বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, সরকার বলছে তারা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে। পাঁচ বছর নয়, কয়দিন ক্ষমতায় থাকে দেখেন। দিন গুণতে থাকুন, সময় বেশি নেই। গতকাল রাতে গুলশানে বিএনপি কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটে কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একাংশের যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমরা এখন আর ১৮ দল নই, ১৯ দলে সমপ্রসারিত হয়েছি। আজ ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস। এই দিনেই জন্ম নিল ১৯ দল। ২০১৪ সালের মধ্যে ১৯-দলীয় জোটই শুভ বার্তা বয়ে আনবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় বের হয়েছে আওয়ামী লীগের লোকেরা কত টাকা কামিয়েছে। জনগণকে গরিব বানিয়ে তারা কোটিপতি হয়েছে। তাদের রক্তে দুর্নীতি।
বেগম জিয়া আরও বলেন, জরিপে উঠেছে বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোনো কিছু পাত্তা না দিয়ে জবরদস্তি করে নির্বাচন করেছে। তাই নির্বাচনে তাদের জোটের বাইরে কোনো দল অংশ নেয়নি। সাধারণ মানুষ ভোট দেয়নি। জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনে ৫ শতাংশ মানুষও ভোট দেয়নি। এটা নির্বাচন নয়, তামাশা। জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি সুবিধাবাদী। একেক সময় একেক দিকে কথা বলেন। কোনটা সঠিক কোনটা সঠিক নয়, তা বুঝা যায় না।
সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, জনগণের ভোটে তারা ক্ষমতায় আসেনি। তাই তারা অবৈধ। আমাদের আন্দোলন অবৈধ সরকারকে হটানোর জন্য। সরকার টিকে আছে অস্ত্র ও বন্দুকের জোরে। আর আছে যৌথবাহিনী। তারা সারাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম হাসিনার নির্দেশে তখন আওয়ামী লীগ গান পাউডার দিয়ে বাসে মানুষ হত্যা করেছে। যে দলের প্রধান বলে- একটার বদলে ১০টা লাশ পড়বে, তার হাতে দেশ নিরাপদ নয়।
খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এসব মোকাবেলা করতে হলে আপনাদের ও জনগণকে পাশে লাগবে। আওয়ামী লীগ গত পাঁচ বছর লুটপাট করেছে, এখন আবার তারা লুটপাট করবে। খালেদা জিয়া বলেন, সরকার যতই চিত্কার করুক বা মিথ্যা বলুক, আমরা তাদের মত করে কিছু বলবো না। আমরা মানুষের সঙ্গে থাকবো, দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবো। এটাই দুই দলের মধ্যে পার্থক্য।
তিনি আরও বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতেনি, হেরেছে। আমরা জিতেছি। নির্বাচনে জিততে না পেরে তারা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন করছে। ইতোমধ্যে যে কয়টা ধরা পড়েছে, সবাই তাদের লোক। আওয়ামী লীগ সীমান্ত পাড়ি দেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দল মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপির মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনের। তাই ১৯ দল হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের দল। খালেদা জিয়া বলেন, দেশ আজ মহাসংকটে। বাংলাদেশ নিয়ে মহা ষড়যন্ত্র চলছে। জনগণকে নিয়ে বিএনপি এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে। আন্দোলন সংগ্রামে আমরা সফল হবোই, যতই ষড়যন্ত্র হোক।
কাজী জাফর আহমদ বলেন, জীবন বাজি রেখে খালেদা জিয়ার পাশে থাকবো। আমাদের এক সময়ের চেয়ারম্যান এরশাদের প্রতারণার বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি। গঠনতন্ত্রের ৩৭ ধারা মোতাবেক তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি কোনো বিবৃতিও দেননি।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বেগম সারোয়ারি রহমান, মাহাবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনসহ ১৮ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।