মূল ফিচার
ভালো মানের নাটক নির্মাণের জন্য মানানসই জুটির বিষয়টি জরুরি। মানানসই জুটি হলে অভিনয়ের রসায়নটা হয় দৃষ্টিনন্দন। বর্তমানে মোশাররফ করিম ও মৌটুসী জুটি বেঁধে অভিনয় করছেন বাংলাভিশনে প্রচারের জন্য নির্মিত মাসুদ সেজানের রচনা ও পরিচালনায় 'চলিতেছে সার্কাস' শিরোনামের নতুন একটি মেগা ধারাবাহিকে। এই দুই অভিনয়শিল্পী ও ধারাবাহিকটির আদ্যোপান্ত নিয়ে এবারের মূল ফিচার। লিখেছেন খালেদ আহমেদ ও ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর দীপু
আবুল ফজল অদ্ভুত ধরনের একজন মানুষ। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তিনি মনে করেছেন বিশাল একটা কাজ হয়েছে। তাই সন্তানদের নাম রাখেন বিখ্যাত মানুষদের নামে। তার বড় মেয়ের নাম রেখেছেন বেগম রোকেয়া, বড় ছেলে কাজী নজরুল ইসলাম, মেজো ছেলে এসএম সুলতান ও ছোট মেয়ে রুনা লায়লা। আর এসব নাম নিয়ে তাদের জীবনে এক ধরনের বিপত্তি ঘটতে থাকে। যেমন—বেগম রোকেয়া নাম নিয়ে তার মেয়ে যখন ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রি করতে গেছে, তখন স্কুল থেকে বকা দিয়েছে। না, এটা হয় নাকি। একজন বিখ্যাত মানুষের নাম দেওয়া যাবে না। তখন তার নাম রোকেয়া বেগম দেওয়া হয়। আবার বড় ছেলে কাজী নজরুল ইসলাম নাম শুনে তাকে প্রশ্ন করা হয়, 'আপনার বংশে তো কাজী নেই, তবে কেন নামের শুরুতে কাজী রাখা হয়েছে। আর এমন বিখ্যাত কবির নামে আপনি নাম রাখলে তো চলবে না।' তাই তার নাম নজরুল ইসলাম হয়ে যায়। তবে মেজো ছেলে এসএম সুলতানের নাম টিচাররা ধরতে পারেনি এবং ছোট মেয়ে রুনা লায়লার নাম নিয়েও ঝামেলা হয়নি। সন্তানরা বড় হওয়ার পর ঘটে নানা বিপত্তি। যেমন—বড় মেয়ে স্বামী বিতাড়িত হয়ে বাবার বাসায় এসেছে। তিনি শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। খুব কম কথা বলেন। যা দুই একটা কথা বলেন সেটা কী করে যেন ঘটে যায়। একবার শ্বশুরকে বলেছিলেন, 'বাবা আজ ওই জায়গায় আপনি যাবেন না।' শ্বশুর তার কথা না শুনে সেখানে গেলে অ্যাক্সিডেন্ট করে মারা যান। এই ঘটনার পর স্বামীর বাড়ির লোকজন তাকে অপয়া অপবাদ দেয় এবং তিনি সেখানে নানা যন্ত্রণায় টিকতে না পেরে বাবার বাসায় চলে আসেন। ধীরে ধীরে লোকজন তার কথা বিশ্বাস করতে শুরু করে এবং সেটা নিয়ে নানা সংকট তৈরি হয়। বড় ছেলে নজরুল ইসলাম নন এমপিওভুক্ত কলেজের টিচার। তাই তার বেতন নিয়মিত হয় না। তার স্ত্রীও কলেজের বাংলার শিক্ষক। তিনি বাসায় থাকলে হিন্দি সিরিয়াল দেখেন। তাই হিন্দি সিরিয়ালের চর্চাটা পুরো পরিবারে শুরু হয়। যেমন তিনি সোনার গহনা পড়ে শুতে যান। একজনের কথা আরেকজনকে লাগান। শাশুড়ি নেই, তাই বড় ননদের সাথে সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকে। মেজো ছেলে এসএম সুলতান এমএ করেও বেকার। চাকরির চেষ্টা করছে। কোথাও চাকরি না পেয়ে একটি রেস্টুরেন্টে বয়ের চাকরি নেয়। তার প্রেমিকা কুমকুম খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী। বাসার ছোট মেয়ে রুনা লায়লা একজন বয়স্ক লোকের সাথে প্রেম করে। যার স্ত্রী ও সন্তান আছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেও ক্রাইসিস তৈরি হয়—এ রকম গল্প নিয়ে মাসুদ সেজান নির্মাণ করছেন এক ঘণ্টার মেগা ধারাবাহিক নাটক 'চলিতেছে সার্কাস'। এর আগে ধারাবাহিক নাটক 'এইম ইন লাইফ', 'পাটি গণিত', 'পুতুল খেলা', 'লংমার্চ' ও 'রেড সিগন্যাল' নির্মাণ করে সাফল্যের পথেই হেঁটেছেন তিনি। বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল বাংলাভিশনে প্রচারের জন্য নির্মিত এই ধারাবাহিকের অভিনয়শিল্পীরা হলেন—ড. ইনামুল হক, মোশাররফ করিম, মৌটুসী বিশ্বাস, রিফাত চৌধুরী, শামীমা নাজনীন, আব্দুল্লাহ রানা, মুনিরা মিঠু, সাজ্জাদ রেজা, রোবেনা রেজা জুঁই, তারিক স্বপন, জয়রাজ, স্নিগ্ধা মুমিনসহ অনেকে। বর্তমানে উত্তরায় অবস্থিত মাসুদ সেজানের