বেশ কয়েক সপ্তাহ 'ইত্তেফাকে' আমার নিয়মিত কলামটি লিখিনি। সহূদয় পাঠকদের কাছে অনুপস্থিত থাকার জন্য আমি দুঃখিত। ইত্তেফাক কর্তৃপক্ষ আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, আমার লেখায় স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে তারা আপত্তি করবেন না। সুতরাং 'ইত্তেফাকের' পাঠকদের কাছে ফিরে আসতে আমার কোনো অসুবিধা নেই এবং আমি তাতে আনন্দিত। ইত্তেফাকে আমার কলামিস্ট জীবনের হাতেখড়ি। সুতরাং এই পত্রিকাটির সঙ্গে সবসময়ই একটি নাড়ির টান অনুভব করি।
এ সপ্তাহে কি লিখবো তা ভাবছি, এমন সময় চোখে পড়লো বাংলাদেশের বৃহত্তম এনজিও প্রধান স্যার ফজলে হাসান আবেদের সাম্প্রতিক নির্বাচন সংক্রান্ত একটি মন্তব্য। তিনি বলেছেন, এই নির্বাচন বৈধ এবং অবৈধ দুইই। অর্থাত্ এই সরকারও বৈধ ও অবৈধ দুইই। এমন চমত্কার কূটনৈতিক চালাকির মন্তব্য সাম্প্রতিককালে শুনেছি বলে মনে হয় না। মনে হয় এই ব্যাপারে তিনি সতীর্থ ড. ইউনূসকেও হার মানিয়েছেন।
আমার পাঠকদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে, গত হাসিনা সরকারের উপর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শুরু করে বিএনপি'র সঙ্গে আপসের ব্যাপারে নানা ধরনের চাপ সৃষ্টির জন্য যখন আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ঢাকায় এসেছিলেন, তখন তার সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাতের জন্য একসঙ্গে যে দু'ব্যক্তি গিয়েছিলেন তারা হলেন নোবেল জয়ী ড. ইউনূস এবং ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের কাছ থেকে নাইটহুড প্রাপ্ত স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
দু'জনে একই উদ্দেশ্যে হিলারি ক্লিনটনের কাছে গিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। উদ্দেশ্যটি সফল হলে গত হাসিনা সরকারকে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্রদের নানা ধরনের কর্তৃত্ববাদী চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে হতো। হাসিনা সরকার ভয়ঙ্কর প্রতিকূলতার মধ্যেও তা করেননি। হিলারির সঙ্গে ড. ইউনূস ও স্যার আবেদের এই যুক্ত সাক্ষাত্কারের পর হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের অবস্থান দারুণভাবে প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু স্যার আবেদকে আর ড. ইউনূসের পাশে দেখা যায়নি। তার অতি সতর্ক কথাবার্তাতেও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি, হাসিনা-বিরোধী সুশীল সমাজের আন্দোলনের সময়েও তার অবস্থান ওই সুশীল সমাজের কতোটা পক্ষে!
এবারেও নতুন হাসিনা সরকারের বৈধতা অবৈধতা সম্পর্কে স্যার আবেদের মন্তব্যটি কৌতূকজনক। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-জাত সরকার একইসঙ্গে বৈধ এবং অবৈধ এই মন্তব্যটি করে স্যার আবেদ সম্ভবত: এক ঢিলে তিন পাখি বধ করেছেন। এক ঢিলে সাধারণত দুই পাখী বধ করার কথা বলা হয়। কিন্তু স্যার আবেদের কৃতিত্ব তিনি তিন পাখি বধ করেছেন। অর্থাত্ একসঙ্গে তিনি হাসিনা সরকারকে খুশি করেছেন এই বলে যে এই সরকার (নির্বাচন) বৈধ। বিএনপি-জামায়াত ও সুশীল সমাজকে খুশি করার জন্য বলেছেন এই সরকার অবৈধ। এই একই উক্তিতে আমেরিকা ও লন্ডনসহ পশ্চিমা দেশগুলোও খুশি কারণ, তারাও এই সরকারকে অবৈধ না বলে তার বৈধতা সম্পর্কে নানা ধরনের প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করছেন। স্যার আবেদের মন্তব্যে তাদের যথার্থ মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।
