
অতি উচ্চহারে আমদানি শুল্ক, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, পোর্ট, শিপিং-এর রেন্ট বৃদ্ধি এল.সি খুলতে ব্যাংকের সুদ, কাস্টমস কর্মকর্তাদের হয়রানিসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে পুরান গাড়ির ইঞ্জিনের ব্যবসার রমরমা ভাব আর নেই। এক সময় পুরান গাড়ির ইঞ্জিনের ব্যবসা বেশ জমে উঠেছিল। এখন পুরান গাড়ির ইঞ্জিন আমদানি করে আমদানিকারকরা লাভের মুখ দেখতে পান না। এ প্রসঙ্গে আলাপ হয় ব্যবসায়ী রিকন্ডিশন ইঞ্জিন এন্ড মোটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রামের পুরান গাড়ির ইঞ্জিনের আমদানিকারক আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল মনুর সাথে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে পুরান গাড়ির ইঞ্জিনের ব্যবসার সূত্রপাত ঘটে পাকিস্তান আমলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃটিশ সৈন্যদের ব্যবহূত বিভিন্ন যানবাহন নিলামে দিলে এখনকার সময় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সেই সব যানবাহন ক্রয় করেন। সেই থেকে চট্টগ্রামের ধনিয়াল পাড়ায় পুরান গাড়ির ব্যবসার সূত্রপাত ঘটে। তারপর থেকে এই এলাকায় পুরান গাড়ির ইঞ্জিন এবং পার্টসের ব্যবসা গড়ে ওঠে। পাকিস্তান আমলে পশ্চিমা ব্যবসায়ীরা এখানে বেশ প্রতাপের সাথে এসব ইঞ্জিন এবং পার্টসের ব্যবসা করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই ব্যবসা পুরোপুরি বাঙালিদের হাতে চলে আসে। বর্তমানে চট্টগ্রামের লোকেরা এই ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছে। ১৯৭৮ সালের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন পন্থায় রিকন্ডিশন ইঞ্জিন বিদেশ থেকে আসতো।
১৯৭৮ সালের পর তত্কালীন সরকারের আমলে রিকন্ডিশন ইঞ্জিন বিদেশ থেকে আমদানির অনুমতি দিলে এই ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। বর্তমানে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ হাজার রিকন্ডিশন ইঞ্জিন আমদানি করা হচ্ছে। রিকন্ডিশন ইঞ্জিনের আমদানিকারকরা রাজস্ব বাবদ সরকারি কোষাগারে প্রতিবছর এক হাজার কোটি টাকা শুল্ক দিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে বাস, ট্রাক, কার, পিকআপ, জীপের পুরান ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। এসব ইঞ্জিন ইংল্যান্ড, জাপান, সিঙ্গাপুর, দুবাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ভারত থেকে আসে। এসব ইঞ্জিন আমদানি করার পর ইঞ্জিন পার্টস ব্যবসায়ীরা সম্পূর্ণ ইঞ্জিন খুলে ফেলতে পার্টসগুলো পৃথক করে ফেলে অথবা ইঞ্জিন সম্পূর্ণ রেখে বিক্রি করেন। এই ইঞ্জিনের ব্যবসা এখন শুধু চট্টগ্রামের ধনিয়াল পাড়াতে হচ্ছে না। চট্টগ্রামের মুরাদপুর এবং ঢাকার ধোলাই খাল এলাকায় এই ব্যবসা গড়ে উঠেছে। ইসমাইল আরো বলেন, 'রিকন্ডিশন ইঞ্জিন শুধু আমাদের বাংলাদেশে ব্যবহূত হয় না। আমেরিকা, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, শ্রীলংঙ্কা, আফ্রিকা, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবহূত হচ্ছে। যে সব দেশ থেকে আমাদের দেশে রিকন্ডিশন ইঞ্জিন আমদানি করা হয় সে সব দেশের নিয়মানুযায়ী দুই বা তিন বছর পর গাড়ি নতুনভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে রেজিস্ট্রেশন ফি যা লাগে তা দিয়ে নতুন গাড়ি কেনা যায় বলে গাড়ির মালিকেরা পুরাতন গাড়ি ব্যবহার না করে নতুন গাড়ি ক্রয় করে ফেলেন। পুরান গাড়িগুলো কম দামে বিক্রি করে দেন। এসব পুরান গাড়ি ইঞ্জিন আমাদের দেশে আমদানি করা হচ্ছে। আমাদের দেশে রিকন্ডিশন ইঞ্জিন আমদানির ব্যাপারে সরকার আইন করেছে যে আমদানিকৃত পুরাতন ইঞ্জিন যেসব দেশ থেকে আমদানি করা হবে। সে সব দেশের রপ্তানিকারক এবং আন্তর্জাতিক সার্ভেয়ার কর্তৃক প্রতিটি পুরান ইঞ্জিনের আয়ু ১০ বছর পর্যন্ত হতে হবে। সে ধরনের সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
বর্তমানে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরে পুরান ইঞ্জিনের ১৫০০ দোকান রয়েছে। সারা দেশে এসব পুরান ইঞ্জিনের ১০০ থেকে ১৫০ আমদানীকারক পুরান ইঞ্জিন আমদানি করছেন। এই পুরান ইঞ্জিন ব্যবসার সাথে প্রায় ১০ হাজার লোক কর্মরত আছে। ইসমাইল আরো বলেন, দেশের পরিবহন সেক্টরকে বাঁচিয়ে রেখেছে পুরান ইঞ্জিন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্তমানে পুরান ইঞ্জিন আমদানিকারকরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে লাভের মুখতো দেখছে না শুধু লোকসান দিচ্ছে। বর্তমানে পুরান ইঞ্জিন আমদানিকারকরা শুধু ব্যবসা ঠিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবসা করে যাচ্ছেন। পুরান ইঞ্জিনের আমদানি শুল্ক ২৫% করে নেয়া হচ্ছে। এই শুল্ক কমিয়ে ৫% এ আনা হলে আমদানিকারকরা লাভের মুখ দেখতে এবং পরিবহন সেক্টরে এর বিশেষ প্রভাব পড়তো। পরিবহন ভাড়াও অনেক কমে যেতো। তাছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে কাস্টমস কর্মকর্তারা কারণে অকারণে পুরান ইঞ্জিন আমদানিকারকদের হয়রানি করার কারণে ইঞ্জিন আমদানিকারকরা চট্টগ্রামের পরিবর্তে আইসিডি কমলাপুর, ঢাকা এবং মঙ্গলা বন্দর দিয়ে ইঞ্জিন আমদানি করছেন। এতে চট্টগ্রামের ইঞ্জিন আমদানিকারকরা নানা সমস্যায় পড়ছেন।