বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নিয়ে জটিলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জটিলতার নেপথ্যে রয়েছে দেশি ও বিদেশি চক্র। যারা এ দেশ থেকে পাটকলকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অন্য দেশে স্থানান্তরের কাজ করেছে। গার্মেন্টস সেক্টরে অসন্তোষ সৃষ্টি করে অর্থনীতির বড় খাত অন্য দেশে স্থানান্তরের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারাই এখন সরকারি স্বাস্থ্যখাতের পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা এদেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় গড়ে উঠছে। চিকিত্সা শিক্ষার জন্য এখন আর বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তখন ঐ চক্রটি মেডিক্যাল শিক্ষাকে বিদেশমুখী করার ষড়যন্ত্র করে আসছে। মেধার নামে এ বছর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোয় ভর্তিতে ঐ ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। গতকাল শনিবার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ মালিক পক্ষ এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলাপকালে তারা এ ধরনের তথ্য জানান।
তারা যুক্তি তুলে বলেন, গত বছর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি মেধার স্কোর ১১০ ছিল। এ বছর এটাকে ১০ বাড়িয়ে মেধার স্কোর ১২০ করা হয়। যারা করেছেন বুঝা উচিত ছিল যে, এ বছর মে মাস থেকে দেশে রাজনৈতিক সহিংস ঘটনা শুরু হয়। যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ এবং গান পাউডারসহ নানা কায়দা অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নারকীয় ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনার পর দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে। তার প্রভাব পড়েছে সকল ক্ষেত্রে। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে এর প্রভাব পড়েছে। গত বছরের মেধার ১১০ স্কোরের বিষয়টি মাথায় রেখে এ বছর ভর্তির সুযোগ দিলে অর্থনৈতিক মন্দাভাবের মধ্যে অনেক ছাত্র-ছাত্রী বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতো বলে উক্ত মালিক ও কর্মকর্তারা জানান।
আওয়ামী লীগসহ মহাজোট সরকারের শেষ সময় এসে যে ১২টি মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন দিয়েছে। এর পিছনে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের মাধ্যমে নিম্নমান ও মেডিক্যাল কলেজ করার মতো কোন অবকাঠামো নেই সেইগুলো অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে ৫৩টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেন যে, এ সকল বেসরকারি মেডিক্যাল আগে থেকে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে আসছে। কোন মেডিক্যাল কলেজে পঞ্চম বর্ষে ছাত্র-ছাত্রী। কোন কোন মেডিক্যাল কলেজ এমবিবিএস পাস করে ছাত্র-ছাত্রীরা বের হয়ে গেছে। আবার কোন কোন মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় ও ৪র্থ বর্ষের ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত। সেইসব প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি কলেজ ঐ ১২টি সদ্য দুর্নীতির মাধ্যমে অনুমোদন পাওয়ার বিষয়ে দায়ভার কেন বহন করবে। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করানোর মতো অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার হেতু কি? এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে ৫৩টির মালিক পক্ষ দাবি করেন। ১২টি অনুমোদন পাওয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বোর্ড সভায় বিএমএর ও স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের নেতা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা সই করেছেন। যে নেতা এখন ১২টি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তার ছত্রচ্ছায়ায় মন্ত্রণালয়ে ও অধিদফতরের নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য কোটি কোটি টাকার কেনাকাটার বাণিজ্য হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেই বিতর্কিত দুর্নীতিবাজ নেতা ও কর্মকর্তারা বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কি করে? এমন তথ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাগণ জানান।
গত ৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (মেডিক্যাল এডুকেশন) অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান স্বাস্থ্য সচিব বরাবর একটি চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস/ বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সর্বনিম্ন স্কোর ১০৫ করে ভর্তির সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করার সুপারিশ করে অনুরোধ জানান। তিনি সহিংস ঘটনাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ মতামত দেন বলে জানা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালে বেড সংখ্যা মাত্র ৪৪ হাজার। যা প্রতিদিন সংকটাপন্ন রোগীকে ভর্তির জন্য অপ্রতুল। প্রতিদিন সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য দেড় লাখ বেডের প্রয়োজন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বেড সংখ্যা ৪৬ হাজার। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বেড সংখ্যা ৯০ হাজার।
মেডিক্যাল শিক্ষায় অনুরূপ অবস্থা। বেসরকারি চিকিত্সা খাতকে অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় গড়ে উঠতে সরকার উদার মনে সহযোগিতার হাত বাড়ানো ব্যতীত কোন বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারের এ নীতি। এ কারণে দেশে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিত্সা-শিক্ষা বিশ্বের উন্নত দেশের ন্যায় আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠছে। এটাই ষড়যন্ত্রকারী কিংবা সরকার বিরোধীদের চোখের কাটা। এ মুহূর্তে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে মেধার স্কোরের নামে ভর্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ধেকর বেশি ভর্তি করতে পারেনি। দ্বিতীয় দফা ভর্তির সময়সীমা বাড়ানো হলে ভর্তি হতে কেউ আগ্রহী হয়নি। সরকারি মেডিক্যাল কলেজে একজন ছাত্র-ছাত্রী এমবিবিএস পর্যন্ত সরকারের ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। সেখানে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ক্ষেত্রে আলোচনা করে সমাধান করা যেতে পারে। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজকে বন্ধ করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে প্রায় শিক্ষক, ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বেকার হবে। বিশ্বের সকল দেশের ন্যায় বেসরকারি খাতকে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশের চিকিত্সা সেবার স্বার্থে টিকিয়ে থাকার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে উক্ত দুই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের সকল দেশে বেসরকারি চিকিত্সা সেবা সরকারের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এ দেশেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ হস্তক্ষেপে বেসরকারি শিক্ষা সেবা এগিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি খাত ছাড়া সরকারের পক্ষে বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিত্সা সেবা দেয়া সম্ভব নয়। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সমস্যা সমাধান দেশের স্বার্থে হওয়া উচিত বলে তিনি জানান।