
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর স্পৃহা বিশ্বকে সর্বদা তাড়িয়ে বেড়ায়। কত প্রবৃদ্ধি হলে প্রত্যাশিত উন্নয়ন অর্জিত হবে এ নিয়ে গবেষণারও অন্ত নেই। উন্নত বিশ্বে প্রবৃদ্ধিকে দেখা হয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার মাপকাঠি হিসেবে। আর উন্নয়নশীল বিশ্ব উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি পরিমাপের জন্য প্রবৃদ্ধিকে ব্যবহার করে। একটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অপরটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন। অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত কৃষি কাজ ও গৃহস্থালী উত্পাদনই ছিল বিশ্ব অর্থনীতির ভিত্তি। এতে উন্নয়ন-উন্মুখ বিশ্বের প্রবৃদ্ধি-স্পৃহা মেটেনি। কিছু দেশ তাই উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে নজর দেয়। সমান যোগান দিয়ে বেশি উত্পাদন পাওয়ার নেশায় মেতে উঠে তারা। এজন্য ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া শুরু হয়। যন্ত্রচালিত টেক্সটাইল মেশিন, স্টীম ইঞ্জিনসহ পানি শক্তির কার্যকর ব্যবহার, লোহা গলানোর চুল্লী, মেশিন টুলসসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়। বিশাল বিশাল পুঁজি বিনিয়োগে স্টীল, টেক্সটাইল, কয়লা খনি, তেল পরিশোধন, জাহাজ নির্মাণ, কেমিক্যালস, প্লাস্টিক প্রভৃতি খাতে ভারী শিল্প স্থাপন শুরু হয়। সামর্থ্যবান দেশগুলো শিল্পায়নে পুঁজি খাটাতে শুরু করে। তারা বিশ্বে পুঁজিবাদী দেশ হিসেবে পরিচিতি পায়। বিশ্বে ঘটে যায় শিল্প বিপ্লব। এর ফলে সব শ্রেণি-পেশার জনগণকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা সূচিত হয় এবং প্রবৃদ্ধি টেকসই হয়। শিল্পায়িত দেশগুলোতে মাথাপিছু আয় বাড়ে। ভোক্তা-চাহিদা ও সরবরাহ বাড়ে। শিল্পখাতে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে।
উত্পাদনশীলতা বাড়ানোর এই বিশ্ব প্রতিযোগিতা আজও থেমে নেই। বরং নতুন নতুন দেশ এই প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয়েছে। নিজ নিজ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতায় নিজেকে মেলে ধরছে। ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা হওয়ায় বিংশ শতাব্দীতে শিল্পায়নে আসা দেশগুলোও নতুন নতুন শিল্পপণ্য নিয়ে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে। কৃষিতে উন্নত দেশগুলো কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন করে কৃষি কাজকে লাভজনক পেশায় পরিণত করেছে। এর ফলে শিল্প, কৃষি ও সেবাখাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে। বিশ্ব জিডিপি বেড়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হারও বেড়েছে। অর্গানাইজেশন অব ইকোনোমিক ডেভলপমেন্ট, ওইসিডি'র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দশম শতাব্দী পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার ছিল শূন্য দশমিক শূূন্য এক শতাংশ। শিল্প বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত তা শূন্য দশমিক ২২ শতাংশে উন্নীত হয়। তারপর থেকে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়তে থাকে। বিংশ শতাব্দী শেষে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ২ দশমিক ২১ শতাংশে পৌঁছে। নতুন শতাব্দীর ২০০৭ পর্যন্ত বিশ্ব প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪ শতাংশে উন্নীত হয়। মন্দার কারণে ২০০৮ থেকে প্রবৃদ্ধি কিছুটা নিম্নমুখী হলেও উন্নত দেশগুলোতে মন্দা কাটতে শুরু করায় প্রবৃদ্ধি আবার বাড়তে শুরু করেছে। ২০১৩ সালে ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ২০১৪ সালে বিশ্ব ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে। তারপরও বিশ্ব থেমে নেই। উন্নত বিশ্ব আরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায়। উন্নয়নশীল বিশ্ব দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে উন্নতির পরবর্তী উচ্চতায় পৌঁছতে চায়। সেই দৌড় প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশও একটি অগ্রসরমান অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে শামিল হয়েছে। সরকার প্রবৃদ্ধি হার বর্তমানের ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে দেশটি শিল্পায়নের ওপর অধিক গুরুত্ব দেবে বলে জানিয়েছে। একেক দেশ একেক উন্নয়ন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
