অবশেষে ২৬ মাস পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। এ বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় দক্ষিণ সিটির ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুনর্বিন্যাস ঘটেছে। ঢাকার জেলা প্রশাসক এবং সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা এ বিরোধ নিষ্পত্তি করে প্রতিবেদন দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয় এখন এটি লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেটিং নিয়ে গেজেট প্রকাশ করবে।
এরফলে দুই বছরের বেশি সময় ঝুলে থাকা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পথে বাধা আপাতত দূর হল। তবে বসুন্ধরা ও বনশ্রী আবাসিক এলাকা নতুন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে নতুন ঝামেলা তৈরি হলে নির্বাচন আবারও অনিশ্চিত হতে পারে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মনজুর হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে দেয়া সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তার প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের হাতে এসেছে। মন্ত্রী তা দেখার পর লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের মতামত নিয়ে গেজেট করা হবে এবং তা কমিশনকে জানিয়ে দেয়া হবে। এই প্রক্রিয়া শেষ করতে এক সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক গতকাল ইত্তেফাককে বলেছেন, সীমানা সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কমিশনকে অবহিত করলেই নির্বাচনের যাবতীয় আয়োজন শুরু করার মতো প্রস্তুতি কমিশনের আছে। তবে উপজেলা নির্বাচন শেষ হবে আগামী মার্চ মাসে। পরবর্তী কোন সুবিধাজনক সময়ে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কমিশন গ্রহণ করবে বলে তিনি জানান।
১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট চালু হওয়ার পর অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়েছে দু'বার। আওয়ামী লীগের মো. হানিফ প্রথম নির্বাচিত মেয়র হন। ১৯৯৯ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় মামলা মোকদ্দমার সুযোগে নির্বাচন নিয়ে যাওয়া হয় দুই বছর পর। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালে মেয়াদ শেষ হলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও হাইকোর্টের মামলায় আটকে যায় নির্বাচন। এই নির্বাচন অবশ্য বর্জন করেছিল আজকের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) ২০০৯ সালের আইন সংশোধন করে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশন করা হয়। আর এই আইনের নির্ধারিত বিধান মতে পদ হারান মেয়র খোকাসহ অন্যান্য কাউন্সিলর। এই আইনের বিধান অনুযায়ী প্রশাসক নিযুক্ত হন প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত পদস্থ কর্মকর্তারা। আইনে প্রশাসকের মেয়াদ প্রথমে ৯০ দিন পরে আইন আবার সংশোধন করে ১৮০ দিন করা হয়। এভাবেই গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে প্রশাসক অদল-বদল করে চলছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ২০১২ সালের ২৪ মে দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও আদালতের নির্দেশে আটকে যায় নির্বাচন। ২০১৩ সালের ১৩ মে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলেও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কথা বলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে অপারগতা প্রকাশ করে। ইসি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চিঠিও দেয়।
গত বছরের ১৩ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঢাকার ডিসিকে প্রধান সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) সহকারী সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা নিয়োগ করে।
পুনর্বিন্যস্ত সীমানায় ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীর চর থানার মহল্লা ঝাউচর, ঝাউলহাটী, নয়াগাঁও, হাসাননগর, মুন্সহাটী, মুন্সীহাটী নদীর পাড়, মুনসুরবাগ, সিরাজনগর, নবীনগর, ট্যাকের হাট ও আমীনবাগ। এখানে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ১৮৭ জন।
৫৬ হাজার ৫৩২ জন ভোটার নিয়ে পুনর্গঠিত ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্থান পেয়েছে কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুর, পূর্ব রসুলপুর, দক্ষিণ রসুলপুর, বড়গ্রাম, বড়গ্রাম পশ্চিম, ইসলামনগর, আলী নগর, হুজুরপাড়া, পশ্চিম আশ্রাফাবাদ এবং ৪০ হাজার ৫২৭ জন ভোটার নিয়ে পুনর্গঠিত ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে স্থান পাওয়া মহল্লা হচ্ছে কামরাঙ্গীরচর থানার আহছানবাগ, মমিনবাগ, আশ্রফাবাদ, দুখুরিয়া, জঙ্গলবাড়ী, কুমিল্লাপাড়া, রহমতবাগ, বাগচান খা পশ্চিম, বাগচান খা পূর্ব (১ম অংশ), এটিএমবুথ গলি, ভাষা আন্দোলন স্কুল, রফিকুল ইসলাম রোড, মনির চেয়ারম্যান গলির দক্ষিণাংশ, বাগচান খা (পূর্ব) (দ্বিতীয় অংশ) এটিএম বুথ গলি, ভাষা আন্দোলন স্কুল-রফিকুল ইসলাম রোড -মনির চেয়ারম্যানের উত্তরাংশ, হাসলাই ও মুসলিমবাগ।