
পাবনা চিনিকলের তরল বর্জ্যের প্রচণ্ড চাপে লেগুনের বাঁধ ভেঙ্গে ঈশ্বরদীর ভাড়ইমারীর কৃষকদের শত শত বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। বিষাক্ত তরল বর্জ্য বিরাট এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ দূষণ হয়েছে। জমির ফসল, সবিজ ও মাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা গত শনিবার ভাড়ইমারী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। কৃষকরা এসময় সড়কে যানবাহন ও ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের দাশুড়িয়ায় পাবনা চিনিকলের আখের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। মিলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) রেজাউল করিম ঘটনাস্থলে গেলে লাঞ্ছিত হন। পরে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। পাবনা চিনিকলের বর্জ্য অপসারণের জন্য দাশুড়িয়ার ভাড়ইমারী চুরিয়ালার ঘাট এলাকায় মৃত পদ্মা নদীর শাখায় বাঁধ দিয়ে লেগুন তৈরি করা হয়েছে। মিলের তরল বর্জ্য এখানে জমা হয়। কৃষকরা জানান, শুক্রবার রাত ২টার দিকে হঠাত্ করে লেগুনের বাঁধের উত্তর দিকে ২০ ফুট মাটি ধসে জমে থাকা বর্জ্য ফসলের মাঠে ঢুকে পড়ে। পুকুরের মাছ পাহারা দেয়ার সময় নওদাপাড়া গ্রামের চাষি ইয়ার আলী পানির শব্দ পেয়ে বাঁধের কাছে ছুটে আসেন। ইয়ার আলী জানান, বর্জ্যের চাপে বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তিনি রাতেই কৃষকদের মোবাইলে খবর দেন। কৃষকরা একজোট হয়ে রাত ৩ টার দিকে পাবনা চিনিকলে বিষয়টি জানাতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের বের করে দেয়। সকালে শত শত কৃষক বাঁধের সামনে ভিড় জমায়। বর্জ্যে ফসল, সবিজ ও মাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। দাশুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম কেনেডি জানান, মৃত এই শাখা নদীর পাড়ে বিভিন্ন গ্রামে শত শত কৃষক দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করছেন। অধিকাংশই প্রান্তিক কৃষক। পাবনা চিনিকল কর্তৃপক্ষ পানি অপসারণের কোন ব্যবস্থা না রেখে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভাড়ইমারী চুরিয়ালার ঘাটের দক্ষিণে জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে লেগুন তৈরি করে। এই লেগুনে মিলের বিষাক্ত তরল বর্জ্য এসে জমা হয়। বর্জ্য মিশ্রিত পানির কারণে এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং ফসলের জমি নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় কৃষকরা দীর্ঘদিন থেকে লেগুনটি অপসারণের জন্য দাবি জানাচ্ছে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, লেগুনের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় বাঁধের উত্তর পাশের জমিতে আখ, গম, মশুর, পেঁয়াজ, সরিষা, ফুলকপি প্রভৃতি ফসল ও সবিজ মাঠ এবং অনেকগুলো পুকুর তলিয়ে গেছে ।
পাবনা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমল কান্তি সরকার জানান, তারা খোঁজ-খবর নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহযোগিতার কথা ভাবছেন। ঘটনা তদন্তে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করার জন্য ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।