ভালোবাসা—শব্দটি এতটাই মধুর যে বারবার শুনলেও শোনার তৃষ্ণা মেটে না। বরাবরের মতো বছর ঘুরে এই দিনটি আসে এই পৃথিবীর সকল মানুষকে মনে করিয়ে দিতে যে, কতটা ভালোবাসি আমরা পরস্পরকে। আমাদের কাছে ভালোবাসা দিবস কিন্তু শুধু একটা দিবস নয় বরং তা আমাদের বসন্ত দিনের যাত্রা শুরুর দ্বিতীয় ক্ষণ। পহেলা ফাল্গুনের চেতনাই আমাদের ভালোবাসা দিবসের সূচনার গল্প। ১৪ ফেব্রুয়ারি শুধু বৈশ্বিক উদযাপনে আমাদের সমর্পণ মাত্র। তাই নিয়ে লিখেছেন
বিশ্বব্যাপী চিরন্তন ভালোবাসা প্রকাশের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে। তরুণ প্রজন্মের কাছে এ দিনটি খুব কাঙ্ক্ষিত। অনেকে বছরের শুরুতেই ডায়েরির পাতায় বিশেষভাবে চিহ্নিত করে রাখে এ দিনটি। প্রেমিক প্রেমিকাকে, প্রেমিকা প্রেমিককে বিশেষ কোনো উপহার দিতে ভুলে না। খ্রিস্ট ধর্মযাজক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম থেকে এ দিবসের নামকরণ হলেও এখন সার্বজনীন ভালোবাসার দিবস হিসেবে পালন করা হয় এই দিনটি। এখন আর শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা নয়, মা-বাবা-ভাই-বোন-বন্ধু সকলের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দেশে দেশে এই দিনে ভালোবাসা প্রকাশের নানা রকমফের রয়েছে। ইদানীং বিভিন্ন উত্সব-পার্বণে উপহার আদান-প্রদানের ফ্যাশন ভাবনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভ্যালেন্টাইন ডে'ও। ভালোবাসা দিবসকে উপজীব্য করে ফ্যাশন হাউসগুলো করেছে ভালোবাসা দিবসের বিশেষ আয়োজনে। ভালোবাসার রঙ কী—ভাবলেই মনে আসে হূদয় নামক অশরীর-কাল্পনিক আকারের একটি বস্তু, যার রং লাল। কল্পনায় ভালোবাসার রং তেমনটাই ভাবা হয়। আবার ভালোবাসার উদারতাকে সাগরের গভীর নীলের সমার্থক ভাবনায় নীলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আর তাই ভ্যালেন্টাইন ফ্যাশনে লাল, নীলসহ উজ্জ্বল রংকে প্রাধান্য দিয়েছে ফ্যাশন হাউসগুলো। শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, শীতের শাল ইত্যাদি সব পোশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভালোবাসার সমার্থক নানান মোটিফ।
যেমন দিনটি
'কেউ বলে ভালোবাসা দিবস কেউবা অন্য কিছু, আমি বলি ভালোবেসে যাও নেই তার কোনো পিছু'—বসন্তের ২য় দিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ দিনটি ভালোবাসার দিন, ভালো লাগার দিন, প্রিয়জনকে নতুন করে ভালোবাসা নিবেদনের দিন। সারা দুনিয়ার মানুষ পরস্পরকে ভালোবাসবে। স্বামী ভালোবাসবে স্ত্রীকে, স্ত্রী ভালোবাসবে স্বামীকে, প্রিয় ভালোবাসবে প্রিয়াকে, প্রিয়া তার ভালোবাসা উজাড় করে দিবে প্রিয়জনের জন্য, সন্তান তার পিতাকে ভালোবাসবে, পিতা তার প্রাণ উজাড় করে দেবেন সন্তানের জন্য। সবাই ভালোবাসার জালে ঢেকে দেয় সবাইকে। যেখানে থাকবে না ব্যক্তিগত হানাহানি, দলে দলে বিরোধ, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে দাঙ্গা আর এক রাষ্ট্রের ওপর অন্য রাষ্ট্রের নোংরা দখলবাজি। মূলত বিশ্বজুড়ে হূদ্যতা সৃষ্টির দিন এই ভালোবাসা দিবস।
