টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ (৬০) দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়ায় নিজ বাসার কাছে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে ফেলে রাখে। স্থানীয়রা টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রেশারের কারণে স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হতে পারে বলে প্রথমে ধারণা করা হলেও পরে তার পিঠে গুলির ছিদ্র দেখে চিকিত্সক এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন যে, তার মৃত্যু হয়েছে দুর্বৃত্তদের গুলিতে। ফারুক আহমেদ হত্যার প্রতিবাদে আজ রবিবার অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। তবে মহাসড়ক হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়ায় নিজ বাসভবনের প্রায় দেড়শ গজ দূরে জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদকে পড়ে থাকতে দেখেন পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর শফিকুল হক শামীম। এ সময় শামীমের চিত্কারে ফারুকের পরিবারের ও আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তাকে দ্রুত টাঙ্গাইল জেলারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী নাহার আহমেদর অভিযোগ, তার স্বামীকে দলীয় লোকজনই হত্যা করেছে। হাসপাতালে চিত্কার করে স্বামী হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক রফিকুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদের পিঠে গুলির ছিদ্র পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইল থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে গুলি করেই হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ফারুক আহমদ হত্যার প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন। এতে বক্তব্য রাখেন শাহজাহান আনসারী, সুবাস চন্দ সাহা, ফারুক হোসেন মানিক, এমএ রৌফ প্রমুখ। একই দাবিতে বাসাইলে আওয়ামী লীগ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। তার আগে নেতাকর্মীরা ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের করটিয়ায় অবরোধ করে। এ সময় সড়কের উভয়পাশে যানজট সৃষ্টি হয়।
টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হুদা নবীন জানান, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ হত্যার প্রতিবাদে আজ রবিবার অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। তবে মহাসড়ক হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলমগীর খান মেনু জানান, ফারুক আহমদ হত্যার প্রতিবাদে পরবর্তীতে দলীয়ভাবে কর্মসূচি দেয়া হবে। বিকাল তিনটার দিকে ফারুক আহমদের লাশ শহীদ মিনারে রাখা হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানায়। বাদ আছর শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার নামাজে জানাজা শেষে কেন্দ ীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সংসদ সদস্য শওকত মোমেন শাহজাহান, আব্দুল বাতেন ও আমানুর রহমান খান রানাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ নেন।
ফারুক আহমদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে। বাবার চাকরিসূত্রে তিনি ছাত্র অবস্থা থেকে টাঙ্গাইলে অবস্থান করেন। শহরের কলেজপাড়ায় তার বাড়ি রয়েছে। তিনি টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মূলস্রোত পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিআরডিবির চেয়ারম্যান ও টাঙ্গাইল রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।