দীর্ঘ অপেক্ষার পর আবারো ঘরে এসেছে আফ্রিকান শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। ১৯ বছর পর ষোল কোটি নাইজেরিয়ানকে আনন্দের সাগরে যারা ভাসিয়েছেন বীরোচিত সংবর্ধনাই তো তাদের প্রাপ্য! প্রাপ্য সম্মানটা দিতে একটু ভুল করলো না নাইজেরিয়ানরা। আফ্রিকান নেশন্স কাপের ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরার পর রীতিমতো উচ্ছ্বাসের বন্যায় ভেসে গেছেন নাইজেরিয়ার কোচ ও খেলোয়াড়রা।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিমানটি যখন এয়ারপোর্টের রানওয়ে স্পর্শ করলো; ড্রামের গর্জন আর হাজারো মানুষের গগনবিদারি উল্লাসধ্বনিতে আবুজাহ বিমানবন্দর তখন প্রকম্পিত। কোচ-খেলোয়াড়দের এর পরের গন্তব্য ছিল নাইজেরিয়ার জাতীয় স্টেডিয়াম; যেখানে হল মূল সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। হাজার দশেক মানুষের ভিড় ঠেলে মাইল কয়েকের সেই দূরত্ব পেরোতে সময় লাগল অনেকক্ষণ।
রং বেরঙের সাজ পোশাক আর হাতে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার সমর্থক। খেলোয়াড়রা মাঠে প্রবেশের সাথে সাথে তাদের উল্লাস উঠল তুঙ্গে। সমর্থকদের এমন ভালবাসায় আবেগাপ্লুত খেলোয়াড়রাও। ট্রফি নিয়ে দলের মার্চপাস্টের সময় অধিনায়ক সেপ ইয়োবো সাংবাদিকদের বলেন, 'এখানে আমি যা দেখছি তাতে আমি অভিভূত। আমার মনে পড়ে না আগে কখনো আমাদের দল এ ধরনের কোন অভ্যর্থনা পেয়েছে কিনা। এই কাপটা জয়ের অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ।'
দেশবাসীর সঙ্গে শিরোপা জয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করার পর সন্ধ্যায় দলটি দেশের প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক প্রীতিভোজে যোগ দেয়। পুরোদিন জুড়েই আয়োজনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন নাইজেরিয়ার কোচ স্টিফেন কেশি। সকার সিটি স্টেডিয়ামে বুরকিনা ফাসোকে ১-০ গোলে হারিয়ে নাইজেরিয়া যখন ভাসে শিরোপা জয়ের আনন্দে; কেশি তখন নাম লেখান ইতিহাসে। ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে গড়েন কোচ এবং খেলোয়াড় হিসেবে নেশন্স কাপের শিরোপা জয়ের অনন্য রেকর্ড। তবে দেশের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই কিনা জয়োত্সব শেষ হওয়ার আগেই ইঙ্গিত দেন নাইজেরিয়ার ফুটবল ফেডারেশনের সাথে মতানৈক্যের কারণে কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন তিনি।
তবে রাজধানী আবুজায় নামার পর বলেন মত পরিবর্তনের জন্য তাকে অনুরোধ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, 'এমন বেশ কিছু ব্যাপার ছিল যেগুলো নিয়ে আমি খুশি হতে পারিনি। তবে সেগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করারও সুযোগ ছিল। আলোচনার পর আমি দলে আমার অবস্থানের কথা ভেবেছি এবং কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
বিগত কয়েক বছর ধরে খাতা-কলমে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট হিসেবে মাঠে নামলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছিল না। আর এবারের আসরে তারা গিয়েছিল ফেভারিটের তকমা ছাড়াই। বড় কিছু স্বপ্ন দেখছিলেন না খোদ নাইজেরিয়ার সমর্থকরাই। তাই এই হঠাত্ সাফল্যেই হয়তো নাইজেরীয়দের খুশীর মাত্রা ছাড়িয়েছে বলে ভাবছেন সবাই। ১৯৮০ সালে তারা প্রথমবারের মতো আফ্রিকান শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদ পায়। আর কেশির নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার সাফল্য আসে ১৯৯৪ সালে।
এই শিরোপার ফলে নাইজেরিয়া আগামী জুনে ব্রাজিলে কনফেডারেশন্স কাপে খেলার সুযোগ পাবে। স্বাগতিক ব্রাজিলের পাশাপাশি এখানে আরও খেলবে ইউরো এবং বিশ্বকাপ জয়ী স্পেন, ওসেনিয়া অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন তাহিতিসহ মোট ৮টি দেশ।