বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব উপেক্ষা করে ৫ জানুয়ারি ভোট দিয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করায় গাইবান্ধাবাসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যতই চেষ্টা করুন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। বাংলার মাটিতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের ঠাঁই হবে না। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিকেলে গাইবান্ধা শহরের শাহ্ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ সামস-উল-আলম হিরুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুত্ উত্পাদন কমে যায়। সারের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে মানুষ গুলিতে মারা যায়। বিএনপি ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জে সার নিতে এসে গুলিতে দুই কৃষক মারা গেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়, বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়ে, সারের সংকট থাকে না। এর আগে ক্ষমতায় এসে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এবার নির্বাচিত হয়ে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার ঘোষণা দিয়েছি।
জনসভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়া, মাহাবুব আরা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের প্রতি দরদ থাকলে পাকিস্তানে চলে যান। কিন্তু এদেশের মানুষকে হত্যা করবেন না, কষ্ট দেবেন না। নির্বাচন ঠেকানোর নামে গাইবান্ধায় চার পুলিশসহ ১০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি, ১২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও পোড়ানো হয়েছে। গাইবান্ধা জেলায় ২০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। রেলব্রিজ ধ্বংস করা হয়েছে। গরু ছাগলও রক্ষা পায়নি। বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, উনি দেশের ৯৬ শতাংশ মানুষের নেত্রী। কিন্তু এতকিছু করেও তো ভোট ঠেকাতে পারলেন না। এত সহিংসতা ও তাণ্ডবের পরও দেশের ৪৫ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এই ধ্বংসযজ্ঞ নৈরাজ্যের দায়ভার বিএনপি জামায়াতকেই নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ্যে ডিগ্রী পর্যন্ত মেয়েদের উপবৃত্তি চালু করেছি। পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষা চালু হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বছরের প্রথম দিনেই বই দেয়া হয়েছে। এবছর বিএনপি-জামায়াত হরতাল অবরোধ দিয়েও সেই বই উত্সব ঠেকাতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাইবান্ধায় বিশেষ শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অঞ্চলের বেকার সমস্যার সমাধান করা হবে। অবিলম্বে গাইবান্ধার বালাসি-বাহাদুরাবাদ নৌরুটে নতুন ফেরি এনে ফেরি চলাচল শুরু করা হবে। সেখানে রেলসেতু স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ চলছে। এর ফলাফল সন্তোষজনক হলে রেলসেতু স্থাপন করা হবে। জেলার যে সব মানুষের ঘরবাড়ী নাই, তাদের প্রত্যেককে এ সরকার ঘরবাড়ী নির্মাণ করে দেবে। নদী ভাঙ্গনে দুর্গতদের পুনর্বাসন করা হবে।
এর আগে আজ শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াত শিবির সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের সহিংসতায় নিহত, আহত ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের নিহত সন্তানকে হয়তো ফেরত দিতে পারবো না। কিন্তু আগামীতে যাতে এরকম ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মানুষের জানমালের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার এ সরকার তা করবে। পরে নিহত ৩ পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা করে ৬৯টি আহত ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার এবং তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক প্রদান করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে গাইবান্ধার তুলসীঘাট হেলিপেডে এসে পৌছান। পরে সড়ক পথে বেলা সোয়া একটায় গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে আসেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাকসহ কেন্দি য় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সভাটি সঞ্চালনা করেন জেলা প্রসাশক এহসানে এলাহী।
পরে নামাজ ও মধ্যাহ্ন বিরতীর পর বেলা সাড়ে তিনটায় শহরের শাহ্ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম মাঠে সদ্য সমাপ্ত হওয়া ৮টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ১০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।