নিজস্ব শুটিং হাউস 'পার্বণ' এবং আশপাশের বিভিন্ন লোকেশনে নাটকটির একটানা শুটিং চলছে। এই নাটক প্রসঙ্গে অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, 'আমি 'লংমার্চ' ও 'রেড সিগন্যাল'-এ অভিনয় করেছিলাম। এই নাটকেও অভিনয় করছি। এই তিন নাটকেই অভিনয়ের সূত্রে এতটুকু বলতে পারি 'চলিতেছে সার্কাস' 'রেড সিগন্যাল'-এর জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।' এখানে নিজের চরিত্র সম্পর্কে মোশাররফ করিম বলেন, 'এখানে আমি এসএম সুলতান চরিত্রে অভিনয় করেছি। এটা একটি পারিবারিক নাটক। নাটকে আমার বাবা সন্তানদের জন্ম দিয়ে মনে করেছেন তিনি বিশাল সৃষ্টি করেছেন। তাই সবার বড় বড় নাম হওয়া উচিত। সে কারণে সন্তানদের নাম রেখেছেন বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে। আমার চরিত্রটি বোহিমিয়ান যুবকের। যাদের ভালোবাসতে ভালো লাগে, বিয়ে করতে ভালো লাগে না। সব মিলিয়ে নাটকে আমার চরিত্রটি অনেক মজার। এই চরিত্রে খোলা হাওয়া আছে। সেই সাথে এখানে অভিনয়ের জায়গাও আছে। সেই দিক বিবেচনা করে এ চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে আমি আনন্দিত।' এই ধারাবাহিকে মৌটুসী কুমকুম চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই নাটক প্রসঙ্গে মৌটুসী বলেন, 'আমি মফস্বল থেকে ঢাকায় এসেছি। আমি খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই এবং নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য সবকিছুই করতে রাজি। আমার বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন মোশরারফ করিম। তার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক। আমি যেহেতু উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তাই তার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নানা টানাপোড়েন শুরু হয়।' সহশিল্পী সম্পর্কে তিনি বলেন, 'মোশাররফ করিম হচ্ছে খুব ভালো একজন অভিনেতা। তিনি সহশিল্পীদের সাথে সুন্দরভাবে
মানিয়ে নিতে পারেন। তিনি রিহার্সেল থেকেই ক্যারেক্টার হয়ে ওঠেন। অভিনয়ের সময় খুব কো-অপারেটিভ। আসলেই তিনি সত্যিকারের অভিনেতা।' উল্লেখ্য, 'চলিতেছে সার্কাস' খুব শিগগিরি বাংলাভিশনে প্রচার শুরু হবে।
দর্শকনন্দিত সফল দুটি ধারাবাহিক নাটক 'লংমার্চ' এবং 'রেড সিগন্যাল'-এর পর 'চলিতেছে সার্কাস' ধারাবাহিকের বিষয় ভাবনা সম্পর্কে নাট্যকার ও নির্মাতা মাসুদ সেজান বলেন, 'সার্কাস এখন টিকিট কেটে শুধুমাত্র প্যান্ডেলে বসে উপভোগ করার জিনিস নয়, আমাদের চারপাশেই নানা ধরনের সার্কাস চলছে। আমরা শুধু দেখছি তা-ই নয়, নিজেরাও কখন যে সঙ সেজে সার্কাসের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছি, টের পাচ্ছি না। এই সার্বিক চিত্রটিই আমি একটি পরিবারের এবং আশপাশের কয়েকজন মানুষকে নিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করব।' তিনি বলেন, 'লং মার্চ' ও 'রেডসিগন্যাল' দেখে আমার যে দর্শক তৈরি হয়েছে, তারা এই নাটকের গল্প, নির্মাণ দেখে মুগ্ধ হবেন বলে আমি আশা করছি। সেই দর্শকরাও গল্পটা সুন্দরভাবেই গ্রহণ করবে বলে আমার বিশ্বাস।' অভিনেতা-অভিনেতাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমার টিম নিয়েই কাজ করছি। যাদের সাথে আমার মানসিক সমঝোতা আছে। আশা করি সবাই নিজেদের চরিত্রে ভালো করবে।' মাসুদ সেজান আরও বলেন, 'আগের দুটো ধারাবাহিকের চেয়ে এটার প্রেজেন্টেশনে ভিন্নতা আছে। সেগুলো অফিসকেন্দ্রিক ছিল। আর এটা পরিবারকেন্দ্রিক নাটক। আমার অন্যান্য নাটকের মতোই এতে হিউমার থাকবে, স্যাটায়ার থাকবে। সর্বোপরি জীবনবোধের অনুষঙ্গ হিসেবে চারপাশের চেনা মানুষ, চেনা সংকট আর অচেনা সম্ভাবনার এই নাটকটি দর্শকের ভালো লাগবে। সেইসাথে নাটক নিয়ে আমার চেষ্টা থাকে ভিন্নতার ছোঁয়া দেওয়া। আমি চেষ্টা করেছি আমার অন্য নাটকগুলো থেকে এই নাটকে নতুন কিছু করতে।'