একটা টুর্নামেন্টের ছক কিভাবে উল্টে যায় তা গতকালকের ম্যাচ থেকেই বোঝা যেতে পারে। প্রথম ৫ ম্যাচে একটি মাত্র জয় নিয়ে যে চিটাগং কিংস বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় আসর থেকে ছিটকেই পড়েছিল, তারাই গতকাল নিশ্চিত করে ফেললো সেমিফাইনাল। গতকাল বুধবার, দিনের প্রথম ম্যাচে দুরন্ত রাজশাহীকে ৩৩ রানে হারালো চিটাগং। আর এই পরাজয়ে প্রথমদিকে টগবগ করতে থাকা রাজশাহীর বিদায় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেল।
এই পরাজয়ের পরও গাণিতিক হিসাবে স্বপ্ন দেখতে পারে রাজশাহী। তাদের পয়েন্ট ১২ ম্যাচে ১০। রংপুরের পয়েন্টও সমান। তবে তাদের এখনো একটা ম্যাচ বাকি। শেষ ম্যাচে রংপুর জয় পেলে রাজশাহীকে ছিটকে দিয়ে সরাসরি সেমিফাইনালে চলে যাবে। এমনকি রংপুর হেরেই ভালো রানরেটের সুবাদে সেমিতে যেতে পারে। কারণ, নেট রানরেটে এখনো রংপুরের চেয়ে পিছিয়ে রাজশাহী। তবে রংপুর যদি নিজেদের শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে হেরে রানরেটে পেছনে পড়ে যায়, তাহলে রাজশাহী সেমিফাইনালে যেতে পারে। তাদেরকে এখন মাঠের বাইরে বসে প্রার্থনা করতে হবে।
অথচ এবারের বিপিএলে রাজশাহী ভালোই শুরু করেছিল। মাঝে হঠাত্ পথ হারিয়ে ফেলেছে তারা। অনেকে মনে করছেন, এই পথ হারানোর পেছনে খেলোয়াড়দের পাওনা জটিলতা একটা ভূমিকা রেখেছে। এবারের বিপিএলে যে ক'টি ফ্রাঞ্চাইজির খেলোয়াড়দের পাওনা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল তার মধ্যে রাজশাহী অন্যতম। এই ঘটনাগুলো ম্যাচগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা অনেকের। কিন্তু কাল খেলা শেষে এসব ঘটনাকে দূরে ঠেলতে চাইলেন দলের অধিনায়ক চামারা কাপুগেদারা, 'আসলে খেলোয়াড়দের পারিশ্রামিকের বিষয়টি খেলারই একটা অংশ। আমার মনে হয় না, এর প্রভাব মাঠে পড়েছে।'
গতকাল ম্যাচটাও জয়ের মতো করে শুরু করেছিল রাজশাহী। চিটাগং কিংসের ১৯৩ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে দুই ওপেনার চার্লস কভেন্ট্রি ও সায়মন ক্যাটিচ ঝড়ো শুরু করেন। দুই ছয়ে ১৫ বলে ২৪ রান করে কভেন্ট্রি প্রতিপক্ষের শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি ক্যাটিচও ধীরে ধীরে প্রতিপক্ষের বোলিং লাইনআপকে তছনছ করে ভালো হুংকারও দিয়েছিলেন (৩৯ বলে ৫৩)। কিন্তু ইনিংসের শেষটা ওত ভালো করতে পারেননি মিডল অর্ডাররা। ফলে মাত্র ১৬০ রানেই থমকে গেল তাদের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত শেষটা ভালো না হওয়া নিয়ে হতাশাই ব্যক্ত করেছেন দলের অধিনায়ক কাপুগেদারা, 'আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি কিন্তু হার ঠেকাতে পারিনি। ভালো শুরু হয়েছে কিন্তু শেষটা সেভাবে হয়নি।'
বিপিএলের শুরু থেকে দুরন্ত রাজশাহী বিতর্ক ছড়িয়েছে। খেলোয়াড়দের পারিশ্রামিক নিয়ে বিসিবির সাথে তাদের একপ্রকার নাটক সৃষ্টি হয়েছে। অধিনায়কত্ব নিয়েও তাদের রয়েছে রম্য গল্প। কখনো জহুরুল, কখনো তামিম ইকবাল, কখনো ক্যাটিচ আবার কখনো কাপুগেদারা। এসব কারণে বিপিএলে খেলার মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরেই বেশি আলোচনায় ছিল দুরন্ত রাজশাহীর নাম।
ঠিক এই অবস্থায় শুরুতে ছিল চিটাগং। এখন তারা বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। কালকের জয়ে ১১ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে তারা; চতুর্থ দল হিসাবে হলেও সেমিতে যাবে তারা, কালকের ম্যাচটাই তাদের গুছিয়ে ওঠার ভালো প্রমাণ।
৫ রানে প্রথম উইকেট হারালেও জেসন রয়, ব্রেন্ডন টেলর ও রায়ান ডোশেটের ব্যাটিংয়ে বড় স্কোর পায় চট্টগ্রাম। জেসন রয়ের দুর্ভাগ্য। শেষ ওভার পর্যন্ত তার রান ছিল ৯২; ২০ ওভার পরও তার রান ৯২; ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত রইলেন তিনি! শেষ ওভারে ডোশেটের কারণে ব্যাট করারই সুযোগ পাননি। জেসনের ৫৫ বলে চার ছয়ে ৯২ রানের ইনিংসটিই চট্টগ্রামের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। সাথে দাসকেটের ঝড়ো ২৯ বলে ৬৫ রান তো আছেই। তাতেই চিটাগংয়ের রান হয়েছে ১৯৩।
গত ম্যাচের ভিলেনে পরিণত হওয়া রুবেল হোসেন কাল দলকে হতাশ করেননি। দুই উইকেট পেয়েছেন, সাথে শেষের ওভারগুলো দারুণ বল করেছেন। কাল ম্যাচ শেষে রুবেলও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, 'গত ম্যাচে ভালো বল করতে পারিনি। স্লগ ওভারগুলো করা খুবই কঠিন। আমি ইনজুরিতে ছিলাম, তাই স্লগ ওভারের প্রস্তুতি নিতে পারিনি। আমি খুশি, আজ (কাল) ভালো বল করতে পেরেছি।'
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং কিংস-২০ ওভারে ১৯৩/৩ (রয় অপ: ৯২, দাসকেট ৬৫, টেইলর ৩০, মনির ১/৩০)।
দুরন্ত রাজশাহী-২০ ওভারে ১৬০/৬ (ক্যাটিচ ৫৩, মুনাভিরা ৩৫, জিয়া ২৬, কভেন্ট্রি ২৪, টেইট ২/৩৫, রুবেল ২/২৩)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জেসন রয়। ফল: চিটাগং কিংস জয়ী ৩৩ রানে।