পুরোপুরি গানের মানুষ তিনি। গানের মাধ্যমেই নিজের বৈচিত্র্যময় শিল্পীসত্তার বিকাশ ঘটিয়েছেন। বলছি শ্রোতাপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শারমিন মহসীনের কথা। এই কণ্ঠশিল্পীর দ্বিতীয় সলো অ্যালবাম শিগগিরই বাজারে আসবে। এই নতুন অ্যালবাম ও গান নিয়ে তার ভবিষ্যত্ ভাবনার কথা লিখেছেন খালেদ আহমেদ ও ছবি তুলেছেন আশীষ সেনগুপ্ত
শুদ্ধ গানের শিল্পী হওয়ার বাসনা নিয়ে ছোটবেলায় তিনি যে পথচলা শুরু করেছিলেন বর্তমানে তা আরও গতিময় হয়েছে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে গানে হাতেখড়ি হয় ওস্তাদ নারায়ণ চক্রবর্তীর কাছে। পড়াশোনার পাশাপাশি গানের সাধনায় নিজেকে সঁপে দিয়েছেন সব সময়ই। পরবর্তীতে হিন্দোল সংগীত একাডেমীতে ক্লাসিক্যাল ও নজরুল সংগীতের ওপর কোর্স করেন। সেখানে উচ্চাঙ্গ সংগীতের ওপর তালিম নেন ওস্তাদ মন্ডল দে, আকতার সাবভানী, জাকির হোসেনসহ আরও অনেকের কাছে। আর নজরুল সংগীতে ছিলেন ওস্তাদ সোহরাব হোসেন ও খালিদ হোসেন। সংগীতের সাধনায় নিজেকে আরও ঋদ্ধ করতে তিনি দোলনচাঁপা সংগীত একাডেমীতেও বিভিন্ন কোর্স করেন। সেই সাথে ক্লাসিক্যাল সংগীতে তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ সঞ্জীব দে'র কাছেও। কণ্ঠশিল্পী শারমিন মহসীনের প্রথম অ্যালবাম বাজারে আসে ১৯৯৬ সালে। 'আমি আছি, থাকব' শিরোনামের আধুনিক এই অ্যালবাম শ্রোতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়। বিশেষ করে টাইটেল সঙ 'আমি আছি, থাকব' গানটি এখন শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। সংসারের প্রয়োজনে স্বামীর সাথে আমেরিকায় প্রবাসী জীবনযাপন করতে হয় তাকে। তবুও কখনও তার মনে হয়নি সংগীতের সাধনা ছেড়ে দেবেন। সংসার সামলে ঠিকই গানের চর্চা চালিয়ে গেছেন সমানতালেই। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি মিক্সড অ্যালবামেও গান করেছেন তিনি। সেইসাথে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন দেশে বৃহত্ আয়োজনের স্টেজ শো'তে পারফর্ম করেন। এ ছাড়া দেশে বেড়াতে এসেও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে গান গেয়ে প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছেন মায়াবী কণ্ঠের এই শিল্পী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বঙ্গভবন, রেডক্রস, সার্ক, সাফ গেমস, শিল্পকলা আয়োজিত বেশকিছু অনুষ্ঠান। বর্তমানে দেশে এসে শারমিন মহসীন দ্বিতীয় সলো অ্যালবাম কাজ নিয়ে ব্যস্তসময় কাটাচ্ছেন। আধুনিক গানের এই অ্যালবামের কাজ শেষ পর্যায়ে। এতে মোট দশটি গান থাকবে। অ্যালবামের গান লিখেছেন কবির বকুল, ইবরার টিপু, নাদিম আহমেদ ও আরও অনেকে। আর গানের সুর করেছেন কবির বকুল ও ইবরার টিপুসহ আরও অনেকে। প্রকাশিতব্য অ্যালবাম প্রসঙ্গে শারমিন মহসীন বলেন, 'দীর্ঘ এক যুগ পর আমি দ্বিতীয় অ্যালবাম করছি। তাই এই অ্যালবাম নিয়ে আমার অনেক প্রত্যাশা। এতে আমি চেষ্টা করেছি প্রতিটি গানে যেন চমক থাকে। আমার বিশ্বাস অ্যালবামটি প্রকাশ হলে শ্রোতারা ভালো মানের কিছু আধুনিক গান শুনতে পাবেন।' গানের বিষয়ে সবচেয়ে কে বেশি আপনাকে অনুপ্রেরণা জোগায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ছোটবেলায় বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণাতেই গান শিখেছি। আর সংসার জীবনে স্বামীর সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা ছাড়া গান নিয়ে আমি এতদূর আসতে পারতাম না। এজন্য তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।' গান নিয়ে ভবিষ্যত্ ভাবনার কথা জানতে চাইলে শারমিন মহসীন বলেন, 'গান নিয়ে আমার কিছু পরিকল্পনা অবশ্যই আছে। আমার বড় ছেলে অনিন্দ্য ভালো গান করে ও গিটার বাজায়। তার বয়স অনেক কম হলেও আমার সাথে সে বিভিন্ন শো'তে পারফর্ম করছে। আর ছোট ছেলে আদিতও ভালো গান করে। আমি সব সময় প্রত্যাশা করি আমার পাশাপাশি দু'সন্তানই গান নিয়ে ভালো কিছু করুক। এ বিষয়ে আমি তাদের উত্সাহিত করি। সেইসাথে আমার ইচ্ছা দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু গান উপহার দেওয়া।'
শারমিন মহসীন
ডাক নাম :শর্মি
জন্ম :২২ ডিসেম্বর
বাবা :অধ্যাপক সেলিম আখ্তার
মা :হাবিবা নূরজাহান
প্রথম স্কুল :বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল
প্রিয় মানুষ :জীবন সঙ্গী মুহাম্মদ মহসীন, দুই ছেলে অনিন্দ্য ও আদিত এবং বাবা-মা।
প্রিয় গায়ক :মান্না দে, সুবীর নন্দী
প্রিয় গায়িকা :সাবিনা ইয়াসমীন, লতা মুঙ্গেশকর, হৈমন্তী শুক্লা
প্রিয় পোশাক :শাড়ি
অবসর কাটে যেভাবে :গান শুনে
সাফল্যের সংজ্ঞা :যেকোনো কাজ মনোযোগ দিয়ে শুরু করে সুন্দরভাবে শেষ করাই সাফল্য।