চীন ১৯৮০'র দশক থেকে শিল্প খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে অর্থনৈতিক সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন শুরু করে। মাত্র ৩০ বছরেই চীন, জাপান ও জার্মানীকে টপকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহত্ অর্থনীতির আসনটি দখল করেছে। যদিও আইএমএফ-এর পরিসংখ্যান অনুুযায়ী বিশ্বের সর্ববৃহত্ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ক্রয়ক্ষমতার সমতা (পিপিপি)'র ভিত্তিতে চীনের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ। তারপর আছে যথাক্রমে জাপান, জার্মানী, রাশিয়া, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশ। আর বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম। চীনের এক-তৃতীয়াংশ জিডিপি নিয়ে ভারত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ভারত চীনের প্রায় এক দশক পর ১৯৯১ সালে অর্থনৈতিক সংস্কার কাজ শুরু করে। সংস্কারের প্রথম দশকে ভারত গড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। আশির দশকে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আর নতুন সহস াব্দের প্রথম দশকে তা প্রায় ৮ শতাংশে উন্নীত হয়। বিশ্বমন্দার কারণে চলতি দশকে প্রবৃদ্ধি কমে গত বছর প্রায় ৫ শতাংশে আসলেও দেশটি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। অপরদিকে চীন সংস্কারের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে ৮ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ২০০১-এর দশকে প্রায় ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তবে বিশ্বমন্দার প্রভাব চীনেও পড়েছে। প্রতিবছরই প্রবৃদ্ধি কমছে। ২০১৩ সালে তা ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
উত্পাদন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে গিয়ে চীন, ভারত, ব্রাজিলের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলো নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। দেশগুলোতে জীবনমান বাড়ার সাথে সাথে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। এর ফলে শিল্পাঞ্চলের বাইরের নিম্নআয়ের মানুষগুলোর জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। চীনের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক প্রদেশগুলোর শ্রমজীবী মানুষগুলো শিল্পোন্নত উপকূলীয় প্রদেশগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। শিল্প-কারখানায় অধিক মজুরির চাকরি করছে। এতে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হচ্ছে। পুরো পরিবার নিয়ে ভিটেবাড়ি ছেড়ে চলেও যেতে পারছে না। কারণ, শিল্প-সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেশি। এ দুটানায় শিল্পোন্নত এলাকাগুলোতে কয়েকগুণ মজুরি বাড়ানোর পরও শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে চীন শ্রমঘন শিল্প থেকে প্রযুক্তি-নির্ভর শিল্পের দিকে ঝুুঁকছে। এর ফলে দেশটির উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত থাকলেও ধনী-গরীব বৈষম্য বাড়ছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশটি জি জিংপিং এর নেতৃত্বে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে চীন কৃষি উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছে। ভারতেও ধনী-গরীব বৈষম্য বাড়ছে। যে হারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে সেই হারে শ্রমিকের মজুরি বাড়েনি। তদুপরি অনুন্নত অঞ্চলগুলো অবহেলায়ই থেকে গেছে। প্রবৃদ্ধিও এখন তেমন হচ্ছে না। তাই ভারত নতুন পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে। ব্রাজিলের অর্থনীতিতে কিছুটা সহনীয়ভাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাই এখনও সামাজিক বৈষম্য প্রকটভাবে দেখা দেয়নি।
বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর এই দুই শতকের প্রতিযোগিতায় পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি পুরোপুরি অবহেলিত ছিল। শিল্পের জ্বালানি হিসেবে প্রথমে বৃক্ষ এবং পরে কয়লা ও পেট্রোলিয়াম যথেচ্ছভাবে ব্যবহূত হয়েছে। বিশ্ব বনাঞ্চলের প্রায় ৫০ শতাংশ উজাড় হয়েছে প্রথম ভাগেই। প্রায় এক শতক ধরে চলছে কয়লা ও তরল জ্বালানির রাজত্ব। এই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বিশ্ব প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রীন হাউস গ্যাস বায়ুমন্ডলে নির্গমন করছে। এই গ্যাসের আস্তরণ ভেদ করে ভূপৃষ্ঠের তাপ ঊর্ধ্ব আকাশে যেতে পারছে না। ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে। এতে উত্তর মেরুসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের পানির স্তর বাড়ছে। বাংলাদেশসহ সমুদ্র উপকূলীয় দেশগুলোর নিম্নাঞ্চল লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। সভ্যতা-সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুনামি, টাইফুন, সাইক্লোন প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জলোচ্ছ্বাস উপকূল ছাপিয়ে জনবসতি প্লাবিত করছে। প্রকৃতি স্বাভাবিক আচরণ করছে না। কৃষি কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ ও ভয়াবহতা বাড়ছে। নারী ও শিশুরা এর প্রধান শিকার হচ্ছে। পৃথিবীর এ মারাত্মক পরিণতির কথা ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে জাপানের কিয়োটোতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব প্রথম স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু সদস্য রাষ্ট্রগুলো এর প্রতিকারে শক্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ২০১২ পর্যন্ত ১৫ বছরের জন্য একটি দায়সারা কর্মসূচির ঘোষণার মধ্য দিয়েই সম্মেলন শেষ হয়।
জাতিসংঘ ২০০৭ সালে একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা তুলে ধরে। এতে বিশ্বের কিছুটা টনক নড়লেও বিশ্বমন্দা সব ভুল করে দেয়। উন্নত বিশ্ব নিজেদের অর্থনীতি সামলাতেই হিমশিম খায়। পরিবেশ-ভাবনা সম্পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতায় চলে যায়। এদিকে প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন নগরীতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন হচ্ছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনা, উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবেলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। যার অধিকাংশই অবাস্তবায়িত থেকে যাচ্ছে। সবুজ জ্বালানি, সবুজ প্রযুক্তি ও সবুজ অর্থনীতি গড়ার বড় বড় কথা বলা হলেও এখনও বিশ্বের মোট বিদ্যুত্ উত্পাদনের ৪১ শতাংশ কয়লা থেকে আসছে। তেল ও গ্যাস থেকে আসছে আরও ২৬ শতাংশ বিদ্যুত্। সবুজ প্রযুক্তি সহজলভ্য করার কোনো উদ্যোগ নেই।
সবুজ অর্থনীতির ধারণা শুধু স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর পণ্য বিশ্ববাণিজ্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার জন্যই ব্যবহূত হচ্ছে। যদিও কার্বন নির্গমন কমাতে উন্নত বিশ্ব কিছু চেষ্টা শুরু করেছে। কিন্তু চীন, ভারত, ব্রাজিলের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলো ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিবছরই কার্বন নির্গমন বাড়াচ্ছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, শিল্পোন্নত বিশ্ব দুই শতক ধরে ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়িয়েছে। বিনিময়ে তারা ধনী দেশে পরিণত হয়েছে। আর এর খেসারত্ দিচ্ছে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল বিশ্ব। তাই এর ক্ষতিপূরণ উন্নত বিশ্বকেই দিতে হবে। উন্নয়নশীল বিশ্ব বলছে যে তাদের কোটি কোটি মানুষের দারিদ্র্য মোচনের লক্ষ্যেই শিল্পোত্পাদন বাড়াচ্ছে। তারপরও তারা ২০২৫ সালের পর থেকে কার্বন নির্গমন কমানোর মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সবচেয়ে বেকায়দায় আছে স্বল্পোন্নত বিশ্ব। শিল্প কম বলে তাদের বিদ্যুতের তেমন চাহিদা নেই। জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদও বেশি নেই। বিশ্বের মোট কার্বন নির্গমনের মাত্র শূন্য দশমিক তিন শতাংশ তারা নির্গত করে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের বড় অংশটাই তাদের ভোগ করতে হয়।
বিশ্ব এমনি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সময়টি বাংলাদেশের জন্য অনুকূল নয়। ইতোমধ্যোই বিশ্ব্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নের ধারণা গেলানো শুরু হয়েছে। শুধু দরিদ্র হওয়ার কারণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সর্বাগ্রে এই কৌশল গ্রহণ করতে হবে। যা দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্পৃহাকে স্থিমিত করে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক পাঁচ পাশ কাটেয়েই বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক খাতগুলোতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির এই অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগিয়েই লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যেও কাজ করতে হবে। পরিবেশকে বিবেচনায় নিয়ে সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে সামগ্রিক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। তবেই লক্ষ্য পূরণ টেকসই হবে।