স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় সঠিক পোশাকটি নির্বাচন করা প্রায়ই অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে তরুণরা এ নিয়ে সংশয়ে থাকেন। আসলে ফ্যাশনের ডামাডোলে গ্রহণযোগ্য পোশাক নির্বাচন করা একটু কঠিন বৈকি! তাই তরুণদের জন্য যথাযথ পোশাক নির্বাচনের কিছু কৌশল নিয়ে আমাদের এ আয়োজন। লিখেছেন রিয়াদ খন্দকার ও ছবি তুলেছেন তাহের মানিক
পড়াশোনার
পাশাপাশি নিজের হালকা পকেটটি একটু ভারী করার লক্ষ্যে অনিক একটি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন চাকরির জন্য এসেছে। কাজটি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় সকল গুণ থাকা সত্ত্বেও চাকরিদাতার কাছে অনিককে যোগ্য হিসেবে মনে হয়নি। এর কারণটি অনিক তাত্ক্ষণিকভাবে বুঝতে পারল না। সেখান থেকে ক্যাম্পাসে এসে কাছের বন্ধু আনিকাকে সব খুলে বলল। আনিকার কথায় বুঝা গেল, আসলে চাকরিদাতার অনিকের পোশাক-পরিচ্ছদ পছন্দ হয়নি। প্রতিদিনের মতো জিন্স আর টি-শার্ট পরেই অনিক চাকরির ইন্টারভিউতে গিয়েছে। পোশাক নিয়ে এমন অনেক ঘটনার মুখোমুখি তরুণদের হারহামেশাই পড়তে হয়। এজন্য প্রত্যেকেরই উচিত নিজেকে যথাযথভাবে অন্যের সামনে উপস্থাপন করার জন্য পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় সঠিক পোশাক পরা। তা না হলে যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি একেবারেই বেমানান হয়ে পরতে পারেন। তাই কলেজ, বিয়ের অনুষ্ঠান, ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া ও গন্তব্য অনুযায়ী পোশাক পরার পরামর্শ নিয়ে কিছু আলোচনা।
কলেজ ড্রেসকোড
কলেজের আবার ড্রেসকোড আছে নাকি? কলেজ মানে তো পুরোটাই ফাঙ্কি আর স্টাইলিশ আউটফিটের বাহার! ঠিকই, তবে তা হওয়া চাই সিম্পল। যাতে বাড়াবাড়ি মনে না হয়। আর যেসব কলেজে নির্দিষ্ট পোশাক বা ড্রেসকোড আছে, তা মানতে হবে। সপ্তাহে একদিন ক্যাজুয়াল পোশাক বা পছন্দের অন্য কোনো পোশাক পরতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ অবশ্যই জিন্স এবং এক্ষেত্রে প্রথম কথাই হলো ফিটিং। ট্রেন্ডি গ্রাফিক টি-শার্টের সঙ্গে কম্বো হিসেবে ফাটাফাটি ক্লিন কাট জিন্স। তবে হ্যাঁ, টি-শার্ট বাচাই করার সময় সতর্ক হতে হবে। তা যেন খুব ঢোলা বা খুব টাইট না হয়। মেয়েদের জন্য টি-শার্ট বা কুর্তার সঙ্গে লেগিংস, ধুতি ট্রাউজার্স দারুণ মানাবে। জামাকাপড় নিয়ে আপনিও এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। যেমন—টি-শার্টের সঙ্গে লেয়ারিং করতে পারেন হল্টার নেক টপ দিয়ে। এছাড়া আপনাকে মানিয়ে যায় এমন পোশাক আপনি পরতে পারেন।
নানা অনুষ্ঠানে
অনুষ্ঠানের আসল আনন্দ জমিয়ে সাজায়। কিন্তু সাজবেন বলে রোগা চেহারায় প্রচণ্ড ভারী, দারুণ জমকালো একখানা লেহেঙ্গা পরলে আপনাকে একটুও মানাবে না। বাঙালি বিয়ে বাড়িতে যদিও শাড়ি পরার চল বেশি, তবে এখন অন্য পোশাকও অনেকেই পরতে পছন্দ করেন। আপনার পছন্দ লেহেঙ্গা হলে তা যেন আপনাকে মানায় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ট্র্যাডিশনালের বাইরে নিজেকে সাজাতে চাইলে ফিউশন পোশাকের জুড়ি নেই। লেগিংসের সঙ্গে স্লিভলেস টপের মতো কামিজ বা স্প্যাগেটি কুর্তা মডার্ন লুক দেবে। ছেলেরা টাইট ফিটিং কটন প্যান্টের সঙ্গে শেরওয়ানি বা লম্বা কুর্তা পরতে পারেন। অনুষ্ঠান বা উত্সবে পোশাকের রং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সাদা বা কালো না পরে উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরাই ভালো।
মিশন যখন ইন্টারভিউ
কথায় আছে, ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ দ্য লাস্ট ইম্প্রেশন। সুতরাং ইন্টারভিউয়ের পোশাকটি হওয়া চাই এমন, যা একাধারে নিজের পারসোনালিটি তুলে ধরবে পাশাপাশি ইন্টারভিউয়ারের মনে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। মেয়েরা স্মার্ট ফরমাল বা সেমি ফরমাল পোশাক পরতে পারেন। যেমন—সাদা বা প্যাস্টেল রঙের শার্ট ও সলিড কালারের প্যান্ট, ফরমাল স্কার্ট এবং শার্ট কিংবা সুতির ভালো ফিটের চুড়িদার পরাই ভালো। খুব উজ্জ্বল কটকটে কিংবা ম্যাড়মেড়ে রং বাদ দিতে হবে। ছেলেদের জন্য বেস্ট হলো টু পিস বিজনেস স্যুট। রং হতে পারে গাঢ় নীল বা গ্রে। সাদামাঠা ফরমাল ট্রাউজারের বদলে স্ট্রাইপ দেওয়া প্যান্ট পরলে কিন্তু লম্বা লাগে। বেল্ট এবং জুতা যেন একই রঙের হয়। টাই-এ বড় প্রিন্ট থাকবে না, বরং সলিড কালার ভালো। চুল যেন অবশ্যই শ্যাম্পু করা থাকে। যাদের চুল একটু লম্বা, তারা ভালো করে আঁচড়িয়ে ব্যান্ড দিয়ে একটি পনি করতে পারেন। ছেলেদের অবশ্য সে রকম চিন্তা করতে হবে না। ছোট করে কেটে রাখলেই ভালো। ইন্টারভিউয়ের সময় অবশ্যই ক্লিন শেভ করে যেতে হবে। এছাড়া বন্ধুদের সাথে আড্ডা বা শপিং থেকে শুরু করে অন্যান্য পরিবেশে আপনার অবস্থান আরও স্বতস্ফূর্ত করে তুলতে আপনার পোশাক নিয়ে একটু সচেতনতাই যথেষ্ট। আর এর সাথে নিজের রুচি এবং পরিমিতিবোধ তো আছেই। সব মিলিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি হয়ে উঠুন আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী।
মডেল:রথী