ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত তৃতীয় ওয়ানডেটিতে সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার কারণে আক্ষেপ করেছেন। তবে এরপরও তিনি পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শেষ পর্যন্ত যে টাই করা গেছেন সেজন্য সন্তুষ্ট।
ধোনি বলেন, 'আমি মনে করি আমরা ভাল ব্যাট করেছি। কিন্তু আমরা সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। এটা কিছুটা হতাশাব্যঞ্জক। তারপরও এটা ভাল ফল যা আমাদেরকে সিরিজে লড়াইয়ে রেখেছে।'
রবীন্দ্র জাদেজা অকল্যান্ডের সেডন পার্কে অনুষ্ঠিত খেলাটির শেষ ওভারে ১৭ রান করে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে সফরকারীদের টাই এনে দিতে সক্ষম হন। তাতে বিফলে যায় গাপটিলের সেঞ্চুরিটি।
নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ৩১৪ রানের বিশাল সংগ্রহের পর ইনিংসের ১৫ ওভার আগে ১৮৪ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু ৬৬ রানে অপরাজিত থাকা জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ক্যারিয়ার সেরা ৬৫ রানে সিরিজে টিকে থাকে ভারত।
দু'জন সপ্তম উইকেট জুটিতে ৫৫ বলে ৮৫ রান তোলার পর বিদায় নেন অশ্বিন। নাথান ম্যাককালামের বলে নিউজিল্যান্ডের সেঞ্চুরিয়ান মার্টিন গাপটিল একটি দর্শনীয় ক্যাচে তাকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান। এরপর টেল এন্ডারদেরকে নিয়ে জাদেজা একাই লড়াই চালিয়ে ম্যাচটি টাই করতে সমর্থ হন।
প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের পর সিরিজ নিশ্চিত করার জন্য আরেকটি ম্যাচে জয়ের দরকার নিউজিল্যান্ডের। অপরদিকে সিরিজ ড্র করতে বাকি দুই ম্যাচেই জয় পেতে হবে ভারতকে।
৬৩ রানে পাঁচ উইকেট শিকার করা অলরাউন্ডার কোরি অ্যান্ডারসন শেষ ওভারে বোলিং করতে এসে জাদেজার হাতে নাস্তানাবুদ হন। দু'টি ওয়াইড ছাড়াও একটি ছক্কা, দু'টি চার ও একটি সিঙ্গেলস নেন জাদেজা। ইনিংস শেষ হওয়ার তিন ওভার আগে জাদেজার বিরুদ্ধে কট বিহাইন্ডের আবেদন করে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু আম্পায়ার রড টার তাতে সাড়া দেননি। রিপ্লে¬তে অবশ্য জাদেজার ব্যাটে বল স্পর্শ করতে দেখা গেছে। ভারত এর আগে তৃতীয়বারের মত টস হারা নিউজিল্যান্ডকে পেস সহায়ক পিচে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায়। ইনিংসের শেষ বলে ১১১ রান করা গাপটিল আউট হলে ৩১৪ রানে থেমে যায় ব্ল্যাক ক্যাপরা।
গাপটিল ও কেন উইলিয়ামসন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৫৩ রান তোলেন। ৩৩তম ওভারে ৬৫ রান করা উইলিয়ামসন আউট হলে বড় স্কোরের আশায় নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং অর্ডারের ওপরে তুলে আনে বিগ হিটিং অ্যান্ডারসনকে। তবে তাদের পরিকল্পনা কাজে আসেনি। অ্যান্ডারসন মাত্র আট রান করে অশ্বিনের বলে সরাসরি বোল্ড আউট হন। তার পর পরই গাপটিল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (০) আউট হলে পাঁচ উইকেটে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৩০ রান।
