সুমনা, আফরোজা, জুঁই আর বাবু। ওরা একটি স্কুলে পড়ে। প্রতিদিন সকালে স্কুলের ব্যাগে বই-খাতার সাথে বাড়তি একটি পোশাক নিয়ে আসতে হয় ওদের। কারণ, স্কুলে যেতে গুমানী নামে একটি নদী পার হতে হয়। সেখানে ব্রিজ নেই। খেয়া নৌকা থাকলেও পানি কমে যাওয়ায় এখন তা বন্ধ। তাই স্কুল ব্যাগে বাড়তি পোশাক আনতে হয় এসব শিক্ষার্থীদের। এরকম দুর্ভোগ শুধু ওই ছাত্র-ছাত্রীদের নয়। নদী পাড়ের সাতটি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের ধামাইচ হাট পয়েন্টে গুমানী নদী। সেখানে একটি ব্রিজের দাবি দীর্ঘদিনের। বর্ষায় সেখানে খেয়া নৌকা থাকায় কষ্ট সয়ে পারাপার হয় মানুষ। এখন পানি শুকিয়ে যাওয়ায় খেয়া নৌকাটিও চলছে না। তাই হাঁটুজলে হেঁটে পারাপার হচ্ছে মানুষ। কিন্তু মালামাল নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। স্থানীয়রা একটি ব্রিজের দাবি জানিয়ে স্থানীয় সাংসদ ইসাহক আলী তালুকদারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অনেকবার আবেদন করেও কোন কাজ হয়নি।
২৮ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা গেছে, একদল ছাত্র-ছাত্রী ভিজে নদীর তীরে উঠেছে। একদল মানুষ নদীটির উত্তর পাড়ে পার হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। একদল মানুষ মাথায় বস্তা নিয়ে পার হচ্ছে। ঘাটে খেয়া নৌকা থাকলেও পানি কমে যাওয়ায় নৌকা চলছে না। স্কুল ছাত্রী সুমনা, আফরোজা জানায়, এভাবে প্রতিদিন ভিজে স্কুলে গিয়ে পোশাক বদলে ক্লাস করি। আবার বাড়ি ফিরে একই অবস্থা। অনেক সময় পা পিছলে বই-খাতা ভিজে যায়। নওখাদা গ্রামের তপন ও জমির উদ্দিন জানান, তাদের নিজস্ব মোটরসাইকেল রয়েছে। কিন্তু বাড়িতে নিতে পারেন না। ধামাইচ হাটের কোন দোকানে রেখে যেতে হয়। তাদের দাবি সরকার যেন এখানে একটি ব্রিজ করে দেন।
স্কুল শিক্ষক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, নদীটির উত্তর পাড়ে গুরুদাসপুরের বাহাদুরপাড়াসহ তাড়াশের হেমনগর, নওখাদা, বিন্নবাড়ি, কাটাবাড়ি, সবুজপাড়া আর দক্ষিণ পাশে রয়েছে ধামাইচ হাট-বাজারসহ ধামাইচ উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক স্কুল। ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসে। ওই গ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে একটি ব্রিজের অভাবে। তাছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই গ্রামের মানুষকে গুরুদাসপুর ও তাড়াশ উপজেলাসহ দেশের অভ্যন্তরীণ জেলাগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, নদীটি দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষকে বিভক্ত করে রেখেছে। তাছাড়া ওই গ্রামের মানুষের উত্পাদিত ফসল বিক্রি করতেও বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। তাদের উত্পাদিত ফসল কষ্টে নদী পাড় করা গেলেও দাম পায় না কৃষক। ধামাইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোল্লা মুকুল হোসেন জানান, বর্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি বেশি হলেও এখন নদীতে খেয়া নৌকা না থাকায় স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে অনেক। ধামাইচ সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ জানান, নদীতে ডুবে যাওয়ার ভয়ে স্কুলে শিশু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম।
স্থানীয় সমাজসেবক আব্দুল হালিম মন্ডল জানান, নদীটির ধামাইচ পয়েন্টে ব্রিজ নির্মাণের জন্য গ্রামের হাজার হাজার মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। মাঝে-মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার এসে মাপ-জোকও নিয়ে যান। কিন্তু ব্রিজ আর হয় না। এভাবে টানা ২০ বছর ধরে চলছে ব্রিজ বাস্তবায়নের স্বপ্ন।
সগুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাইদ জানান, তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই এখানে ব্রিজ নির্মাণের দাবি উঠেছে। তবে তিনি বিরোধী দলের সমর্থিত চেয়ারম্যান হওয়ায় সরকারি দলের সাংসদ তার কথা শুনছেন না। এব্যাপারে সাংসদ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) মো. ইসাহক আলীর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাড়াশ উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টি সাংসদকে জানানো হয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।