বাস্তবে সাংবিধানিকভাবে অনুষ্ঠিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যেমন অবৈধ নয়: তেমনি এই নির্বাচন পরবর্তী সরকারও অবৈধ নয়। দেশের এক অস্বাভাবিক সময়ে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে হয়তো গণতান্ত্রিক আনুষ্ঠানিকতার সব নিয়মকানুন মানা হয়নি। তাতে এই নির্বাচন ও সরকারকে হয়তো স্বাভাবিক (Normal) নির্বাচন ও সরকার বলা যাবে না। কিন্তু তা অবৈধ নয়। দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলে এই সরকারকেও স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক চরিত্রে ফিরে যেতে হবে। নইলে দেশের মানুষ মানবে না।
এই নির্বাচন ও সরকারের বৈধতায় প্রধান ভিত্তিই হলো দেশের মানুষের সাইলেন্ট মেজরিটি কর্তৃক এই সরকারকে মেনে নেওয়া। না মানলে তারা ৫ জানুয়ারির পরই বিদ্রোহী হতেন। রাজপথে নেমে আসতেন। যেমন তারা এসেছিলেন ১৯৯৬ সালে বিএনপির জালিয়াতির ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর খালেদা সরকারকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের জন্য। বিএনপিকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল।
২০১৪ সালে বিএনপি না পেরেছে নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনে জনসমর্থন যোগাড় করতে, না পেরেছে নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখতে। আওয়ামী লীগের ৯৬ সালের জনসমর্থিত আন্দোলনের বদলে জামায়াতের সঙ্গে মিলে দেশময় সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিএনপি আরো জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে। তার প্রমাণ নির্বাচনের পর বিএনপি যেমন ঘরবন্দি, তেমনি জামায়াতি সন্ত্রাসও সহসা স্থগিত। দেশের মানুষ হাফ ছেড়ে বেঁচেছে এবং অস্বাভাবিক অবস্থায় এই অস্বাভাবিক নির্বাচনকেই নীরব সমর্থন দ্বারা বৈধতা দিয়েছে।
এতদসত্ত্বেও আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ঢাকায় নিযুক্ত তাদের দূত মজিনা সাহেবের তরফড়ানি থামেনি। মাঝে মাঝেই তারা বলছেন, এই নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। তাহলেতো মার্কিন ভাষ্য অনুযায়ী এই সরকারের বৈধতাও প্রশ্নবোধক হয়ে যায়। ঢাকার সাংবাদিকেরা মজিনা সাহেবকে একটি কথা জিজ্ঞাসা করেন না কেন সেকথাও আমি ভাবছি। আমেরিকায় জর্জ বুশ জুনিয়রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম দফা নির্বাচনের সময়কি তার পক্ষে জনমতের প্রতিফলন ঘটেছিল? সেবার বুশ জুনিয়রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ডেমোক্র্যাট দলীয় আল গোরে। ভোটাভুটিতে কয়েকটি রাজ্যেই ফল ছিল স্পষ্টভাবে বুশের পক্ষে নয়। ইলেকট্রোনিক ভোটদান পদ্ধতিতে কারসাজি হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ফলে নির্বাচনে কে জয়ী হয়েছেন, তা ঘোষণা করা স্থগিত থাকে।
দাবি উঠেছিল, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোতে আবার ভোটাভুটির। বুশ ক্যাম্প তা চালাকির সঙ্গে এড়িয়ে যায়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার দেওয়া হয় সুপ্রিমকোর্টের জুডিসিয়ারির উপর। এই বিচারপতিদের অধিকাংশই ছিলেন বুশ জুনিয়রের পিতা বুশ সিনিয়রের প্রেসিডেন্টগিরির আমলে তার দ্বারা নিযুক্ত। তারা নির্বাচনে বুশ জয়ী হয়েছেন বলে এক বিতর্কিত রায় দেন। তখনই এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছিল। মার্কিন ভোটদাতাদের রায় এড়িয়ে বিচারপতিদের সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াকে বিতর্কিত এমনকি বৈধ নয় বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোরেকে এই নির্বাচনের রায় মেনে না নেয়ার জন্যও অনেকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আল গোরে নির্বাচনের রায় মেনে নেন এবং বলেন, মার্কিন গণতন্ত্রকে বিতর্কমুক্ত রাখা এবং তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে তিনি এই নির্বাচনে বুশের বিতর্কিত জয়লাভ মেনে নিচ্ছেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনা সাহেব তার নিজের দেশের বিতর্কিত নির্বাচনের ইতিহাস না জানেন তা নয়। কিন্তু সেই ইতিহাস চেপে রেখে তারা পরের দেশে যে নির্বাচনটি তার সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিতর্কিত নয়, তা নিয়ে চান বিতর্ক জিইয়ে রাখতে। একেই বলে বড় দেশের দূত হওয়ার আত্মম্ভরিতা।
