জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক। প্রতিবছর তারা বাড়িয়ে দিচ্ছে কম সেচ নির্ভর রবি ফসল গম, সরিষা, মসুর ও সবজির আবাদ। পক্ষান্তরে কমিয়ে দিচ্ছে অধিক সেচ নির্ভর বোরো ধানের আবাদ।
আলাপে রাজশাহী বরেন্দ অঞ্চলের কৃষক ও কৃষিবিদরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও অধিক পরিমাণে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর দ্রুত নীচে নেমে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে সেচের পানির সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষি বিভাগ থেকেও কম সেচ নির্ভর অর্থাত্ সেচের পানি কম লাগে এমন ফসলের আবাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। ফলে কৃষকরাও সময়ের সঙ্গে তাল রেখে অধিক পরিমাণে রবি ফসল আবাদে উত্সাহিত হচ্ছে।
কৃষিবিদরা জানান, বোরো মৌসুমে ১ কেজি ধান উত্পাদনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লিটার সেচের পানির প্রয়োজন। অথচ সমপরিমাণ গম উত্পাদন করতে ধানের তিনভাগের একভাগেরও কম পানি সেচের প্রয়োজন হয়। এছাড়া ডাল, মসলা, সবজি আবাদে পানি সেচ আরো অনেক কম লাগে।
কৃষক ও কৃষিবিদরা জানান, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান আবাদের জন্য রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কিছু কিছু গভীর নলকূপ থেকেও প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যুতের দাম বাড়ায় অধিক সেচ দিয়ে আবাদ করা বোরো ধান বিক্রি করে কৃষক লোকসানের মুখে পড়ছে।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে গমের প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে, অথচ টার্গেট ধরা হয়েছিল ৩১ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে গমের আবাদ হয়েছিল ৩২ হাজার ৬৬০ হেক্টর, ২০১১ সালে ২৮ হাজার ১২০ হেক্টর, ২০১০ সালে ২৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এ হিসাবে দেখা যায়, গত ৩ বছর যাবত্ রাজশাহীতে গমের আবাদ বাড়ছে। এবার সরিষার আবাদের টার্গেট ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৮শ' হেক্টর জমিতে, প্রকৃত আবাদ হয়েছে ১৯ হয়েছে ৮শ' হেক্টর জমিতে। মসুর আবাদের টার্গেট ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ২শ' হেক্টর জমিতে, প্রকৃত আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। আলু আবাদের টার্গেট ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৪শ' হেক্টর জমিতে, প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৯শ' হেক্টর জমিতে। ছোলা আবাদের টার্গেট ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে, প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে, প্রকৃত আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৫১ হেক্টর জমিতে। একইভাবে গত বছর অধিক সেচ নির্ভর বোরো আবাদের টার্গেট ধরা হয়েছিল ৭৪ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমিতে। কিন্তু প্রকৃত আবাদ হয়েছিল ৬৮ হাজার ৯শ' হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের টার্গেট ধরা হয়েছে ৬৯ হাজার ৭৫ হেক্টর কমিতে। প্রকৃত আবাদ আরো কম হবে বলে কৃষিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ হিসাবে তারা বলেন, এবার রবি ফসল ও সবজির আবাদ যে হারে বেড়েছে, বোরোর আবাদও সেই হারে কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপ-পরিচালক, কৃষিবিদ মোঃ নুরুল আমিন এর মতামত চাওয়া হলে তিনি এখনই (মার্চের আগে) কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি বলেন, বোরোর আবাদ কম বেশি হওয়া নির্ভর করে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেচ সুবিধার উপর। সেচ সুবিধা কমলে বোরোর আবাদ কমতে বাধ্য বলেও জানান তিনি।