সাড়ে ছয় মাসেও লিখিত পরীক্ষার ঘোষণা নেই, উদ্বেগে পরীক্ষার্থীরা
৩৪তম বিসিএস
মাহবুব রনি
৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সাড়ে ছয় মাস কেটে গেলেও লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ঠিক কবে নাগাদ এ পরীক্ষা শুরু হবে, তাও জানাতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণায় দেরি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রায় অর্ধ লক্ষ পরিক্ষার্থী। তারা বলছেন, এ পরীক্ষায় প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে ২২ জনের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সাধারণত লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি আসনের বিপরীতে ১০ জন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন। কিন্তু এবার প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়িত ফলে বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ করায় প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে। এর সাথে লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণে অতিরিক্ত সময় চলে যাওয়ায় প্রার্থীরা বেকায়দায় পড়েছেন।
পিএসসি বলছে, আদিবাসী কোটায় আবেদনকারী প্রার্থীদের একটি মামলার কারণেই লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ বলেন, কোর্টের সিদ্ধান্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। যত দ্রুত সম্ভব লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে।
পিএসসি সূত্র জানায়, দুই হাজার ৫২টি শূন্য পদের বিপরীতে ৩৪তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে পিএসসি। গত ২৪ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৮ জুলাই ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১২ হাজার ৩৩ জন উত্তীর্ণ হন। ১৪ জুলাই পুনর্মূল্যায়িত ফলে ৪৬ হাজার ২৫০ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন।
গত পাঁচটি বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়। আর তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে যেত। কিন্তু এবার ফল প্রকাশের পর ছয় মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও লিখিত পরীক্ষার তারিখই নির্ধারিত হয়নি।
এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত একজন প্রার্থী বলেন, বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্ব পেরোনো এমনিতেই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এর উপর প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার মধ্যে এত বেশি দেরি হলে চাকরি প্রার্থীদের জন্য তা দু:সহ হয়ে উঠে।
দেরি যে কারণে
৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল তৈরিতে প্রথমে (৮ জুলাই) কোটাপদ্ধতি অনুসরণ করায় এবং কোটা ও কোটামুক্তদের জন্য 'কাট নম্বর' (উত্তীর্ণের জন্য যে ন্যূনতম নম্বর নির্ধারণ করা হয়) ভিন্ন হওয়ায় কম নম্বর পেয়েও কোটাভুক্তরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। আর অপেক্ষাকৃত বেশি নম্বর পেয়েও কোটামুক্তরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এ নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে ১০ জুলাই ফল পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। এরপর ১৪ জুলাই কোটাধারী ও কোটামুক্তদের জন্য একই 'কাট নম্বর' ধরে প্রচলিত পদ্ধতিতে সংশোধিত ফল প্রকাশ করে। পুনর্মূল্যায়িত এ ফলে মোট ৪৬ হাজার ২৫০ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। তবে আদিবাসী কোটায় আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, পুনর্মূল্যায়িত ফলে প্রথমবারে উত্তীর্ণ ২৮১ জন বাদ পড়েছেন। বাদ পড়া এ প্রার্থীরা তাদেরকেও উত্তীর্ণ করাতে পিএসসিতে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনে সুরাহা না হওয়ায় প্রথম ফলে উত্তীর্ণ ৫৯ জন আবেদনকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া গত ২৮ জুলাই হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিটে প্রথম ফলে উত্তীর্ণ ২৮১ জনকে বাদ দিয়ে প্রকাশিত ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়িত ফল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে রুল চাওয়া হয়। গত ছয় মাসেও রিটটির নিষ্পত্তি হয়নি।
এ প্রসঙ্গে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছারউদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, আদিবাসীদের মামলার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। আদালতকে পিএসসির বক্তব্য জানানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই আদালত এ বিষয়ে নির্দেশনা দিবে। এজন্য আদালতের কাছে চিঠিও দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা পাওয়ার পরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পিএসসির একজন সদস্য বলেন, বিসিএসে আদিবাসীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা আছে। প্রথমবারের মূল্যায়নে তাদের জন্য সর্বনিম্ন যে কাট নম্বর রাখা হয় তাতে মোট ৫৩২ জন আদিবাসী উত্তীর্ণ হন। কিন্তু দ্বিতীয়বার সবার জন্য যে কাট নম্বর নির্ধারণ করা হয় তাতে ২৮১ জন আদিবাসী বাদ পড়েছেন। এখন যদি এই ২৮১ জন আদিবাসী নিতে হয় তাহলে কাট নম্বর অনেক কমাতে হবে। এতে পরিক্ষার্থীর সংখ্যা 'দৃষ্টিকটুভাবে' বেড়ে যাবে।