জর্জ বুশ জুনিয়রের এই নির্বাচন বৈধ কি অবৈধ সে সম্পর্কে প্রবীণ মার্কিন বুদ্ধিজীবী (এখন প্রয়াত) গোর ভাইডেল একটি চমত্কার মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বুশ জুনিয়রের নির্বাচন বৈধ। কিন্তু একটি নর্মাল ইলেকশন (স্বাভাবিক নির্বাচন) নয়। স্বাভাবিক নির্বাচনের অনেক ফাঁকফোক তাতে রয়ে গেছে। এখন এই নির্বাচনকে স্বাভাবিকত্বদান নির্ভর করে নতুন প্রেসিডেন্টের কার্যক্রমের উপর। তিনি যদি অহেতুক যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি, জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থাগুলোর ক্রমশ উচ্ছেদ, যুদ্ধাস্ত্র ব্যবসায়ী এবং তেল ব্যবসায়ের কার্টেলের স্বার্থে আগ্রাসী বিদেশ নীতি অনুসরণ ইত্যাদি থেকে তার প্রশাসনকে মুক্ত রেখে গণতান্ত্রিক বিশ্বে আবার আমেরিকার নৈতিক নেতৃত্ব (moral leadership) পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তাহলে বুশ-প্রেসিডেন্সি সকল বিতর্কমুক্ত হবে, জনসমর্থনের জোরে একজন স্বাভাবিক নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মর্যাদা ও জনস্বীকৃতি পাবেন। আর তিনি যদি তা না পারেন, তাহলে বিতর্কিত নির্বাচনের কালোছায়াটি তাকে অবিরাম 'ধাওয়া করবে।'
আমার ধারণা, মার্কিন দার্শনিকের এই উক্তিটি বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন এবং সরকার সম্পর্কেও অনেকটা প্রযোজ্য। যদিও মার্কিন মুল্লুকে বুশ জুনিয়ার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জুডিসিয়ারির রায়ে এবং বাংলাদেশে বর্তমান সরকার নির্বাচিত হয়েছেন একটি সাধারণ নির্বাচনেই। তথাপি যে কোনো কারণে হোক প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এই নির্বাচনের স্বাভাবিকতা (Normalcy) অনেকা খর্ব হয়েছে। নির্বাচনটিকে বিতর্কিত করার সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে।
তাতে এই নির্বাচন ও সরকারকে অবৈধ বলা যাবে না। বড় জোর তার স্বাভাবিকতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে। এখন এই সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি অর্জন ও স্বাভাবিকতা অর্জন করে দেশবাসীর সাইলেন্ট মেজরিটির সরব সমর্থন আদায় করা নির্ভর করে এই সরকারের পারফরমেন্সের উপর। একথা সত্য, শেখ হাসিনার গত সরকার দেশের উন্নয়নে হাই পারফরমেন্স দেখিয়েছিল। কিন্তু গুড গভর্নেন্স বা সুশাসনের নজির প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। এবার এই সরকারকে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সুশাসনের দৃশ্যমান নজির স্থাপন করতে হবে। একমাত্র তাহলেই বর্তমান সরকার দ্রুত সকল বিতর্ক ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
শেখ হাসিনার গতবারের মন্ত্রিসভার চাইতে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা অনেক বেশি অভিজ্ঞ এবং জনগণের কাছে পরিচিত। গত মন্ত্রিসভায় অনেক সদস্যেরই পারফরমেন্স ছিল অত্যন্ত পুওর এবং তাদের বিরুদ্ধে অযোগ্যতা ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল ব্যাপক। অনেক সাবেক এমপি তাদের নিজের এবং আত্মীয়স্বজনের দুর্নীতি ও দৌরাত্ম্যে এতোটাই জনপ্রিয়তা হারিয়েছিলেন যে, তারা জনরোষের ভয়ে নিজের নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারতেন না। শেখ হাসিনাকে এবার চাবুক হাতে সরকার ও দল পরিচালনায় দায়িত্ব নিতে হবে।
