রাজধানীর তোপখানা রোডের এক বাসা থেকে ধর্ষণের শিকার এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম রিতু (১০)। গতকাল শনিবার দুপুরে তোপখানা রোডের ট্রপিক্যাল টাওয়ারের চতুর্থ তলার একটি বাথরুম থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ প্রথমিকভাবে ধারণা করছে শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩ যুবককে আটক করে। তারা হচ্ছে এয়ার পিস ট্রাভেলস লিমিটেড'র পিয়ন সেলিম বিশ্বাস (২৪), হোয়াইট রোজের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা (৩০) ও আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসেসের কর্মচারি নজরুল ইসলাম (২৫)। তাদেরকে পুলিশি হেফাজতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে, হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে পুরানা পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর সড়ক অবরোধ করে চার ঘন্টা ধরে বিক্ষোভ করে নিহতের স্বজনসহ স্থানীয়রা। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রায় ২ ঘন্টা ধরে সিআইডির ক্রাইম সিন টিম হত্যার আলামত সংগ্রহ করে। বিকাল চারটার দিকে শিশুটির লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহতের স্বজনরা জানান, সেগুনবাগিচার তোপখানা রোডের ২৬/১ নম্বর টিনশেড বাসায় নূরজাহান বেগম তিন মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে ভাড়ায় থাকেন। রিতু তার তিন নম্বর মেয়ে। রিতুর বাবা আমির হোসেন বছর দুই আগে মারা গেছেন। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। তোপখানা রোডে থেকেই নূরজাহান ভাতের ব্যবসা করতেন। বিভিন্ন অফিসের কর্মচারী কর্মকর্তাদের কাছে তিনি ভাত বিক্রি করতেন। ওই ভাত টিফিন ক্যারিয়ার করে অফিসে অফিসে পৌঁছে দিতেন নূরজাহান ও তার সন্তানেরা। ৪৫ তোপখানা রোডের ট্রপিক্যাল টাওয়ারের ৪র্থ তলায় অবস্থিত এয়ার পিস ট্রাভেলস লিমিটেড'র পিয়ন সেলিম বিশ্বাস, হোয়াইট রোজের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা ও আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসেসের নজরুল ইসলামসহ ৪ জনকে প্রতিদিন টিফিন ক্যারিয়ার করে ভাত দিয়ে আসতো শিশু রিতু। তারা ওই অফিসেই রাতে থাকতো। গত সোমবার দুপুরে রিতু তাদের ভাত দিয়ে আসে। সন্ধ্যায় টিফিন ক্যারিয়ার আনতে গিয়ে সে আর বাসায় ফেরেনি। তার মা নূরজাহান ও বোন মিতু ওই রাতে রিতুর খোঁজে ওই ভবনে তাদের কাছে কয়েকবার গেলে তারা জানিয়েছিলো, রিতু সন্ধ্যায় সেখানে আসেনি।
রিতুর বোন মিতু জানান, রিতুকে না পেয়ে সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজাখুঁজি করা হয়। পরে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে তারা জানতে পারেন, ট্রপিক্যাল টাওয়ারের ৪র্থ তলায় একটি শিশুর লাশ পাওয়া গেছে। তারা ছুটে গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় টয়লেটের মধ্যে রিতুর অর্ধগলিত লাশ পড়ে আছে। রিতু'র মা নূরজাহানের অভিযোগ, সোমবার সন্ধ্যায় টিফিন ক্যারিয়ার নিতে গেলে রিতু নিখোঁজ হয়। তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা আমার কোল খালি করেছে, আমি তাদের মায়ের কোল খালি দেখতে চাই। তাদের ফাঁসি চাই। বিকাল সোয়া চারটায় লাশ মর্গে নিয়ে যাওয়ার পর অবরোধ প্রত্যাহার করে বিক্ষুব্ধরা।
গতকাল ট্রপিক্যাল টাওয়ারের ৪র্থ তলায় গিয়ে দেখা গেছে, সিঁড়ির পাশেই টয়লেট। ওই ফ্লোরে এয়ার পিস ট্রাভেলস লিমিটেড, হোয়াইট রোজ ট্রাভেলস লিমিটেড, আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসেস, রাজশাহী ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস ও ঢালী ওভারসিজ লিমিটেডের অফিস। এরমেধ্যে এয়ার পিস ট্রাভেলস লিমিটেড'র পিয়ন সেলিম বিশ্বাস, হোয়াইট রোজের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা ও আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসেসের কর্মচারি নজরুল ইসলাম রাতে অফিসেই থাকতো।
এয়ার পিসের সেলস এক্সিকিউটিভ গোলাম মাসুদ জানান, সেলিম বিশ্বাসের বাড়ি মাগুরা জেলায়। তার সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। হোয়াইট রোজের মালিক মেহেদী হাসান বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তিনি অফিসে ঢুকতেই দুর্গন্ধ পান। তার কর্মচারি গোলাম মোস্তফার কাছে দুর্গন্ধের কারণ জানতে চাইলে টয়লেটে লাশ পড়ে থাকার কথা জানান। টয়লেটে গিয়ে দেখা যায়, রিতুর জমাটবাধা রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। তার শরীরের কাপড় রক্তে ভেজা ছিলো।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ- তাদের কোন শত্রু থাকার কথা নয়। শিশুটি এমন কোন অপরাধ করেনি যে তাকে হত্যার শিকার হতে হবে। পুলিশ বলছে, এটি হত্যাকাণ্ড। তবে লাশ পচে যাওয়ায় ধর্ষণের বিষয়টি ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, ধারণা করা হচ্ছে ৪/৫ দিন আগে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে টয়লেটেই হত্যা করা হতে পারে। পুলিশ এমনটি বললেও ওই ফ্লোরের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টয়লেটটি গণ টয়লেট। তবে সবসময় তালা লাগানো থাকলেও সবার কাছেই আলাদা চাবি আছে। ক্রিসেন্ট ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম জহিরুল করিম জানান, তিনি গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ওই টয়লেট ব্যবহার করেন। তিনি সেদিন কোন লাশ দেখতে পাননি। অনেকের ধারণা ওই ফ্লোরের অন্য কোথাও তাকে হত্যা করে পরে টয়লেটে নিয়ে রাখা হয়। গতকাল রাতেই শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।