পৃথিবীর আর সবার জন্য যেমন তেমন, ইতালির ক্লাব নাপোলির জন্য তিনি সত্যিই ছিলেন এক দেবদূত। লিগে ধুকতে থাকা এক দলকে এসে লিগ শিরোপা, কাপ শিরোপা, চ্যাম্পিয়নস লিগ সবই জিতিয়েছিলেন ডিয়াগো ম্যারাডোনা। নাপোলিও তাকে সেই সম্মানটা দিয়েছে। তার সম্মানে চিরতরে বিদায় জানিয়েছে ১০ নম্বর জার্সিকে। কিন্তু এই ভালোবাসার জায়গাটিতেই ২০০৯ সালের পর আর যেতে পারেননি ম্যারাডোনা। কারণ, তাকে কর ফাঁকির অভিযোগে খুঁজছিল দেশটির পুলিশ।
অবশেষে ম্যারাডোনার ইতালিয়ান আইনজীবী দাবি করলেন, ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে প্রায় ৩০ বছর ধরে চলা মামলায় জয় পেয়েছেন ম্যারাডোনা। এখন তিনি যে কোনো সময় মুক্ত মানুষ হিসেবেই ইতালি যেতে পারবেন।
১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ক্যারিয়ারের তুঙ্গ সময়টা ম্যারাডোনা কাটিয়েছেন ইতালিতে। বার্সেলোনার সঙ্গে গোলমালের পর এসে যোগ দিয়েছিলেন রেলিগেশন এড়াতে লড়তে থাকা নাপোলিতে। ম্যারাডোনা আসার পরই নাপোলি দুটি সিরি-এ জেতে, একটিতে দ্বিতীয় হয়। একটি ইতালিয়ান কাপ জেতে, একটিতে রানার্সআপ হয়। সবচেয়ে বড় কথা ১৯৮৯ সালে উয়েফা কাপ (বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগ) এবং ১৯৯০ সালে ইতালিয়ান সুপার কাপ জেতান ম্যারাডোনা।
অভিযোগ আছে, এই ইতালি থেকেই কোকেন সেবন শুরু করেন এবং অন্ধকার জগতে পা দিতে শুরু করেন ম্যারাডোনা। যার জেরে ১৯৯৪ সালে এসে বিশ্বকাপ চলা অবস্থায় ফুটবল থেকেই নিষিদ্ধ হয়ে যান আর্জেন্টিনার এই ফুটবল কিংবদন্তী। এরপর বেরিয়ে আসে ম্যারাডোনা ইতালিতে বিপুল পরিমাণে ট্যাক্স বকেয়া রেখে চলে এসেছেন।
তার বিরুদ্ধে ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তিনি ইতালিতে থাকা অবস্থায় যে সব ব্যবসা করেছেন, আয় করেছেন; তার কর সময়মতো শোধ করেননি। এই অভিযোগে ২০০৭ সালে তার ইতালি সফরের সময় পুলিশ ধরে বিমানবন্দরে তার কাছ থেকে বেশ কিছু অর্থ ও দুটি রোলেক্স ঘড়ি খুলে রাখে। পরে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ থাকা অবস্থায় ২০০৯ সালে এক ক্লিনিকে কর-পুলিশ গিয়ে চড়াও হয় ইতালি সফররত ম্যারাডোনার ওপর। সে যাত্রা নগদ ৪ হাজার পাউন্ড ও কানের দুল কেড়ে নিয়ে রেহাই দেয় তাকে। প্রতিবারই ম্যারাডোনা দাবি করেছেন, তার কোনো বকেয়া নেই। যদিও তার এ দাবি সংবাদ মাধ্যম কখনো বিশ্বাস করেনি।
কিন্তু ম্যারাডোনার ইতালিয়ান মামলাগুলোর পরিচালনাকারী সংস্থাটি এবার জানালো, আদালত বলেছেন, আসলেই ম্যারাডোনার বিপক্ষে পাওনা করের দাবির স্বপক্ষে কর বিভাগের হাতে তেমন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। ম্যারাডোনার বিপক্ষে কর ফাঁকির অভিযোগ ছিল ৪০ মিলিয়ন ইউরোর। ম্যারাডোনার আইনজীবী অ্যাঞ্জেলো পিসারি ইতালির সংবাদ মাধ্যম এএনএসএ কে ম্যারাডোনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, 'এখন তিনি ইতালিতে স্বাধীন মানুষ হিসেবে ফিরতে পারেন।'
এখন নিশ্চয়ই প্রিয় ক্লাবে ফেরার একটা উদ্যোগ নিতে পারেন ম্যারাডোনা!