তিক্ততা ভুলে এখন প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট থাকব
----------------- এরশাদ
ইত্তেফাক রিপোর্ট
পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় বিশেষ দূত করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ' বিগত দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে মুছে ফেলে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এখন কাজ করতে হবে। অতীতের যত গ্লানি ভুলে গিয়ে গৌরবময় অধ্যায়কে পথ ও পাথেয় হিসাবে ধরে নিয়ে আমাদের আগামী দিনের পথ চলা শুরু করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার এই চলার পথে আমাকে যে সহযাত্রীরূপে সাথে নিয়েছেন-আমি তার মর্যাদা রক্ষা করতে সদা সচেষ্ট থাকবো। জাতির স্বার্থে এবং দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য আমি নিবেদিতভাবে কাজ করে যাবার চেষ্টা করবো।'
এরশাদ বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে নিজে কোনো ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা চাচ্ছি না। আমার সরকারি বাড়ি-গাড়িরও প্রয়োজন নেই। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে যেটুকু সুযোগ-সুবিধা আমার প্রাপ্য, সেটুকু ভোগ করেই আমি বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই। আমি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। এখন আর আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। দেশ-জাতির কল্যাণ এবং মঙ্গল সাধনই আমার জীবনের একান্ত কাম্য ও লক্ষ্য।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত এবং হানাহানির কারণে আমাদের অনেক অর্জন চাপা পড়ে যাচ্ছে। বিগত সরকার আমলের ব্যাপক অগ্রগতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরেও রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য জনগণের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়। আমার বিশ্বাস অচিরেই সেই হতাশা কেটে যাবে। কিছু পশ্চিমা মিডিয়া বাংলাদেশের নেতিবাচক বিষয়ের উপরে অধিকতর আলোকপাত করে আমাদের ইমেজ ক্ষুণ্ন করছে। কোনো কোনো মহল বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে বলেও অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে— যা কখনই এদেশে হবে না। অপপ্রচারের কবলে পড়েও দেশের ভাবমূর্তি অনেক ক্ষুণ্ন হয়েছে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার উপর গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে আমার প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে একটি আধুনিক মুসলিম প্রধান গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সু-মহান ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে পৌঁঁছে দেওয়া।
বিশেষ দূত হিসেবে কী কী করতে চান—সেটির একটি ধারণা দিয়ে এরশাদ বলেন, জনশক্তি রপ্তানি, তৈরি পোশাক শিল্প খাত, বিদেশি বিনিয়োগ, বাংলাদেশের উপর বহিঃবিশ্বের আস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা হুমকির মুখে পড়েছি। আমাদের জনশক্তি রপ্তানির বিশাল বাজার ছিল মধ্যপ্রাচ্যে। সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। আমার বিশ্বাস, সেই সম্পর্ককে আবার ফিরিয়ে আনতে পারবো। তার ফলে জনশক্তির বাজার ফিরে পাবো। বাংলাদেশের অবস্থান নেক্সট-ইলাভেন থেকে ফ্রন্টিয়ার-ফাইভ এ উন্নীত হয়েছে। অগ্রসরমান বিষয়গুলো জাতীয়ভাবে যেমন প্রচারে আসছেনা তেমনি— বহিঃবিশ্বেও জানছে না। দেশের বৃহত্ রপ্তানিখাত তৈরি পোশাক শিল্প এখন সংকটের মুখে। এখানে আমার একান্ত চেষ্টা থাকবে- বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এফডিআই বৃদ্ধি করা। বিদেশি বিনিয়োগের দিক থেকে আমরা মধ্যপ্রাচ্যকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারি। সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিশেষ ইপিজেড প্রতিষ্ঠার জন্য আমার প্রস্তাব থাকবে।
বিবৃতিতে এরশাদ আরও বলেন, আমি বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতা, উদার ধর্মীয় মনোভাব বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই। আমি বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই বাংলাদেশ একটি জঙ্গিবাদমুক্ত, সামপ্রদায়িকতামুক্ত এবং রাজনৈতিক হানাহানিমুক্ত একটি দেশ। আমি মনে করি, বাংলাদেশকে একটি আধুনিক মুসলিম প্রধান গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপ্রিয়, নিরাপদ ও সহনশীল জাতিগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করতে পারলে আমাদের জনশক্তি রপ্তানি বাড়বে, এফডিআই বাড়বে এবং দেশের অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।