উত্তরাধুনিকতার জোয়ারে জীবন বেগ পেলেও আবেগ আর পুরোনো আমলের রীতিতে ঘরবন্দি থাকে না। মনের ঘরে আজ এ উঁকি দেয় তো কাল ও। মনও পাগলা ঘোড়া। সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে এদিক-সেদিক দৌড়ে বেড়ায়। এই অমোঘ সত্য সবার বেলাতেই ঘটে অল্পবিস্তর। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মিডিয়ার মানুষগুলোর দুর্ভাগ্য, দিনের চব্বিশ ঘণ্টাই সংবাদ অনুসন্ধানী চোখগুলো তাদের দিকে তাক করে থাকে বলেই সেই খুঁটিনাটি সত্যগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার আর উপায় থাকে না। সৃষ্টি হয় নানা চটকদার গসিপ আর গালগল্প। এতসব গালগল্পের ভেতরেও কিছু প্রেমকাব্য যে রচনা হয় না তা নয়। এ নিয়ে লিখেছেন প্রাঞ্জল সেলিম
প্রেম যুগলের নাম বলতে গেলে সাম্প্রতিক সময়ের নিরিখে প্রথমেই যে যুগলের নাম চোখে ভাসে তারা হলেন অভিনেতা হ্যাভিয়ার বার্দেম আর লাখো পুরুষের আরাধ্য পেনেলোপি ক্রুজ। ২০০৭ সালে 'ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনা' ছবিটির শুটিংয়ের ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমের পদ্য রচনা শুরু হয় তাদের হাতে। এদিকে ২০০৫ সালের 'মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ' ছবিটির কথা ভুলে যাননি নিশ্চয়ই। ছবিটিতে দম্পতি হিসেবে ব্র্যাড পিট আর অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে যে দর্শকই শুধু সাদরে বরণ করেছেন তা নয়, বরং নিজেদের পছন্দের তালিকাতেও লুফে তুলেছেন একে অপরকে। সে সময় জেনিফার অ্যানিস্টোনের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে ব্র্যাড পিট নতুন প্রেমাধ্যায় শুরু করেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সঙ্গে। জুটির গুজবটা শুরু থেকেই চাউর হলেও ২০০৬ পর্যন্ত পুরো মুখে স্কচটেপ সেঁটে রেখেছিলেন ব্র্যাড আর অ্যাঞ্জেলিনা দু'জনই। ১৯৮৭-তে 'দ্য এক্সপার্ট' ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে কেলি প্রিস্টনের প্রেমের ফাঁদে পা দেন জন ট্রাভোল্টা। চার বছর চুটিয়ে প্রেম করে যখন বুঝতে পারলেন যে, এ সম্পর্কটা নির্ঘাত সময়ের মোহ নয়, তখনই বিয়ের বন্ধনে বাঁধলেন একে অন্যকে। তবে মজার বিষয় হলো একবার নয়, দু'বার। একবার প্যারিসে। কিন্তু প্যারিসে বিয়েটির আইনি বৈধতা নিয়ে সংশয় থাকায় আবারও ফ্লোরিডা এসে বিয়ের মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হয় এই জুটিকে। একটা সময় ব্র্যাড পিট আর বেন অ্যাফ্লেককে ঘিরে গিনেথ প্যালেট্রোর অনেক প্রেমগাথা লেখা হলেও বেন কণ্ঠশিল্পী ক্রিস মার্টিনের মাঝেই খুঁজে পেলেন তার ভালোবাসার শেষ আশ্রয়। ২০০৩-এ বিয়ে করে দুই সন্তানকে নিয়ে নির্বিবাদে সুখসময় কাটাচ্ছেন তারা। বিয়ে-পূর্ববর্তী প্রেমাধ্যায়কে এক বছরের বেশি দীর্ঘায়িত করতে দেননি টম ক্রুজ-কেটি হোমস জুটি। সম্পর্কের এক বছরের মাথায় ২০০৬-এ নভেম্বরে ইতালির দুর্গে প্রেমের সুখসমাপ্তি বিয়ের বাঁধনে বাঁধেন নিজেদের। তবে সময়ের মারপ্যাঁচে ধোপে টিকেনি এই দাম্পত্যজীবন। এখন তারা ডিভোর্সী। এদিকে 'লেমন স্কাই' ছবিতে কাজ করার সুবাদে কেইরা সেজউইকের সঙ্গে পরিচয় কেভিন বেকনের। সেই প্রেমের পরিসমাপ্তিতে সেই ১৯৮৮ সাল থেকে বিবাহোত্তর প্রেম চালিয়ে যাচ্ছেন চুটিয়ে। শুধু যে সিনেমার পর্দার আড়ালে প্রেম তাই নয়। ২০০২-এর গোল্ডেন গ্লোবের আসরে হ্যারিসন ফোর্ডের সঙ্গে পরিচয় অভিনেত্রী ক্যালিস্টা ফ্লোকহার্টের। সেই পরিচয় থেকে প্রণয় আর পরিণতিতে শুভ পরিণয় ২০১০-এ 'কাউবয় অ্যান্ড এলিয়েন' ছবির শুটিং চলাকালে। তবে হালের সবচেয়ে আলোচিত প্রেমকথনের কথা বললে সেই তালিকায় হয়তোবা সবার আগেই উঠে আসবে 'টুইলাইট' খ্যাত জুটি রবার্ট প্যাটিনসন আর ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টের কথা। যদিও প্রেমিকার পরকীয়ায় জড়ানোতে নিজেকে প্রেম থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন প্যাটিনসন, তবে সবভুল বোঝাবুঝির ছুটি দিয়ে বেশ ভালোই মাস্তিতে আছেন দুজনে। ২০০৮-এ 'টুইলাইট'-এর প্রথম পর্বের শুটিংয়ের পরপরই শুরু হয় তাদের প্রেমপর্ব, চলছে আজ অবধি। অস্কারজয়ী মাইকেল ডগলাস আর ক্যাথরিন জেটা জোন্সের ভালোবাসার বাঁধনটা এতই শক্ত, হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই লাভবার্ড জুটিকে টলায় কারও সাধ্যি নেই। সেই '৯৯ সাল থেকে একত্রে পথচলা শুরু করে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন ২০০০ সালে। রুপালি পর্দার মানুষদের এই পর্দার আড়ালের প্রেমোপাখ্যান বলতে শুরু করলে বিশাল একটা গদ্য হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে, যেখানে এক নিমিষেই চলে আসবে বেন অ্যাফ্লেক-জেনিফার গার্নার, উইল স্মিথ-পিঙ্কেট স্মিথ, পপস্টার মারিয়া ক্যারি-অভিনেতা নিক ক্যানন, মেগান ফক্স-অস্টিন গ্রিন, মেলানি গ্রিফিথ-অ্যান্টোনিও ব্যান্ডারাস, টম হ্যাঙ্কস-রিটা উইলসন জুটির কথা। জে জি-বিওন্সে, সারাহ জেসিকা পার্কার মেথ্যু ব্রডরিক, ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম-মশলাকন্যা ভিক্টোরিয়া অ্যাডামস, হালের ক্রেজ জাস্টিন বিবার-সেলেনা গোমেজ। সব মিলিয়ে বললে সবাই প্রেমের যমুনায় নৌকো বাইছেন নিজের মতো করে, আপন ছন্দে, আপন লয়ে। ভালোবাসার সঙ্গীটি যেই হোক না কেন, সমীকরণের আদলটা কিন্তু সেই একই, অ্যাডাম আর ইভের সেই শিখিয়ে যাওয়া সূত্রেই। যার শেষ কথা 'ভালোবাসা-জয়তু'।