হাতে লাল গোলাপ, চোখে আনন্দময় আগামীর স্বপ্ন। মনে আনন্দ-উত্তেজনা। হাতে হাত রেখে বাকিটা জীবন কাটানোর প্রত্যয়। ভালোবাসা আর প্রেমের চাদরে ঢেকে থাকবে বলে কত শত পরিকল্পনা। সুন্দর জীবনের জন্য ভালোবাসা। সুখী জীবনের জন্যও ভালোবাসা। এই তো পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের চাওয়া।
সাজসজ্জায় দিনটি যেমন
ভালোবাসার দিনটিতে সাজ এখন আর একই ঢংয়ে সীমাবদ্ধ নেই। যেমন ফুল শুধু খোঁপার জন্য নয়, চুলের নানা রকম স্টাইলের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন ফুল ও ফুলের মালা ব্যবহার করা হচ্ছে হাতে, কপালে, পায়ে। দিনটিকে বরণ করতে একটু অন্য রকম সাজে সবাই তৈরি হতে চান নিজস্ব স্টাইলে। যেমন অনেকেই চুল খোলা রাখতে পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে এক পাশে ক্লিপ আটকে তার ওপর ফুল গুঁজে দিতে পারেন। অথবা কানের পাশ দিয়ে হালকাভাবে গুঁজে দিতে পারেন কয়েকটি ফুল। ফুল বড় হলে একটি, ছোট হলে তিন-চারটি। চাইলে সামনের দিকের কিছুটা চুল ব্যাককোম্ব করে নিতে পারেন। পেছনে চুল আটকানোর জায়গাটিতে আটকে দিতে পারেন পছন্দের ফুল। দুই পাশ থেকে চুল পেঁচিয়ে এনেও (টুইস্ট) পুরো চুল খোলা রাখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দুল ও মেকআপের সঙ্গে মিলিয়ে সঠিক জায়গায় ফুলটিকে আটকে নিন।
হালকা অথবা আঁটসাঁট করে খোঁপাও করে নিতে পারেন। খোঁপার চারপাশ দিয়ে মালা না পেঁচিয়ে একটু অন্যভাবেও পরতে পারেন। খোঁপার চারপাশ দিয়ে পরপর ছোট ফুল গেঁথে নিন অথবা একটি বড় ফুল খোঁপা ও কানের মধ্যে আটকে নিন। অথবা বেণিতেও ফুল আটকে তৈরি করতে পারেন ভিন্ন লুক। সামনে দুই পাশ থেকে চুল টুইস্ট করে টেনে পেছনে নিয়ে আটকে নিন ক্লিপ দিয়ে। এবার সাধারণভাবে বেণি করে মাঝেমধ্যে ফুল আটকে নিতে পারেন। হলুদ গাঁদা মন কাড়বেই। কিন্তু অন্য ফুলগুলোও নজর কাড়তে কম যায় না। মেরুন, হলুদ, সাদা, নীল রঙের চন্দ্রমল্লিকা, ক্যালানডুলা ফুলগুলোর চাহিদাও এবার অনেক বেশি। এ ছাড়া হলুদ-লাল রংয়ের চায়নিজ চেরিও তাল মেলাচ্ছে অন্যদের সঙ্গে। বসন্ত উত্সবে আরও পাবেন গ্ল্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবারা। এ ছাড়া গাঁদা, গোলাপ আর অর্কিড তো থাকছেই।
নানা আয়োজনে ফ্যাশন হাউসগুলো
ভালোবাসার বাংলা গান-কবিতা নিয়ে শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া এবং বিশেষ ডিজাইনের যুগল টিশার্ট ছাড়াও মগ ও কার্ড ইত্যাদি নিয়ে ফ্যাশন হাউসগুলো সেজেছে ভালোবাসার রংয়ে। এ ছাড়া ভালোবাসার গানের নানান ধরনের সিডি সংকলনও পাওয়া যাবে এসব ফ্যাশন হাউসগুলোতে। সুতরাং বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ক্রেতারা সহজেই প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন এসব উপহার সামগ্রীর মাধ্যমে। প্রতিবারের মতো এবারও অঞ্জন'স ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে পোশাক ডিজাইন করেছে। পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া পাওয়া যাবে এই আয়োজনে। তরুণ-তরুণীদেরকে প্রাধান্য দিয়ে পোশাক করা হয়েছে, পাশাপাশি সব বয়সীদের জন্য পোশাক রয়েছে। পিংক, ব্রাউন, লাল, বেগুনিসহ বিভিন্ন রংয়ে পোশাকগুলো রাঙানো হয়েছে এবারের অঞ্জন'সের শোরুম। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য যুগল পোশাক এনেছে অন্যান্য ফ্যাশন হাউজগুলোও।