মন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার ছ'মাসের মধ্যে কোনো মন্ত্রী যদি তার দায়িত্বপালনে যোগতা ও সততার পরিচয় দিতে না পারেন, তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিতে হবে। কোনো এমপি যদি ছ'মাসও তার নির্বাচন এলাকায় জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে না পারেন, তাহলে তাকে বিদায় দিয়ে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনের সর্বস্তরে দুর্নীতি দমনই যেন পায় নতুন সরকারের কাছে সর্বাধিক প্রায়োরিটি। সন্ত্রাস দমনের জন্য কেবল পুলিশ ও র্যাবের উপর নির্ভর না করে সাংস্কৃতিক ও যুব সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য কাজে লাগাতে হবে।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে পুনর্গঠিত ও শক্তিশালী করার প্রথম কাজই হবে দু'টি দলকেই টেন্ডারবাজি ও লাইসেন্সবাজি থেকে মুক্ত করা। আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায় থেকে পুনর্গঠিত করা প্রয়োজন। সর্বস্তরে কমিটি ও কাউন্সিল নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নেতৃত্বের কায়েমী স্বার্থ ভেঙে দিয়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় ও চাঙা করে তোলা প্রয়োজন। মানুষ এই সরকারের কাছে আর কিছু চায় না। চায় একটু শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপদ জীবন। বাংলার সাধারণ মানুষের চাওয়া খুব কম। তাদের এই চাওয়াটুকু মেটাতে পারলে এই সরকার সব সীমাবদ্ধতা, বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে এমন জনসমর্থন লাভ করবে, যা হবে তার গণতান্ত্রিক বৈধতার স্থায়ী গ্যারান্টি। অন্যথায় যে বিতর্ক এখন জনসমর্থনের অভাবে মাথা তুলতে পারছে না, তা আবার মাথা তুলবে এবং এই সরকারের বৈধ অস্তিত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে রাখবে।
অর্থমন্ত্রী এবার একটু সাবধান হোন। কথাবার্তায় লাগাম টানুন। পদ্মা ব্রিজের ব্যাপারে দোদুল্যমানতা ও দ্বৈত আনুগত্য পরিহার করে বিকল্প সূত্র থেকে হলেও অর্থায়নের ব্যবস্থা করুন। কেবল বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে ধরনা দিয়ে বসে থাকবেন না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রামের জন্য দুদককে পুনর্গঠিত ও শক্তিশালী করা হোক। শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, সোনালী ব্যাংক ইত্যাদি কেলেঙ্কারির নায়কদের এবার দ্রুত চিহ্নিত ও বিচারের ব্যবস্থা করা হোক। কিবরিয়া-হত্যা, ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া, সাগর-রুনি হত্যা ইত্যাদি রহস্য কেন এতোদিনেও উদ্ঘাটিত হচ্ছে না, তা আমার কাছেও এক রহস্য। এবার এমন একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হোক, যিনি হত্যা, গুম ইত্যাদির রহস্য শুধু উদ্ঘাটন নয়, তা বন্ধ করারও দক্ষতা ও যোগ্যতা দেখাবেন।
আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আমূল ঢেলে সাজানো উচিত। শুধু মার্কিন কৃপা এবং পশ্চিমা দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর না করে নবজাগ্রত এশিয়ান, আফ্রিকান ও ল্যাটিন আমেরিকার গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। ভারত এবার তার মৈত্রীর অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। চীন ও রাশিয়াও এই মৈত্রীর ব্যাপারে আন্তরিকতার প্রমাণ দেখিয়েছে। দেশের কিছু আঁতেল গোষ্ঠী যতোই কাগজের বাঘের মতো গর্জন করুক, হাসিনা সরকারের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। উন্নয়ন ও সুশাসনের লক্ষ্যে কিছু বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন দ্বারা বর্তমান সরকার যে জন আস্থাভিত্তিক বৈধতা লাভ করবেন, তা একটি স্বাভাবিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের বৈধতার সমতুল্য হবে। শেখ হাসিনা রাতের পেচকদের চিত্কারে কান না দিয়ে ভোরের পাখিকে স্বাগত জানান।
সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটবে না। এতে অর্থনীতি দীর্ঘ মেয়াদি সংকটে পড়বে।' আপনিও কি তাই মনে করেন?