রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলসহ ৬ ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা উন্নত জাতের কুল চাষ করে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৭'শ হেক্টর জমিতে কুলের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চার'শ হেক্টর চাষবাস হয়েছে কেবল দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, কুল চাষ এ অঞ্চলে নিয়মিত অন্যান্য ফসল উত্পাদনের পাশাপাশি এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্থকারী ফসল। যা কৃষি ক্ষেত্রে এনে দিয়েছে নতুন বিপ্লব। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এখানকার মাটি দো-আঁশ। যা কুল চাষের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী। অপরদিকে বর্তমান সময়ে প্রচলিত বিভিন্ন ফসল চাষে আর্থিকভাবে কৃষকরা বেশি লাভবান না হওয়ায় তারা ওইসব ফসলের বিকল্প হিসাবে বেছে নিয়েছেন কুল চাষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানকার মাটি ও আবহাওয়া কুল চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বিঘা প্রতি ১৫০ থেকে ১৭০ মণ কুল উত্পাদন হয়। তাদের মতে, এ অঞ্চলের কৃষকরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানকার কুল বিদেশে রফতানি করা সম্ভব।
সরেজমিন গত শনিবার সকালে উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের কুলে ছেয়ে গেছে বাগান। চরাঞ্চলের কৃষক আশরাফুজ্জামান দোলা বলেন, বর্তমানে স্থানীয় বিভিন্ন জাতের কুল ছাড়াও উন্নত জাতের আপেল কুল, বাউকুল, তাইওয়ান ও থাইকুলের চাষ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এর মধ্যে আপেল কুল বেশি সমাদৃত। তিনি বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ, সার-বীজ আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা পেলে কুল চাষে আগামীতে আরো বিপ্লব সাধিত হবে। তিনি এ বছর ৯০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের কুল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে বলে জানান।
এদিকে সমতল এলাকার কৃষক সাবেক পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি গত বছর কুয়াশাজনিত কারণে কুল চাষে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবছর মাত্র ৬০ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। তার মতে, এ অঞ্চলের কুল অত্র অঞ্চলের চাহিদা পূরণের পাশা-পাশি প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা-সহ সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল এলাকায় ১১শ' থেকে ১৩ শ টাকা মণ দরে বিক্রয় করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলের মাটি কুল চাষের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী হওয়ায় বর্তমানে এখানকার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তার মতে, ক্যালরিসম্পন্ন কুলের গবেষণা চালিয়ে উন্নত জাত তৈরি করে ব্যাপক আবাদের ব্যবস্থা করলে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল আমের পরেই হবে কুলের স্থান। যা বিদেশে রফতানি করে অর্থনৈতিকভাবে কৃষকদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করবে।