রস টেইলর (১৮) এবং লুক রনচি (৩৮) পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেন। কিন্তু টেইলর রান আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ১৮ রানে শেষ চার উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ২৮৮ রানে ৯ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড শেষদিকে টিম সাউদির আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ৩০০ রান অতিক্রম করে।
জবাবে নেমেই ভাগ্যের সহায়তা পায় ভারত। সেকেন্ড স্লি জেসি রাইডার ওপেনার রোহিত শর্মার ক্যাচ মিস করে। ফলে নয় ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে ৬৪ রানে পৌঁছে যায় সফরকারীরা। তবে বোলিং পরিবর্তনে বেশ ভালভাবে ম্যাচে ফেরে নিউজিল্যান্ড। শিখর ধাওয়ান (২৮) ও শর্মাকে (৩৯) আউট করেন অ্যান্ডারসন। তিন বছর পর দলে ফেরা হামিশ বেনেট বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকে মাত্র ছয় রানে সাজঘরে পাঠান।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে¬ শুরুর আগে সুরেশ রায়না (৩১) এবং অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি (৫০) ভারতকে ৮৪ রানে পৌঁছে দেন। ধোনি আউট হওয়ার পর নিউজিল্যান্ড যখন ধরেই নিয়েছিল ম্যাচ তাদের নিয়ন্ত্রণে সে সময়েই ৪৫ বলে চার ছক্কা ও পাঁচটি চারে জাদেজা ভারতকে সিরিজে টিকিয়ে রাখেন। -বাসস/দ্য হিন্দু
স্কোর
নিউজিল্যান্ড
গাপটিল ক রাহানে ব জাদেজা ১১১
রাইডার ব কুমার ২০
উইলিয়ামসন ব সামি ৬৫
অ্যান্ডারসন ব অশ্বিন ৮
টেইলর রান আউট ১৭
ম্যাককালাম ক অশ্বিন ব এ্যারন ০
রনচি ক রাহানে ব জাদেজা ৩৮
ম্যাককালাম রান আউট ১
সাউদি রান আউট ২৭
ম্যাকক্লেনাঘান ক জাদেজা ব সামি ৩
বেনেট নটআউট ৩
অতিরিক্ত : (লেগবাই-১০, ওয়াইড-১১) ২১
মোট : (১০ উইকেট, ৫০ ওভার) ৩১৪
উইকেটের পতন : ১-৩৬, ২-১৮৯, ৩-১৯৮, ৪-২২৪, ৫-২৩০, ৬-২৭০, ৭-২৮০, ৮-২৮০, ৯-২৮৮, ১০-৩১৪।
বোলিং : কুমার ৯-০-৪৮-১, সামি ১০-০-৮৪-২, এরন ৭-০-৫২-১, জাদেজা ১০-০-৪৭-২, অশ্বিন ১০-০-৪৭-১, রায়না ৪-০-২৬-০।
ভারত
ধাওয়ান ক গাপটিল ব এন্ডারসন ২৮
শর্মা ক বেনেট ব এন্ডারসন ৩৯
কোহলি ক রনচি ব বেনেট ৬
রাহানে ক রনচি ব এন্ডারসন ৩
রায়না ক রনচি ব সাউদি ৩১
ধোনি ক সাউদি ব এন্ডারসন ৫০
অশ্বিন ক গাপটিল ব এন ম্যাককালাম ৬৫
জাদেজা নট আউট ৬৬
কুমার ক এন ম্যাককালাম ব বেনেট ৪
সামি ক উইলিয়ামসন ব এন্ডারসন ২
এরন নট আউট ২
অতিরিক্ত (বাই-১, লেগবাই-৩, ওয়াইড-১৪) ১৮
মোট (৫০ ওভারে, ৯ উইকেটে) ৩১৪
উইকেটের পতন : ১-৬৪, ২-৭২, ৩-৭৪, ৪-৭৯, ৫-১৪৬, ৬-১৮৪, ৭-২৬৯, ৮-২৭৫, ৯-২৯৬।
বোলিং : সাউদি ১০-০-৭৪-১, ম্যাকক্লেনাঘান ১০-০-৭৬-০, বেনেট ১০-২-৪১-২, অ্যান্ডারসন ১০-১-৬৩-৫, উইলিয়ামসন ২-০-১৭-০, ম্যাককালাম ৮-০-৩৯-১।