সুচিত্রার মৃত্যুতে তার দাদা ও বাবার মন খারাপ। মন খারাপ তার নিজেরও। তাই গুরুজনদের পাশাপাশি সুচিত্রা সেনের বিদায় এমনই মন খারাপ করা শূন্যতায় ভাসিয়ে দিয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমী তরুণদের। আর এ নস্টালজিয়ার 'শেষ কোথায়', কিংবা আদৌ শেষ হবে কিনা—ভবিষ্যতের কাছে সে প্রশ্নই রয়ে গেল।
ইইউ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ে পাস হওয়া এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, 'যেসব রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসী তত্পরতা চালাচ্ছে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত।' আপনিও কি তাই মনে করেন?