তিন 'মোড়লের' প্রস্তাবের বিরোধিতার সিদ্ধান্ত
'আইসিসি পুনর্গঠন প্রস্তাবের পক্ষে বিসিবি ভোট দেবে না। বিসিবির ২৩ জানুয়ারির সভায় খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়ার কোনো রেজুলেশন পাস হয়নি। গণমাধ্যমে প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেয়ার যে সংবাদ এসেছে, তা সঠিক নয়।'
অবশেষে টনক নড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের হালফিল তিন শক্তিধর দেশ ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের 'মোড়লীপনা' নিশ্চিত করতে আনা ক্রিকেটের বিশ্ব সংস্থা আইসিসি'র সংস্কারের খসড়া প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে বিসিবি। আইসিসি পুনর্গঠনের পাশাপাশি টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়ার প্রক্রিয়া পাল্টানো নিয়ে তিন 'মোড়লের' পরিকল্পনার বিরুদ্ধে লড়বে বাংলাদেশ।
বিসিবি'র মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের জানান, আইসিসির আগামী সভায় ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের কর্মকর্তাদের তৈরি করা খসড়া প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হলে বাংলাদেশ টেস্ট খেলার অধিকার বজায় রাখতে এর বিরোধিতা করবে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জালাল ইউনুস বলেন, 'আইসিসি পুনর্গঠন প্রস্তাবের পক্ষে বিসিবি ভোট দেবে না। বিসিবির ২৩ জানুয়ারির সভায় খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়ার কোনো রেজুলেশন পাস হয়নি। গণমাধ্যমে প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেয়ার যে সংবাদ এসেছে, তা সঠিক নয়।'
ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কমপক্ষে আগামী চার বছর টেস্ট খেলার সুযোগ থাকবে না বাংলাদেশের। এই সময়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে চারদিনের ম্যাচ খেলতে হবে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের নবম ও দশম স্থানে থাকা দেশ দুটিকে। আইসিসি সভায় বিসিবি এই 'দুই ধাপের' টেস্ট পরিকল্পনার বিরোধিতা করবে বলে জানান জালাল।
গত বৃহস্পতিবার বিসিবির সভায় অন্য একটু ইস্যু নিয়ে সেদিন ভোটাভুটি হয়েছিল দাবি করলেও এই বিষয়টি জানাতে অস্বীকৃতি জানান জালাল ইউনুস। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইসিসি'র সভায় যোগ দিতে গতকালই ঢাকা ছাড়ার কথা নাজমুল হাসান পাপনের।
আগামী ২৭ থেকে ২৯ জানুয়ারি দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় আইসিসির সভায় ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ফিন্যান্স অ্যান্ড কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স কমিটির একটি 'ওয়ার্কিং গ্রুপের' তৈরি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। এই প্রস্তাবে আইসিসির রাজস্ব বন্টন মডেল, প্রশাসনিক কাঠামো ও ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে (এফটিপি) বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি র্যাঙ্কিংয়ের ৯ ও ১০ নম্বর দেশকে কন্টিনেন্টাল কাপে খেলানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিসিবির সভায় এ নিয়ে আলোচনার পর 'কৌশলী' অবস্থান নেয়ার কথা জানান সভাপতি নাজমুল হাসান। তিনি জানিয়েছিলেন, এ মাসের শেষ দিকে হতে যাওয়া আইসিসির সভায় পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা, 'এ সম্পর্কে আমাদের মনোভাব এখনই প্রকাশ করতে চাই না। প্রস্তাবটি আমাদের কাছে বেশ জটিল মনে হয়েছে। অনেক প্রশ্নের উত্তর এখানে নেই, যেগুলো আমাদের জানা দরকার।'
এই বক্তব্যের দু'দিনের মাথায় মত পাল্টে কঠোর অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিলো বিসিবি। তবে গণমাধ্যমে বিসিবির সভার বিষয়বস্তু নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে নিজেদের অবস্থান আরো পরিষ্কার করে বিসিবি।
বিবৃতিটিতে বলা হয়:
'আইসিসির অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক কমিটির একটি কার্যনির্বাহী গ্রুপের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে বিসিবির অবস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেসব বিসিবির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের একটি বড় অংশে বলা হয়েছে, ২৩ জানুয়ারি বিসিবি পরিচালকদের সভায় আইসিসির গুরুত্বপূর্ণ কিছু গঠনমূলক পরিবর্তনের পক্ষ অবলম্বন করা হয়েছে, যে পরিবর্তনগুলো অনুমোদিত হলে খেলার সুযোগ, আর্থিক সুবিধা ও পূর্ণ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিসিবি জানাতে চাইছে যে, এ ধরনের কথা পুরোপুরি অনুমানমূলক ও প্রকৃত সত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই। সভায় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বোর্ড পরিচালকদের অবহিত করা হয়েছে। খসড়াটি সতর্ক পর্যালোচনার পর প্রস্তাবের কিছু কিছু ব্যাপার বোডের কাছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক মনে হয়েছে।
অন্যদিকে কিছু কিছু অংশ নিয়ে আবার বোর্ডের জোর আপত্তি আছে, বিশেষ করে আইনগত ও সাংবিধানিক সংশ্লিষ্ট ব্যাপারগুলো এবং একটি পূর্ণ সদস্যের অধিকারের বিপরীতে যায়, সেসব ব্যাপার। বিষয়টির সংবেদনশীলতা ও গোপনীয়তার প্রতি সম্মান রেখে বিসিবি প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্তগুলো প্রকাশ করেনি।'
নিরাপত্তায় সন্তুষ্টি লঙ্কানদের
কয়েক মিনিটের জন্য থমকে গেল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আশপাশের পরিবেশ। রীতিমতো যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা। কড়া পাহারার মধ্য দিয়ে অনুশীলন শেষে বের হয়ে গেল সফরকারী লঙ্কান দল। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা শ্রীলঙ্কা দল নিরাপত্তা নিয়ে তাই গতকালই নিজেদের সন্তোষের কথা জানিয়েছে।
দলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সন্তোষ প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার ব্যবস্থাপক মাইকেল ডি জয়সা। তিনি বলেন, 'একটি দল ঘুরে গেছে। ওরা নানা জায়গায় কথা বলে গেছে। দূত, প্রধানমন্ত্রী। নিরাপত্তা খুব ভালো। আমরা সন্তুষ্ট।'